ঢাকা ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

করোনাঃ স্মরণকালের ভয়াবহ দূর্যোগে অবরুদ্ধ গোটাবিশ্ব

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৫:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০
  • / 182

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তবানে চীনের পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। করোনা স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সৃস্টি করেছে এক দূর্বিসহ অস্থিরতা। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কার্যত অবরুদ্ধ আজ গোটা বিশ্ব।

করোনা ভাইরাস হল একই শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস যারা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি জাতীয় প্রাণীকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে আবার তীব্রও হতে পারে। অনেক সময় যা সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের মতো মনে হয়। এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনো ভাইরাস। কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯।

অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়ারিয়া বা পাতলা পায়খানার সৃষ্টি করে।

মানবদেহে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখনো বাজারে আসেনি বা আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

নিদু ভাইরাস পরিবারের করোনা ভাইরদার উপ পরিবার হলো করোনা ভাইরিনা। আলফা করোনা ভাইরাস, বেটা করোনা ভাইরাস, ডেল্টা করোনা ভাইরাস, গামা করোনা ভাইরাসের আদর্শ প্রজাতি করোনা ভাইরাস। ২০১৯ সালের করোনা ভাইরাস ঘটিত ব্যাধিকে বলা হচ্ছে কোভিড-১৯।

এই ভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের এবং অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য। এদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেসপেয়ার এর মধ্যে হয়ে থাকে। এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ।

করোনা ভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারন দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির ক্লাব-আকৃতির প্রোটিন স্পাইকের কারণে একে দেখতে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মতো মনে হয়।

ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এরা প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রুপ প্রকাশ করে। ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করেছিল।

করোনা ভাইরাস প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৯৬০-এর দশকে। প্রথমদিকে এটি মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনা ভাইরাস ২২৯ ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনা ভাইরাস ওসি ৪৩ নামে এদের নামকরণ করা হয়।

এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ এসএআরএস-সিওভি ২০০৪ সালে, এইচসিওভি এনএল ৬৩, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে ‘নোভেল করোনা ভাইরাস’।

এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসতন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়। জ্বর অবসাদ শুষ্ক কাশি বমি হওয়া শ্বাস কষ্ট গলা ব্যাথা এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এবং পরবর্তীতে ভাইটাল অরগান যেমন কিডনি ফুসফুস লিভার হার্ট বিকল হয়ে মৃত্যু হয়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এ সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকে না।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির সাথে শতকরা ৭০ ভাগ জিনগত মিল পাওয়া যায়। অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধীতা করেন তীব্রভাবে।

করোনা ভাইরাস নামটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”। হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।

করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সাথে আক্রমণের শিকার হতে যাওয়া কোষের হোস্ট কোষের গ্রাহকপ্রান্তের মিথস্ক্রিয়াই টিস্যু ট্রপিজম, সংক্রাম্যতা এবং প্রজাতির ব্যাপ্তি ইত্যাদির ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। যেমন সার্স করোনা ভাইরাস অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরিত এনজাইম ২ অর্থাৎ এসিই ২ মানবকোষে সংযুক্তির মাধ্যমে সংক্রামণ ঘটায়। করোনা ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম অর্থোকরোনাভিরিনি বা করোনাভিরিন্যা করোনা ভাইরাস করোনাভিরিডি পরিবারের সদস্য যেটা আগেই বলা হয়েছে।

কেবল করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেই ভাইরাসটি ছড়ায় না করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে করনে করোনা আক্রান্ত মৃতব্যক্তিটি যে ধর্মের হোক না কেন ওই ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়া যাবে না। নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা ছাড়া স্পর্শও করা যাবে না। কোভিট-১৯ রোগে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির দাফন বা সৎকার সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় এমন কথায় বলা হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধে সরকারি নির্দেশনাটি তৈরী করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুযায়ী।

পঞ্জাবে নওয়াশহরে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এই নিয়ে সে দেশে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হল। ওই বৃদ্ধ যিনি জার্মানি ও ইটালি সফর করেছিলেন বলে জানা গেছে। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডুতে নতুন করে কয়েক জন সংক্রামিত হয়েছেন। গোটা দেশের নিরিখে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। চন্ডীগড়েও প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বিদেশফেরত ব্যক্তির আক্রান্ত হবার বিষয়টি আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা বয়ে আনবে সেটাই স্বাভাবিক। করোনা রুখতে জমায়েতে রশি টানতে চাইছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন। তাই উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানসহ বিভিন্ন রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাশ্মীরে ট্রেন পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। বন্ধ করা হয়েছে তিরুপতি মন্দিরও।

আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ঝাপ দিয়ে করোনা আতঙ্কে দিল্লিতে আত্মহত্যা​ করেছে একজন। ভরতে চলছে জনতা কার্ফিও। রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের ৮০ জেলা নকআউট ঘোষণা করেছে সরকার।

চীনের পর করোনা-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল ইতালিতে। সেখানে এক দিনেই সর্বোচ্চ ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে আটকে পড়া প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।

রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গত রোববার জানিয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনে ভারতের রাজধানী দিল্লী লকডাউন করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদি।

আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ১০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্যও।

উহানে অবশ্য এই প্রথম নতুন করে কোনও সংক্রমণের খবর নেই বলেই জানিয়েছে চিনা সরকার। তবে বেজিংয়ে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মালয়েশিয়াতেও। ইতিমধ্যেই দু’সপ্তাহের জন্য ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে পাক সরকার। এই রোগে মৃত্যু ঘটেছে মেক্সিকো ও রাশিয়াতেও। তবে চীনের বাইরে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৭, আইসোলেশনে রয়েছে ৪০ জন, মৃতের সংখ্যা ৪ জন এবং ৫ জন বাড়ী ফিরেছেন সুস্থ্য হয়ে। দেশের বাইরে ৩ বাংলাদেশী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২জন ও ইতালির মিলানে একজন।

এ পর্যন্ত ১৯২ টিরও বেশি দেশের লোক প্রানঘাতি এই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৩৪ জন মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৯৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসায় রয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৪৩১ জন, সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১লাখ ৯ হাজার ৭০৩ জন। চিকিৎসাধীন ১০ হাজার ১৫৪ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

অস্ট্রেলিয়ায় করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিতে যাওয়ায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রি স্কট মরিসন মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে শাটডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৫ জন।

বর্তমানে স্পেনের পরিস্থিতিও ভয়াবহ হচ্ছে। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েয়েছে ৩ হাজার ৭০৩ জন।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্যান্সিসকো উপকূলে একটি প্রমোদতরীতে ২১ জনের দেহে করোনার অস্তিত্ব হতাশাজনক। এর আগে জাপানের প্রমোদতরীতে করোনা সংক্রমনের অভিজ্ঞতার পর এ ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে সান ফ্রাসিন্সকো কর্তৃপক্ষ ওই জাহাজকে উপকুলে নোঙর করতে দেয়নি। সান ফ্রান্সিসকো উপকুলের কাছে নজরদারিতে রাখা প্রমোদতরী গ্র্যান্ড প্রিন্সেসকে অনির্ধারিত এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয় না এমন কোন বন্দরে নিয়ে গিয়ে যাত্রী এবং ক্রুদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পরীক্ষা করবে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবক’টি অঙ্গরাজ্যে এরই মধ্যে ভাইরাসটি ছড়য়ে পড়েছে। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর এন্ডো কুমোর রোববার রাত থেকেই লকডাউন করেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারি অফিস ও বাসভবন হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের এক কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

ইরানের পার্লামেন্টের নারী সদস্য ফাতেমি রাহবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৫৫বছর বয়সী ফাতেমি রাজধানি তেহরানের একটি হাসপাতালে ২দিন কোমায় থাকার পর মারা যান। ফাতেমিসহ ইরানে এ নিয়ে দুজন সাংসদ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এভারেস্ট বিজয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এভারেস্ট জয়ী এ নারী বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অর্থাৎ সেভেন সামিট জয় করেছেন।

বেলজিয়াম ফুটবলার ফেলাইনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। জার্মান চ্যাে লর অ্যাঞ্জেলা মারকেল কোয়ারেন্টাইনে আছেন। উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা লন্ডন থেকে এবং সুপারস্টার বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমি স্টিফেন স্পিলবার্গের একটি ছবিতে শুটিং শেষে বুদাপেস্ট থেকে ভারতে ফিরে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টইনে রয়েছেন সচেতনভাবে।

