শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আবির্ভাব স্মরণ মহোৎসব হলি আর দোল যাত্রায় মেতেছিল ভক্তঅনুরাগী
- প্রকাশিত সময় ১২:৫৬:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
- / 115
পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার হিমাইতপুর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমে ঠাকুরের ১৩২ তম আবির্ভাব-বর্ষ-স্মরণ মহোৎসবের দ্বিতীয়দিনে ভক্ত অনুরাগীরা দোল পূর্ণিমায় হলি খেলা ও দোল যাত্রায় মেতেছিল। ঠাকুরকে স্মরণ আর দোল পূর্ণিমায় আনন্দ ভাগাভাগি করে মহাৎসবকে আরও প্রাণবন্ত ও আনন্দদায়ক করে তুলে ভক্তরা।
মহোৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবারে সকালে জাতীয় ও সৎসঙ্গ পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে এবং সমবেত প্রার্থণা দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। আশ্রম প্রাঙ্গনের মিলনমেলায় নারী পুরুষ, শিশু কিশোরসহ নানা বয়সীরা হলি খেলায় মাতোয়ারা হয়ে পড়ে। একে অপরকে আবির দিয়ে হৃদতার বর্হিপ্রকাশ করেন আশ্রমের এ মহোৎসবে আসার ভক্তরা।
বেলা ১১ টায় বের করা হয় দোলযাত্রার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি আশ্রম থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিলনমেলায় গিয়ে সমাপ্তি হয়। এদিকে দিবসের সূচনা লগ্ন থেকে নানা নিয়ম ও আচার মেনে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষে উদ্বোধন করা হয় মাতৃ মন্দির। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই মন্দির উদ্বোধন করেন ভারত থেকে আগত সহপ্রতিঋত্বিক তপন চক্রবর্তী। এই মাতৃমন্দিরটি চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন শংকর সেনগুপ্ত’র অর্থায়নে এবং তার ডিজাইনে নির্মাণ করা হয়েছে।
শংকর সেনগুপ্ত বলেন, আমার বহুদিনের ইচ্ছে আজ পূর্ণ হলো। তিনি বলেন, আমার দ্বিতীয় ইচ্ছেও আজ শুরু করে দিলাম। তিনি আশ্রমের আনন্দ বাজারের ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। তার দাবী, প্রথম তলায় আনন্দ বাজার স্থাপন করা হবে। দ্বিতীয় তলা থেকে এখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঠাকুরের ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। তার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েই এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হবে।
দুপুর থেকে শুরু হয় ধর্মীয় আলোচনা সভা, যুব সম্মেলন, ভক্তিগীতি, কুইজ প্রতিযোগিতা, সান্ধ্য প্রার্থণাসহ নানা অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় আলোচনা সভার। শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গর সভাপতি ড. শ্রী রবীন্দ্রনাথ সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী চন্দন কুমার চক্রবর্ত্তী। আলোচক ছিলেন ভারত থেকে আগত অতিথি অধ্যাপক অমলেন্দ্র চট্টপাধ্যায়, রঞ্জন সাহা, পিনাকী মৈত্র, মাইকেল ঘোষ ও চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন শংকর সেনগুপ্ত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু। মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়াটাই পুলিশের একমাত্র দায়িত্ব। আপনাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে পাবনা জেলা পুলিশ দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। আপনারা নির্বিঘ্নে আপনাদের ধর্মীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যান। পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা আপনাদের পাশে আছে। শুধু এই অনুষ্ঠানেই নয়, আগামিতেও আপনাদের জন্য পুলিশের সেবা অব্যাহত থাকবে।
উদ্বোধনের আগের দিন থেকেই ঠাকুরের ভক্ত অনুসারীদের আগমন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অব্যাহত রয়েছে। পুরো আশ্রম এলাকা ঠাকুর ভক্তদের পদচারণায় মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছরের চেয়েও এবার বেশী মানুষের সমাগম হয়েছে। যা নজর কেড়েছে।
সৎসঙ্গ আশ্রমের বলাই কৃষ্ণ সাহা বলেন, ঠাকুরকে যারা ভালোবাসেন, তারা ঠাকুরের এই মহোৎসবে আসবেন এটাই বিশ্বাস। ভক্ত অনুসারীদের আগমন বলে দিচ্ছে, ঠাকুর তাদের মধ্যেই বিরাজমান। বলাই বলেন, তিনদিনের এই উৎসব হয়েছে মিলন মেলা। আর এই মিলন মেলা শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছে। এ জন্য আশ্রম সংলগ্ন গ্রামবাসী, স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আইন শৃংখলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়েছে। আশা করছি যারা এই মিলন মেলায় এসেছেন, তারা নিরাপদে শান্তিপূর্ণ ভাবেই নিজ গৃহে ফিরে যাবেন এমন প্রত্যাশার কথা জানালেন তিনি।