বয়ারচর হরনী প্রশাসনিক কার্যালয়ে ঝুলছে তালা এবং নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত জনসাধারণ
- প্রকাশিত সময় ০৫:৫৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ মার্চ ২০২০
- / 121
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ হাতিয়া উপজেলার প্রস্তাবিত হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর প্রশাসনিক কার্যালয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তালা লাগিয়ে দেওয়ায় গত ৩ সপ্তাহ ধরে সেবা কার্যক্রম ও গ্রাম আদালত বন্ধ। সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। তাছাড়া প্রশাসককে অপসারনের দাবীতে ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা বয়ারচর প্রশাসনিক এলাকা (প্রস্তাবিত ০১নং হরণী ইউনিয়ন) পরিষদ কার্যালয়ে। এদিকে বয়ারচর প্রশাসনিক এলাকার প্রশাসক মুশফিকুর রহমান মোর্শেদ বিয়ষটি জানতে পেরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর অবহতিকরণ একটি দরখাস্ত প্রেরণ করেন।
উল্লেখ্য, প্রশাসক মুশফিকুর রহমান মোর্শেদ আগেও তার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ সমূহ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখিত বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী জেলা শাখা বরাবর দরখাস্ত প্রেরণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অযাচিত হুমকী ও হস্তক্ষেপের কারণে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মুশফিকুর রহমান মোর্শেদ। এতে করে পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহতসহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন রকম উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড। সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার স্থানীয় সাধারণ জনগণ।
বিয়ষটি অবগত করে প্রশাসক মুশফিকুর রহমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় বরাবর অবহতিকরণ দরখাস্ত করেন।
পরিষদ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের স্বারক নং স্থাসবি/ইপ/ইউপি-০১/২০০৫/১১২, তারিখ-৭/৩/২০১৩ ও মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং ৫৭৩৪/২০১৩ এর আদেশ মোতাবেক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে স্থানীয়রা জানায়, গত ১২ই জানুয়ারী ২০২০ হতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার দায়িত্ব পালনে অযাচিত ভাবে বাধাগ্রস্ত করে তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিষদ পরিচালনা করতে বললে তিনি তা অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার দায়িত্বভার হস্তান্তর করার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকী-ধমকী দিচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে তিনি পরিষদে যেতে পারছেন না।
তারা আরো জানায়, পরিষদের ৩ জন সদস্য ফারুক উদ্দিন(৫৭), বীণা রাণী দাস(৫৫) ও নাদেরুজ্জামান থেকে বে-আইনী ভাবে কিছু সন্ত্রাসী জোরপূর্বকভাবে কয়েকটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর লিখে নেয়। যা সম্পূর্ণ দেশের প্রচলিত আইন বর্হিঃভূত। যখন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য নানামূখী উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে একটি স্বার্থন্বেষী মহল ঠিক সে মুহূর্তে তার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন ভাবে হুমকী-ধমকী দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পায়তারা করছে।
তারা আরো বলেন, বিয়ষটি আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নোয়াখালী জেলার সংশ্লিষ্ঠ উদ্ধধর্তন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিয়ষয়ে প্রশাসক মুশফিকুর রহমান মোর্শেদ জানান, আমি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বেআইনি ও অন্যায়মূলক কথা রাখতে পারি নাই বলে তাদের রোষানলের কারণে জেলা হেড কোয়াটারে অবস্থান করছি। এমতবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম হরণী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিম উদ্দিন, আবু সাঈদ ও স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ডাকাত ইব্রাহিম কমান্ডারসহ আরো ১০/১৫ জন মিলে বেআইনীভাবে ইউপি পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে। যাতে পরিষদের ৪ জন সদস্যের কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক সন্ত্রাসীরা সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর লিখে নিয়েছে। পরিষদে তালা ঝুলানোর বিয়ষটি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এ ঘটনায় আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এই ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। গত ৩ সপ্তাহ ধরে সেবা কার্যক্রম ও গ্রাম আদালত বন্ধ থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এ বিষয়ে আগামীকাল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, হাতিয়া উপজেলা বয়ারচর প্রশাসনিক এলাকা (প্রস্তাবিত ০১নং হরণী ইউনিয়ন) পরিষদের প্রশাসকের বিরুদ্ধে তার কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।