ক্রিকেটে বিশ্ব অল রাউন্ডার বংলাদেশী খেলোওয়ার শাকিব আল হাসান ও অভিনেত্রী শাওন রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে।

করোনার সংক্রমণের জন্য ওষুধ ও খাবারের দোকান ছাড়া সকল ভোগ্যপণ্যর দোকান বন্ধ হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইউরোপ অমেরিকার বেশিরভাগ পোষাকের দোকান। বিশ্ববাজারে বিক্রি না হওয়ায় এসব দেশ তৈরী পোষাক না পাঠনোর জন্য রপ্তানিকারকদের জানিয়েছে। আবার অনেকে কিছু পণ্যের ক্রয় আদেশ বাতিল করে দিয়েছে। দেশের গার্মেন্টেস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৬৯ টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার মূলের ক্রয় আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

খানিকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় করোনা জন্য সার্বিকভাবে রপ্তানি বন্ধ এবং এ শিল্পকে মারাত্মক হুমকির সন্মুখীন হতে হবে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ইতিমধ্যে গোটা বিশ্বকে কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। যে সকল স্থানে মানুষের ভীড়ে মুখরিত থাকতো এখন সেখানে ভূতুরে অবস্থা বিরাজ করছে। গণজমায়েতের ওপর বিধি নিষেধ আরোপের জন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে এই ভাইরাস বিশ্বকে চড়ম অর্থনৈতিক মন্দায় ফেলবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এহেন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে দেশে যে প্রস্তুতি রয়েছে তা যথেস্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন। নজিরবিহীন এই দুর্যোগ সাধারন কোন কৌশলে নিরসন হবে না। এজন্য বিশ্ব নেতাদের এক জোট হয়ে কাজ করার আহবান জানান গুতেরেস।

করোনা বিশ্ব অর্থনীতিতে এক আতঙ্কের নাম। এর ধংসলীলা ও তান্ডপ তছনছ করে দিয়েছে শিল্প ও ব্যাবসা বাণিজ্যে। চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোসহ শক্তিধর অর্থনৈতিক দেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে রীতিমতো।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা রয়েছে এ কথা ঠিক তাই বলে লকডাউন এর মতো অবস্থা নিয়ে করোনার প্রভাব ও বিস্তাররোধের সক্ষমতা নেই। যে কারনে আক্রান্ত বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। অপরদিকে এমন বিপর্যয় মোকাবেলায় ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে লকডাউন ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনা সংক্রমনের মহামারী ঠেকাতে এখন সর্বত্র যে লড়াই চলছে তার পরিনতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটায় ভাববার বিষয়। আক্রান্ত এবং মৃত্যু রুখতে বিশ্ব এখন প্রানান্তকর যুদ্ধের মুখোমুখি। ইতালিতে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ রয়েছে হাসপাতালে এবং হোম কোয়ারাইনন্টিনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, পরিবহনসেবা, বিনেদন কেন্দ্র, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান রয়েছে বন্ধ।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারি চাকুরিজীবীদের সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ঝাং জুন করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে ভয়াবহ আকার ধারন করায় নিরাপত্তা পরিষদের সকল বৈঠক বাতিল করেছেন। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ফ্রান্স। সে দেশের নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের হলে জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। ম্যাঁক্রো বলেছেন আমরা এখন যুদ্ধের ময়দানে রয়েছি। ইউরোপের অনেক দেশ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

বেনাপোলসহ দেশের ১১ টি স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ।

ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সাথে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি।

২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও ফার্মেসি ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংদেশের সকল দোকান মালিক সমিতি। করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিশ্বকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এর থেকে বের হয়ে আসার একটি উপায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।


আতিক সিদ্দিকী
সাংবাদিক ও কলাম লেখক

করোনাঃ স্মরণকালের ভয়াবহ দূর্যোগে অবরুদ্ধ গোটাবিশ্ব

প্রকাশিত সময় ০৫:১৪:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। বর্তবানে চীনের পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল। করোনা স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সৃস্টি করেছে এক দূর্বিসহ অস্থিরতা। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কার্যত অবরুদ্ধ আজ গোটা বিশ্ব।

