টাঙ্গাইলে সরকারি আদেশ অমান্য করে চলছে প্রাইভেট কোচিংসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- প্রকাশিত সময় ০৭:০৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মার্চ ২০২০
- / 204
কামরান পারভেজ ইভান, টাঙ্গাইলঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনা মতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ঘোষণার পর থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবে এ নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে প্রাইভেট টিউশনি ও কিছু কিন্ডারগার্টেন গুলো আজ ১৮ মার্চ (বুধবার) সকাল থেকে ক্লাস কার্যক্রম চালু রেখেছে।
গত ১৬ মার্চ (সোমবার) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘোষণার পরদিন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মানুষকে কিছুটা সচেতন থাকতে দেখা যায়। যার ফলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী খুব ছোট পরিসরে পালন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারী, বেসরকারী, রাজনৈতিকসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশনা মেনে দিনটি উদযাপন করে। যদিও নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার ভূঞাপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকরা মিলে র্যালি করে।
এদিকে ঘোষণার ২য় দিন বুধবার সকাল থেকে দেখা গেছে উপজেলায় স্বাভাবিক ভাবেই চালু রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। পৌর এলাকার প্রাইভেট টিউশনি ও কিছু কিন্ডারগার্টেন তাদের নির্ধারিত ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রতিদিনের মত সকাল ৬টা থেকেই শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত হাজির হয়েছে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
প্রাথমিক, নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা অনেকেই এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এতটা সচেতন নয়। তারা আরো জানায় তাদের শিক্ষক বা অভিভাবকরা তাদেরকে অভয় দিয়ে জানিয়েছেন এই রোগ বয়স্কদের জন্য। তরুণদের জন্য নয়। আর এটি আমাদের দেশের মত গ্রীষ্ম বা গরম আবহাওয়াতে ছড়ায় না।
এবিষয়ে নার্সারী শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বপ্না খাতুন বলেন, সকালে স্কুলে গেলে আমাদেরকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ বলে জানিয়ে দেয়। এরকম বিনা নোটিশে হঠাৎ তারা কিভাবে স্কুল বন্ধ করতে পারে বুঝলাম না। এইসব ভাইরাস আমাদের মফস্বল এলাকায় তো আসেনি। এভাবে যে কোন অযুহাতে স্কুল বন্ধ করলে বাচ্চার লেখাপড়া নিয়ে বেশ সঙ্কায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাইভেট শিক্ষক জানান, করোনা ভাইরাসের ভয় ও আতংক আমাদের মাঝেও রয়েছে। তাই বলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ করলে ওদের ভবিষ্যত হুমকিস্বরুপ। যেখানে সকল স্কুল, কোচিং বন্ধ, সেখানে আমরাও বন্ধ রাখলে ওরা তো পড়াশোনা বাদই দিবে। তিনি আরো বলেন, আমি না হয় বন্ধ করলাম, কিন্তু যারা এখনও বা সামনের দিনগুলোতে পড়া চালু রাখবে সেক্ষেত্রে প্রশাসন কি পারবে তাদের সবাইকে বন্ধ করতে? আমাদের মত প্রাইভেট শিক্ষকদের আয়ের একমাত্র অবম্বন এই প্রাইভেট। এটি বন্ধ হলে আমাদের বেঁচে থাকাও কষ্টসাধ্য।
এ প্রসঙ্গে আরো কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, এসব ভাইরাস আল্লাহর গজব। এসব আমাদের হবে না। এগুলো বিধর্মীদের জন্য। আর আমরা কেন এসব পড়োয়া করে আমাদের বাচ্চার লেখাপড়া বন্ধ করব।
এদিকে ইবরাহীম খাঁ সরকারী কলেজের ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকজন ছাত্র এখনও সেখানে অবস্থান করছে। তাদের প্রাইভেট পড়াতে হবে বিধায় তারা এখনও বাড়ি যায়নি বলে জানায়।
কলেজের ছাত্রবাস সম্পর্কে অধ্যক্ষ বেনজীর আহম্মেদ বলেন, আমরা এখনও ছাত্রদের হল ছাড়তে হবে এমন নির্দেশনার চিঠি হাতে পাইনি। চিঠি হাতে পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাসরিন পারভীন বলেন, আমি শিক্ষা অফিসারকে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার সকল স্কুল, কোচিং, মাদরাসা, প্রাইভেট বন্ধ রাখার জন্য জানিয়েছি। শিক্ষা অফিসার সকলকে এই নির্দেশনা জানিয়েছেন। তবে যদি কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে তবে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহিনুর ইসলাম বলেন, আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তারপরও যদি কোন প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা উপেক্ষা করে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২ সপ্তাহে সারাদেশে সর্বমোট ১০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে। ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৮ হাজার। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ৭,৯৬৫ জনের হাজার মৃত্যু হয়েছে এবং ৮১,৮৮১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে অন্তত ১৬৫ দেশ ও অঞ্চলের প্রায় প্রায় ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
সংক্রমণ রোধে গত ১৬ মার্চ সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করে। এই নির্দেশনা উপজেলার পৌর শহরে কিছুটা মানলেও শহরের বাহিরে সহ, গোবিন্দাসী, নিকরাইল, মাটিকাটা, অলোয়া, ফলদা, গাবসার ও অর্জুনা ইউনিয়নগুলোকে মানতে দেখা যায়নি। তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।