করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কত সময় লাগবে?
- প্রকাশিত সময় ০৬:৪০:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ মার্চ ২০২০
- / 140
Microscopic view of Coronavirus, a pathogen that attacks the respiratory tract. Analysis and test, experimentation. Sars. 3d render
ডেস্ক নিউজঃ করোনা ভাইরাস স্তব্ধ করে দিয়েছে পৃথিবীকে। মানুষের পদচারণায় মুখর থাকত সেসব জায়গা, সেগুলো দেখলে এখন ভূতুড়ে মনে হয়। প্রতিদিনের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা, স্কুল বন্ধ, ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা, গণ-জমায়েতের উপর বিধিনিষেধ -এসব কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিনেমায় দেখা দৃশ্যগুলো যেন সত্যি হয়ে গেছে আমাদের জীবনে আজ।
একটি রোগকে প্রতিহত করার জন্য পুরো বিশ্ব যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটি নজিরবিহীন।
কিন্তু এর শেষ কোথায়? মানুষ কবে মানুষ নাগাদ মুক্তি পাবে?
কবে স্বাভাবিক হবে দৈনন্দিন জীবন?
মানুষের পদচারনায় আবার কবে মুখরিত হবে পৃথিবী পথ!
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী তিনমাসের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে আরো অনেক সময় লাগবে। হয়ত কয়েকবছর।
এটা নিশ্চিত যে, যেভাবে পৃথিবীর সব বড় শহরগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে এবং মানুষের চলাফেরার উপর আরোপিত বিধিনিষেধ দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এতে করে পুরো পৃথিবীতে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক যে প্রভাব পড়বে তা হবে মারাত্মক।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ভুক্তভোগী দেশগুলোকে কোনো কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার উপায় খুঁজতে হবে।
তবে একথা ঠিক যে বিধিনিষেধ আরোপের ফলে করোনাভাইরাসের ব্যাপকহারে বিস্তার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। তাই এসব বিধিনিষেধ তুলে দিলে হয়ত সংক্রমণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
“এই পরিস্থিতি থেকে আমরা কিভাবে বের হয়ে আসবো এবং বেরিয়ে আসার জন্য কৌশল কী হওয়া উচিৎ সেটা নিয়ে চিন্তায় বড় ধরনের সমস্যা আছে,” বলছিলেন এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ।
তিনি বলেন, “এটি নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশেরই কৌশল নেই।”
এই কৌশল নির্ধারন করা একটি বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ।
এর তিনটি উপায় আছে।
প্রথমত, টিকা দেয়া
দ্বিতীয়ত, বহু মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ফলে মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে
তৃতীয়ত, মানুষ এবং সামাজিক আচার-আচরণে স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসা
টিকা আবিষ্কৃত হতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। টিকা গ্রহণ করলে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেও তারা অসুস্থ হবে না। যত বেশি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে ততই ভালো। যদি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে আমেরিকায় এক ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলক-ভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে। যে কোন টিকা আবিষ্কৃত হলে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রথমে অন্য কোন প্রাণির উপর প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে প্রথমেই মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জন্য বেশ দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। কিন্তু এটি সফল হবে কিনা কিংবা বিশ্বজুড়ে এই টিকা দেয়া যাবে কি না –সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য জন্য ব্রিটেন যে কৌশল নিয়েছে সেটি হচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা যাতে হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ না হয়ে যায়। হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আইসিইউতে জায়গা পাওয়া যাবে না। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্সি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন কোন পর্যায়ে যাবে সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া সম্ভব নয়।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, “আমরা সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে রাখার কথা বলছি যাতে করে কম সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়।”
“আমরা যদি দুই বছরের বেশি সময় এটা করতে পারি তাহলে একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে। এর ফলে মানুষের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে।”
কিন্তু এ কৌশলের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতদিন টিকবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অতীতে করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরণের যেসব সংক্রমণ হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব ভালো কাজ করেনি। অনেক মানুষ তাদের জীবনে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছে।
অধ্যাপক উলহাউজ বলেন, তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের আচার-আচরণে স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসা যাতে করে সংক্রমণের মাত্রা কম থাকে।
বর্তামানে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন: কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়টি জোরদার করা।
“আমরা শুরুতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করেছি এবং তারা যাদের সংস্পর্শে গিয়েছে তাদেরও খুঁজে বেরি করেছি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।” বলছিলেন অধ্যাপক উলফহাউজ।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হলে সেটি অন্য কৌশলগুলো বাস্তবায়নে সাহায্য করবে।
মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দিলে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে সেটি সাথে সাথে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পারে।
অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা দেবার মাধ্যমে এই রোগের মাত্রা কমিয়ে আনা যাতে আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের উপর চাপ কমে। এটি করা সম্ভব হলে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া বা লকডাউনের আগে দেশগুলো বেশি রোগী সামাল দিতে পারবে।
এছাড়া হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে বেশি শয্যার ব্যবস্থা করে অধিক সংখ্যক রোগীর সেবা দেয়া সম্ভব। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এটিও একটি উপায়।
ব্রিটেনের চিকিৎসা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে বর্তমান পরিস্থিতি তেকে বের হয়ে আসার উপায় কী?
তিনি বলেন, “টিকা দেয়াটাই হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এটি সম্ভব হবে।”
সূত্রঃ বিবিসি