করোনা ভাইরাস হল একই শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস যারা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি জাতীয় প্রাণীকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে আবার তীব্রও হতে পারে। অনেক সময় যা সাধারণ ঠান্ডা জ্বরের মতো মনে হয়। এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনো ভাইরাস। কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯।

অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়ারিয়া বা পাতলা পায়খানার সৃষ্টি করে।

মানবদেহে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এখনো বাজারে আসেনি বা আজও আবিষ্কৃত হয়নি।

নিদু ভাইরাস পরিবারের করোনা ভাইরদার উপ পরিবার হলো করোনা ভাইরিনা। আলফা করোনা ভাইরাস, বেটা করোনা ভাইরাস, ডেল্টা করোনা ভাইরাস, গামা করোনা ভাইরাসের আদর্শ প্রজাতি করোনা ভাইরাস। ২০১৯ সালের করোনা ভাইরাস ঘটিত ব্যাধিকে বলা হচ্ছে কোভিড-১৯।

এই ভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের এবং অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য। এদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেসপেয়ার এর মধ্যে হয়ে থাকে। এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ।

করোনা ভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারন দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির ক্লাব-আকৃতির প্রোটিন স্পাইকের কারণে একে দেখতে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মতো মনে হয়।

ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এরা প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রুপ প্রকাশ করে। ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করেছিল।

করোনা ভাইরাস প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৯৬০-এর দশকে। প্রথমদিকে এটি মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনা ভাইরাস ২২৯ ই’ এবং ‘মনুষ্য করোনা ভাইরাস ওসি ৪৩ নামে এদের নামকরণ করা হয়।

এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ এসএআরএস-সিওভি ২০০৪ সালে, এইচসিওভি এনএল ৬৩, ২০০৫ সালে ‘এইচকেইউ১’, ২০১২ সালে ‘এমইআরএস-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সাল চীনে ‘নোভেল করোনা ভাইরাস’।

এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসতন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয়। জ্বর অবসাদ শুষ্ক কাশি বমি হওয়া শ্বাস কষ্ট গলা ব্যাথা এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এবং পরবর্তীতে ভাইটাল অরগান যেমন কিডনি ফুসফুস লিভার হার্ট বিকল হয়ে মৃত্যু হয়। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এ সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকে না।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘২০১৯-এনসিওভি’ নামকরণ করে। উহানে দেখা দেওয়া ভাইরাস প্রজাতিটি ‘এসএআরএস-সিওভি’ প্রজাতির সাথে শতকরা ৭০ ভাগ জিনগত মিল পাওয়া যায়। অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধীতা করেন তীব্রভাবে।

করোনা ভাইরাস নামটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ “মুকুট” বা “হার”। করোনা শব্দটি নিজে গ্রিক থেকে এসেছে যার অর্থ “মালা” বা “হার”। হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে।

করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সাথে আক্রমণের শিকার হতে যাওয়া কোষের হোস্ট কোষের গ্রাহকপ্রান্তের মিথস্ক্রিয়াই টিস্যু ট্রপিজম, সংক্রাম্যতা এবং প্রজাতির ব্যাপ্তি ইত্যাদির ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়। যেমন সার্স করোনা ভাইরাস অ্যাঞ্জিওটেনসিন-রূপান্তরিত এনজাইম ২ অর্থাৎ এসিই ২ মানবকোষে সংযুক্তির মাধ্যমে সংক্রামণ ঘটায়। করোনা ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম অর্থোকরোনাভিরিনি বা করোনাভিরিন্যা করোনা ভাইরাস করোনাভিরিডি পরিবারের সদস্য যেটা আগেই বলা হয়েছে।

কেবল করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেই ভাইরাসটি ছড়ায় না করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যে করনে করোনা আক্রান্ত মৃতব্যক্তিটি যে ধর্মের হোক না কেন ওই ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়া যাবে না। নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা ছাড়া স্পর্শও করা যাবে না। কোভিট-১৯ রোগে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির দাফন বা সৎকার সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনায় এমন কথায় বলা হয়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া রোধে সরকারি নির্দেশনাটি তৈরী করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুযায়ী।

