ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

কৃষকদের রক্ষা করবে কে? সাঁথিয়ায় করোনার ঝুকি নিয়েই মাঠে কৃষি পরিবার ও ছাত্র

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৩:২৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০
  • / 137

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে নিজেরা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে লকডাউনের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে সরকার লকডাউনসহ সকল প্রকার যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ১০ দিনের ছুটি ঘোষনা করেছেন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের।

তবে সামাজিক দুরত্ব ও নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা পাবনার সাঁথিয়ার কৃষক পরিবার। এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন চলছে পেঁয়াজ, গম ঘরে তুলার মৌসুম। মাঠে পরিচর্যার অপেক্ষায় রয়েছে বোরো ধানের ক্ষেত। আকাশের মেঘের ঘনঘটা প্রতিদিনই কৃষকের মনে কম্পন সৃষ্টি করছে। এবুঝি বৃষ্টি এলো। করোনার সকল ভয়কে দুর করে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছে পেঁয়াজ, গম ও ধানের জমিতে।

সরেজমিন সাঁথিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুদহ বিলপারের বিষ্ণুপুর মাঠে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে নিজেদের আবাদকৃত জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে। কোন কোন জমিতে চার থেকে সাত জন শ্রমিক এক সাথে কাজ করছে। তাদের কারও মুখে মাস্ক বা অন্য কোন করোনা প্রতিরোধক নেই। সবান ছাড়াই হাত ধুয়ে সকাল ও দুপুরের খাবার মাঠে বসেই খাওয়া হচ্ছে। মাঠের প্রায় প্রতিটি জমিতে কৃষক শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে ফসল সংগ্রহ করছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুন, গম ও ধানের জমিতেই শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজ করছে।

কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে দল ভেঁধে এক সাথে বসে ৫ থেকে দশ জন মহিলা পেঁয়াজের মাথা কাটছে। উপজেলার সকল মাঠ ও পেঁয়াজ চাষির বাড়ির চিত্র একই। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের ঘরে রাখতে যে শিক্ষার্থীদেরকে সরকার ছুটি ঘোষনা করছে তাদেরকেও পাওয়া যাচ্ছে মাঠে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক (৬০) জানান, পেঁয়াজ সংগ্রহের সময় হয়েছে। বর্তমানে বাজার ভালো। বৃষ্টি হলে এ পেঁয়াজ ঘরে রাখা যাবে না, দামও কম হবে। তাই করোনার ভয়ে বসে থাকলে তো আমাদের চলবে না। সারা বছরের পরিবারের খরচ এ পেঁয়াজ থেকে চলে। ফসল ঘরে তোলার পরে করোনা নিয়ে ভাবতে হবে।

উপজেলার গোপলপুর মাঠে স্বপরিবারে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে এক কৃষক। তিনি জানান, করোনার জন্য ঘরে বসে থাকলে ফসল তো ঘরে উঠবে না। বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে।

চলতি রবি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৪৯ হাজার ৫শ’ ৭০ হেক্টোর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করা হয়েছে। সব চেয়ে বেশী পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর ও সুজানগরে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অনেক উপজেলায় এ লক্ষামাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ রোপন হয়। চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় ২০ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন গম উৎপাদন লক্ষামাত্রা নির্ধরণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়াসহ সব উপজেলাতেই কম বেশি রবি শস্যর উৎপাদন হয়। আর এ সময়ে কৃষকের ব্যস্ত থাকে ফসল ঘরে তুলতে। কৃষকের ব্যস্ত সময়ে দেশে করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকরা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা ও সংক্রামণ রোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে পারছে না। এতে করে সাঁথিয়ার কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসের ঝুকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জীব গোস্বামী জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে কৃষকদের করোনা বিষয়ে সচেতনতা করছি। ইউনিয়ন ভিত্তিক উপসহকারি কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সাথে কথা বলে করোনা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজেও মনিটরিং করছি।

