ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

সারাদিনে ৮০ টাকা ভাড়া পরিবার নিয়ে খাবো কি?

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৬:৪৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ এপ্রিল ২০২০
  • / 97

smart

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সারাদিনে মাত্র ৮০ টাকা ভাড়া হয়েছে। পরিবার নিয়ে খাবো কি? ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। সবার সংসারে আছে। ছেলেরা কাজ করে আমিও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। আগে প্রতিদিন ৩০০ টাকা ভাড়া হলেও এখন সারাদিনে ১০০ টাকা ভাড়া হয়না। কেউ সহযোগিতাও করে না। সেদিন দেখলাম চাউল দিলো, সাহায্য দিলো আমরা পেলাম না! এভাবেই বলছিলেন রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার বৃদ্ধ ভ্যান চালক আয়েন উদ্দিন।

নিজের বয়সের কথাও ঠিকমত বলতে পারছে না আয়েন! অনুমান করে জানালেন, ৮০ উপরে আমার বয়স। এই বয়সে বয়স্ক ভাতা পাইনি! কারো কাছে কোন সহযোগিতা পায়নি।

এদিকে করোনার দূর্যগের কারণে খেটে খাওয়া এই মানুষ গুলোর এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। রাজশাহীর প্রায় সকল জায়গায় খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তাকিয়ে আছে সরকারি সহযোগিতা বা বিত্তবানদের দিকে। কিন্তু পুঠিয়া, বানেশ্বর এলাকার ভ্যান চালকদের সাথে কথা হলে বেশিরভাগ চালক জানালেন সরকারি চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কিছু পায়নি।

বানেশ্বর এলাকার আরেক ভ্যান চালক ইনছার (৬৫) জানালেন, করোনার আগে সারাদিনে ভাড়া মারতাম প্রায় ৩০০ টাকার উপরে। কিন্তু এই সময় ১০০ টাকাও হচ্ছে না। কেউ কোন সহযোগিতা করছে না। কিভাবে চলবো! পরিবার নিয়ে কি কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এর মাঝে পুলিশ বড় রোডে গাড়ি চালাতে দেয় না। মাঝে মাঝে ধরে রাখে আবার ছেড়ে দেয়। এখন ধরলে আর রক্ষা নেই।

ভ্যান চালক মোমিন জানালেন, পরিবারে স্ত্রী দুই ছেলে আর এক মেয়ে পাঁচ জনের সদস্য আমার। গতকাল মাত্র ৯০ টাকা ভাড়া হয়েছে। বাজার করতে পারিনি! কি ভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। বাসায় চাল ডাল বাজার সদায় কিছু নেই। আজ হাটের দিন মাত্র ৫০ টাকা ভাড়া হয়েছে। বাকি সময় হয়তো আর ৫০ টাকা হবে। এটা দিয়ে যা হয় বাজার করে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।

ভ্যান চালক হাকিম জানান, সরকারি ভাবে যদি কিছু সহযোগিতা পেতাম তাহলে এখন আর বাইরে বের হতাম না। কিন্তু বাসায় চারটা মুখ আছে তাদের খাবার দিবে কে?
বানেশ্বর বাজার শেষে শিবপুর হাটে এসে দেখা যায়, আরেক ভ্যান চালক আনসার আলী ভাড়া না পেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে বসে আছে। আনসার বলেন,‘করোনায় বাইরে বের হওয়া মানা। রাস্তায় উঠলে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। আগে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় ভ্যান চালালেও কিছু ভাড়া পেতাম সংসার চলতো। কিন্তু এই সময়ে লোকজন নাই ভাড়া নাই। আজ হাটের দিন মাত্র ৬০ টাকা ভাড়া হইলো। বাজার করার টাকা নেই! বাড়ির মানুষ বাজারের জন্য তাকিয়ে আছে।

পুঠিয়ায় এসে কথা হয় আরো কয়েকজন ভ্যান চালকদের সাথে সকলেই জানালেন, সারাদিনে তাদের ১০০ টাকা ভাড়া হচ্ছে না। কিভাবে কি করবে। প্রশাসনের লোকজন বাইরে বের হতে মানা করছে। কিন্তু কাছে এসে কেউ বলছে না আমি আপনাদের বাজার করে দিচ্ছি। আপনারা বাইরে বের হবেন না। বাসায় বাজার সদায় না থাকায় তো পরিবারের কষ্টে আমরা রাস্তায় আসছি। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা যদি আমাদের কোন ব্যবস্থা করে তাহলে আর বাইরে বের হবো না।

করোনার কারণে বর্তমানে রাজশাহীতে এখন বন্ধ হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও সড়ক পথ। ফলে বিপাকে পড়েছে এখানকার নিন্ম আয়ের মানুষগুলো।
এভাবেই ভাড়া না পেয়ে ব্যাপক কষ্টে দিন কাটাছে উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর। সরকারি ভাবে চাউল দেওয়া হলে কেউ পেয়েছে কেউ বা আবার পায়নি। তবে না পাওয়ার সংখ্যা বেশি। আর পাওয়ার সংখ্যা গুটি কয়েক।

তারা আয় রোজগার না করতে পারায় পরিবার নিয়ে আহার নিয়ে সংকটে ভুগছে। তারা জানাচ্ছে সরকার ও সমাজের বিত্তবানেরা এই দুঃসময়ে যেন তাদের পাশে এসে দাড়াঁয়। তাহলেই তারা ঘরে থাকবে।

সারাদিনে ৮০ টাকা ভাড়া পরিবার নিয়ে খাবো কি?