পঞ্জাবে নওয়াশহরে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এই নিয়ে সে দেশে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হল। ওই বৃদ্ধ যিনি জার্মানি ও ইটালি সফর করেছিলেন বলে জানা গেছে। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডুতে নতুন করে কয়েক জন সংক্রামিত হয়েছেন। গোটা দেশের নিরিখে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। চন্ডীগড়েও প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং বিদেশফেরত ব্যক্তির আক্রান্ত হবার বিষয়টি আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা বয়ে আনবে সেটাই স্বাভাবিক। করোনা রুখতে জমায়েতে রশি টানতে চাইছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসন। তাই উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানসহ বিভিন্ন রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কাশ্মীরে ট্রেন পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। বন্ধ করা হয়েছে তিরুপতি মন্দিরও।

আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ঝাপ দিয়ে করোনা আতঙ্কে দিল্লিতে আত্মহত্যা​ করেছে একজন। ভরতে চলছে জনতা কার্ফিও। রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের ৮০ জেলা নকআউট ঘোষণা করেছে সরকার।

চীনের পর করোনা-পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল ইতালিতে। সেখানে এক দিনেই সর্বোচ্চ ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে আটকে পড়া প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।

রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গত রোববার জানিয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনে ভারতের রাজধানী দিল্লী লকডাউন করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদি।

আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ১০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের এক সদস্যও।

উহানে অবশ্য এই প্রথম নতুন করে কোনও সংক্রমণের খবর নেই বলেই জানিয়েছে চিনা সরকার। তবে বেজিংয়ে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মালয়েশিয়াতেও। ইতিমধ্যেই দু’সপ্তাহের জন্য ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে পাক সরকার। এই রোগে মৃত্যু ঘটেছে মেক্সিকো ও রাশিয়াতেও। তবে চীনের বাইরে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৭, আইসোলেশনে রয়েছে ৪০ জন, মৃতের সংখ্যা ৪ জন এবং ৫ জন বাড়ী ফিরেছেন সুস্থ্য হয়ে। দেশের বাইরে ৩ বাংলাদেশী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২জন ও ইতালির মিলানে একজন।

এ পর্যন্ত ১৯২ টিরও বেশি দেশের লোক প্রানঘাতি এই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৩৪ জন মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৯৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসায় রয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৪৩১ জন, সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১লাখ ৯ হাজার ৭০৩ জন। চিকিৎসাধীন ১০ হাজার ১৫৪ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

অস্ট্রেলিয়ায় করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিতে যাওয়ায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রি স্কট মরিসন মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে শাটডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৫ জন।

বর্তমানে স্পেনের পরিস্থিতিও ভয়াবহ হচ্ছে। দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েয়েছে ৩ হাজার ৭০৩ জন।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্যান্সিসকো উপকূলে একটি প্রমোদতরীতে ২১ জনের দেহে করোনার অস্তিত্ব হতাশাজনক। এর আগে জাপানের প্রমোদতরীতে করোনা সংক্রমনের অভিজ্ঞতার পর এ ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তবে সান ফ্রাসিন্সকো কর্তৃপক্ষ ওই জাহাজকে উপকুলে নোঙর করতে দেয়নি। সান ফ্রান্সিসকো উপকুলের কাছে নজরদারিতে রাখা প্রমোদতরী গ্র্যান্ড প্রিন্সেসকে অনির্ধারিত এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয় না এমন কোন বন্দরে নিয়ে গিয়ে যাত্রী এবং ক্রুদের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি পরীক্ষা করবে বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবক’টি অঙ্গরাজ্যে এরই মধ্যে ভাইরাসটি ছড়য়ে পড়েছে। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর এন্ডো কুমোর রোববার রাত থেকেই লকডাউন করেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারি অফিস ও বাসভবন হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের এক কর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

ইরানের পার্লামেন্টের নারী সদস্য ফাতেমি রাহবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৫৫বছর বয়সী ফাতেমি রাজধানি তেহরানের একটি হাসপাতালে ২দিন কোমায় থাকার পর মারা যান। ফাতেমিসহ ইরানে এ নিয়ে দুজন সাংসদ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এভারেস্ট বিজয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এভারেস্ট জয়ী এ নারী বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অর্থাৎ সেভেন সামিট জয় করেছেন।