কৃষকদের রক্ষা করবে কে? সাঁথিয়ায় করোনার ঝুকি নিয়েই মাঠে কৃষি পরিবার ও ছাত্র

প্রকাশিত সময় ০৩:২৪:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০

সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে নিজেরা সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে লকডাউনের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে সরকার লকডাউনসহ সকল প্রকার যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ১০ দিনের ছুটি ঘোষনা করেছেন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের।

তবে সামাজিক দুরত্ব ও নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা পাবনার সাঁথিয়ার কৃষক পরিবার। এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন চলছে পেঁয়াজ, গম ঘরে তুলার মৌসুম। মাঠে পরিচর্যার অপেক্ষায় রয়েছে বোরো ধানের ক্ষেত। আকাশের মেঘের ঘনঘটা প্রতিদিনই কৃষকের মনে কম্পন সৃষ্টি করছে। এবুঝি বৃষ্টি এলো। করোনার সকল ভয়কে দুর করে কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছে পেঁয়াজ, গম ও ধানের জমিতে।

সরেজমিন সাঁথিয়ার ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুদহ বিলপারের বিষ্ণুপুর মাঠে বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে নিজেদের আবাদকৃত জমি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করছে। কোন কোন জমিতে চার থেকে সাত জন শ্রমিক এক সাথে কাজ করছে। তাদের কারও মুখে মাস্ক বা অন্য কোন করোনা প্রতিরোধক নেই। সবান ছাড়াই হাত ধুয়ে সকাল ও দুপুরের খাবার মাঠে বসেই খাওয়া হচ্ছে। মাঠের প্রায় প্রতিটি জমিতে কৃষক শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে ফসল সংগ্রহ করছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুন, গম ও ধানের জমিতেই শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজ করছে।

কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে দল ভেঁধে এক সাথে বসে ৫ থেকে দশ জন মহিলা পেঁয়াজের মাথা কাটছে। উপজেলার সকল মাঠ ও পেঁয়াজ চাষির বাড়ির চিত্র একই। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের ঘরে রাখতে যে শিক্ষার্থীদেরকে সরকার ছুটি ঘোষনা করছে তাদেরকেও পাওয়া যাচ্ছে মাঠে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক (৬০) জানান, পেঁয়াজ সংগ্রহের সময় হয়েছে। বর্তমানে বাজার ভালো। বৃষ্টি হলে এ পেঁয়াজ ঘরে রাখা যাবে না, দামও কম হবে। তাই করোনার ভয়ে বসে থাকলে তো আমাদের চলবে না। সারা বছরের পরিবারের খরচ এ পেঁয়াজ থেকে চলে। ফসল ঘরে তোলার পরে করোনা নিয়ে ভাবতে হবে।

উপজেলার গোপলপুর মাঠে স্বপরিবারে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে এক কৃষক। তিনি জানান, করোনার জন্য ঘরে বসে থাকলে ফসল তো ঘরে উঠবে না। বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে।

চলতি রবি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৪৯ হাজার ৫শ’ ৭০ হেক্টোর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধরণ করা হয়েছে। সব চেয়ে বেশী পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৯শ’ ৭০ হেক্টর ও সুজানগরে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অনেক উপজেলায় এ লক্ষামাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ রোপন হয়। চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় ২০ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন গম উৎপাদন লক্ষামাত্রা নির্ধরণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়াসহ সব উপজেলাতেই কম বেশি রবি শস্যর উৎপাদন হয়। আর এ সময়ে কৃষকের ব্যস্ত থাকে ফসল ঘরে তুলতে। কৃষকের ব্যস্ত সময়ে দেশে করোনার মত ভয়াবহ ভাইরাস দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকরা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা ও সংক্রামণ রোধে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে পারছে না। এতে করে সাঁথিয়ার কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসের ঝুকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জীব গোস্বামী জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে কৃষকদের করোনা বিষয়ে সচেতনতা করছি। ইউনিয়ন ভিত্তিক উপসহকারি কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সাথে কথা বলে করোনা বিষয়ে ধারণা দিচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজেও মনিটরিং করছি।