প্রকাশিত সময় ০৬:৪৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ এপ্রিল ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সারাদিনে মাত্র ৮০ টাকা ভাড়া হয়েছে। পরিবার নিয়ে খাবো কি? ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। সবার সংসারে আছে। ছেলেরা কাজ করে আমিও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। আগে প্রতিদিন ৩০০ টাকা ভাড়া হলেও এখন সারাদিনে ১০০ টাকা ভাড়া হয়না। কেউ সহযোগিতাও করে না। সেদিন দেখলাম চাউল দিলো, সাহায্য দিলো আমরা পেলাম না! এভাবেই বলছিলেন রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার বৃদ্ধ ভ্যান চালক আয়েন উদ্দিন।

নিজের বয়সের কথাও ঠিকমত বলতে পারছে না আয়েন! অনুমান করে জানালেন, ৮০ উপরে আমার বয়স। এই বয়সে বয়স্ক ভাতা পাইনি! কারো কাছে কোন সহযোগিতা পায়নি।

এদিকে করোনার দূর্যগের কারণে খেটে খাওয়া এই মানুষ গুলোর এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। রাজশাহীর প্রায় সকল জায়গায় খেটে খাওয়া মানুষ গুলো তাকিয়ে আছে সরকারি সহযোগিতা বা বিত্তবানদের দিকে। কিন্তু পুঠিয়া, বানেশ্বর এলাকার ভ্যান চালকদের সাথে কথা হলে বেশিরভাগ চালক জানালেন সরকারি চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কিছু পায়নি।

বানেশ্বর এলাকার আরেক ভ্যান চালক ইনছার (৬৫) জানালেন, করোনার আগে সারাদিনে ভাড়া মারতাম প্রায় ৩০০ টাকার উপরে। কিন্তু এই সময় ১০০ টাকাও হচ্ছে না। কেউ কোন সহযোগিতা করছে না। কিভাবে চলবো! পরিবার নিয়ে কি কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এর মাঝে পুলিশ বড় রোডে গাড়ি চালাতে দেয় না। মাঝে মাঝে ধরে রাখে আবার ছেড়ে দেয়। এখন ধরলে আর রক্ষা নেই।

ভ্যান চালক মোমিন জানালেন, পরিবারে স্ত্রী দুই ছেলে আর এক মেয়ে পাঁচ জনের সদস্য আমার। গতকাল মাত্র ৯০ টাকা ভাড়া হয়েছে। বাজার করতে পারিনি! কি ভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। বাসায় চাল ডাল বাজার সদায় কিছু নেই। আজ হাটের দিন মাত্র ৫০ টাকা ভাড়া হয়েছে। বাকি সময় হয়তো আর ৫০ টাকা হবে। এটা দিয়ে যা হয় বাজার করে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।

ভ্যান চালক হাকিম জানান, সরকারি ভাবে যদি কিছু সহযোগিতা পেতাম তাহলে এখন আর বাইরে বের হতাম না। কিন্তু বাসায় চারটা মুখ আছে তাদের খাবার দিবে কে?
বানেশ্বর বাজার শেষে শিবপুর হাটে এসে দেখা যায়, আরেক ভ্যান চালক আনসার আলী ভাড়া না পেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে বসে আছে। আনসার বলেন,‘করোনায় বাইরে বের হওয়া মানা। রাস্তায় উঠলে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। আগে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় ভ্যান চালালেও কিছু ভাড়া পেতাম সংসার চলতো। কিন্তু এই সময়ে লোকজন নাই ভাড়া নাই। আজ হাটের দিন মাত্র ৬০ টাকা ভাড়া হইলো। বাজার করার টাকা নেই! বাড়ির মানুষ বাজারের জন্য তাকিয়ে আছে।

পুঠিয়ায় এসে কথা হয় আরো কয়েকজন ভ্যান চালকদের সাথে সকলেই জানালেন, সারাদিনে তাদের ১০০ টাকা ভাড়া হচ্ছে না। কিভাবে কি করবে। প্রশাসনের লোকজন বাইরে বের হতে মানা করছে। কিন্তু কাছে এসে কেউ বলছে না আমি আপনাদের বাজার করে দিচ্ছি। আপনারা বাইরে বের হবেন না। বাসায় বাজার সদায় না থাকায় তো পরিবারের কষ্টে আমরা রাস্তায় আসছি। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা যদি আমাদের কোন ব্যবস্থা করে তাহলে আর বাইরে বের হবো না।

করোনার কারণে বর্তমানে রাজশাহীতে এখন বন্ধ হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও সড়ক পথ। ফলে বিপাকে পড়েছে এখানকার নিন্ম আয়ের মানুষগুলো।
এভাবেই ভাড়া না পেয়ে ব্যাপক কষ্টে দিন কাটাছে উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর। সরকারি ভাবে চাউল দেওয়া হলে কেউ পেয়েছে কেউ বা আবার পায়নি। তবে না পাওয়ার সংখ্যা বেশি। আর পাওয়ার সংখ্যা গুটি কয়েক।

তারা আয় রোজগার না করতে পারায় পরিবার নিয়ে আহার নিয়ে সংকটে ভুগছে। তারা জানাচ্ছে সরকার ও সমাজের বিত্তবানেরা এই দুঃসময়ে যেন তাদের পাশে এসে দাড়াঁয়। তাহলেই তারা ঘরে থাকবে।