সিরাজগঞ্জে পোল্ট্রি শিল্পে করোনার থাবা: লোকশানে খামারীরা
- প্রকাশিত সময় ০৫:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০
- / 115
আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ করোনা থাবায় হুমকীর মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি শিল্প। উৎপাদন বেশি আর চাহিদা কম থাকায় লোকশানে খামারীরা।
মুরগী এবং ডিমের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। প্রতিটি ডিমের দাম আগে যেখানে ছিলো সাড়ে ৭ টাকা সেটা এখন সাড়ে ৫ টাকা। আবার পরিবহনের অসুবিধার কারনে লোকসানে এখন ক্ষুদ্র খামারীরা। এঅবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে খামারীদের। অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারী সহায়তার কথা বলছেন খামারীরা।
সিরাজগঞ্জ প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও পোল্ট্রি মালিক সমিতি সুত্রে জানা যায়, জেলার ৮০র দশকের শুরুতে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে জেলায় অসংখ্য পোল্ট্রি খামার গড়ে ওঠে। শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এখানে গড়ে উঠে প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামার।
২০০৭ সালের বন্যা ও ২০১২ সালে এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু এবং দফায় দফায় বন্যায় বন্ধ হয়ে যায় অর্ধেক খামার। বর্তমানে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার বয়লার ও লেয়ার মুরগীর খামার রয়েছে। আর হাঁসের খামার রয়েছে ১২শত ১০টি।
এসব হাঁস মুরগীর খামার থেকে বছরে ৩০ কোটি পিচ ডিম ও ২ লাখ মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন হয়ে থাকে। যা দেশে আমিষের চাহিদা মেটাতে ভুমিকা রাখে।
বর্তমানে করোনার প্রভাবে বেকাদায় পড়েছেন সিরাজগঞ্জের খামারীরা। মুরগী এবং ডিমের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। প্রতিটি ডিমের দাম যেখানে ছিলো সাড়ে ৭টাকা সেটা এখন সাড়ে ৫টাকা। আবার পরিবহনের অসুবিধার কারনে জেলার বাইরে ডিম সরবরাহ করতে পারছে না খামারীরা। এঅবস্থা চলতে থাকলে পথে বসতে হবে খামারীদের। অবস্থার উন্নতির জন্য সরকারী সহায়তার কথা বলছেন খামারীরা।
প্রধানমন্ত্রীর পদক প্রাপ্ত সফল খামারী মাহফুজ-উর-রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে আমি লোকসানে আছি। ডিম ও মুরগী বিক্রি করতে পারছি না। আমার একটি সেটে ১১শ মুরগী ছিলো। অর্ধেক বিক্রি করতে পেরেছি আর অর্ধেক আসহায় মানুষের মাঝে দান করে দিয়েছি। ডিমের ব্যাপারি আগে যেখানে ১০ হাজার ডিম নিতো এখন ৫ হাজার ডিম নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বের হতে পারছে না। দোকার পাট বন্ধ। ডিম বিক্রি করবে কোথায়।
সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে ধস নেমেছে। জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় আড়াই হাজার খামার আছে। এসব খামারে যে পরিমান ডিম উৎপাদিত সেই তুলনাই বিক্রি হচ্ছে না। করোনা ভাইরাসের একশত ডিম বিক্রি করতাম ৭৫০ টাকায়। এখন সেই ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। বিক্রি না থাকায় ডিম গুলো ঘরে থেকে পঁচে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের এস.এ ফরিদ বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প কঠিন মুহুর্তে দাড়িয়েছে। দোকান ও পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মুরগী ও ডিম নিয়ে কষ্টে আছে খামারীরা। উৎপাদন খরচ উঠছে না। এঅবস্থা চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে সব খামার। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ তিনি যেন পোল্ট্রি শিল্পের উপর একটু নজর দেন। খামারীদের আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করলে এই শিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
জেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আখতারুজ্জামান ভূইয়া বলেন, সরকারী হিসেবে জেলায় মুরগী আছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৫শত ৬২টি। আর হাঁস আছে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮শত ৯৬টি। বয়লার মুরগীর খামার ১৫শত ৫০টি আর লেয়ার মুরগীর খামার ৮শত ৭৫টি। ডিম এবং মাংসে সিরাজগঞ্জ জেলা সয়ংসম্পূর্ণ্য। বর্তমানে খামারীরা ডিম বিক্রির জন্য বাজার পাচ্ছে না। কারন ভোক্তা কমে গেছে। বাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাইকার যারা তারা ডিম কিনতে আগ্রহী কম। এজন্য ডিম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। ডিম উৎপাদন খরচ ৫টাকার ওপরে। বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫টাকায়। সরবরাহের পথ গুলো বন্ধ রয়েছে। এঅবস্থা চলতে খাকলে খামারীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাজার সচল রাখার চেষ্টা করছি।