বেলজিয়াম ফুটবলার ফেলাইনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। জার্মান চ্যাে লর অ্যাঞ্জেলা মারকেল কোয়ারেন্টাইনে আছেন। উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা লন্ডন থেকে এবং সুপারস্টার বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমি স্টিফেন স্পিলবার্গের একটি ছবিতে শুটিং শেষে বুদাপেস্ট থেকে ভারতে ফিরে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টইনে রয়েছেন সচেতনভাবে।

ক্রিকেটে বিশ্ব অল রাউন্ডার বংলাদেশী খেলোওয়ার শাকিব আল হাসান ও অভিনেত্রী শাওন রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে।

করোনার সংক্রমণের জন্য ওষুধ ও খাবারের দোকান ছাড়া সকল ভোগ্যপণ্যর দোকান বন্ধ হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইউরোপ অমেরিকার বেশিরভাগ পোষাকের দোকান। বিশ্ববাজারে বিক্রি না হওয়ায় এসব দেশ তৈরী পোষাক না পাঠনোর জন্য রপ্তানিকারকদের জানিয়েছে। আবার অনেকে কিছু পণ্যের ক্রয় আদেশ বাতিল করে দিয়েছে। দেশের গার্মেন্টেস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসেব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৬৯ টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার মূলের ক্রয় আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

খানিকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় করোনা জন্য সার্বিকভাবে রপ্তানি বন্ধ এবং এ শিল্পকে মারাত্মক হুমকির সন্মুখীন হতে হবে।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ইতিমধ্যে গোটা বিশ্বকে কার্যত অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। যে সকল স্থানে মানুষের ভীড়ে মুখরিত থাকতো এখন সেখানে ভূতুরে অবস্থা বিরাজ করছে। গণজমায়েতের ওপর বিধি নিষেধ আরোপের জন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে এই ভাইরাস বিশ্বকে চড়ম অর্থনৈতিক মন্দায় ফেলবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এহেন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে দেশে যে প্রস্তুতি রয়েছে তা যথেস্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন। নজিরবিহীন এই দুর্যোগ সাধারন কোন কৌশলে নিরসন হবে না। এজন্য বিশ্ব নেতাদের এক জোট হয়ে কাজ করার আহবান জানান গুতেরেস।

করোনা বিশ্ব অর্থনীতিতে এক আতঙ্কের নাম। এর ধংসলীলা ও তান্ডপ তছনছ করে দিয়েছে শিল্প ও ব্যাবসা বাণিজ্যে। চীন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোসহ শক্তিধর অর্থনৈতিক দেশ বিপর্যয় ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে রীতিমতো।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা রয়েছে এ কথা ঠিক তাই বলে লকডাউন এর মতো অবস্থা নিয়ে করোনার প্রভাব ও বিস্তাররোধের সক্ষমতা নেই। যে কারনে আক্রান্ত বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। অপরদিকে এমন বিপর্যয় মোকাবেলায় ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে লকডাউন ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনা সংক্রমনের মহামারী ঠেকাতে এখন সর্বত্র যে লড়াই চলছে তার পরিনতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটায় ভাববার বিষয়। আক্রান্ত এবং মৃত্যু রুখতে বিশ্ব এখন প্রানান্তকর যুদ্ধের মুখোমুখি। ইতালিতে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। দেশে দেশে কোটি কোটি মানুষ রয়েছে হাসপাতালে এবং হোম কোয়ারাইনন্টিনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, পরিবহনসেবা, বিনেদন কেন্দ্র, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান রয়েছে বন্ধ।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারি চাকুরিজীবীদের সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ঝাং জুন করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে ভয়াবহ আকার ধারন করায় নিরাপত্তা পরিষদের সকল বৈঠক বাতিল করেছেন। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ফ্রান্স। সে দেশের নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের হলে জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। ম্যাঁক্রো বলেছেন আমরা এখন যুদ্ধের ময়দানে রয়েছি। ইউরোপের অনেক দেশ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

বেনাপোলসহ দেশের ১১ টি স্থলবন্দর দিয়ে বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ।

ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডের সাথে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি।

২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ও ফার্মেসি ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংদেশের সকল দোকান মালিক সমিতি। করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিশ্বকে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এর থেকে বের হয়ে আসার একটি উপায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।


আতিক সিদ্দিকী
সাংবাদিক ও কলাম লেখক