দেশের অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ভূমিকা ও তাদের আপদকালিন নিরাপত্তা
- প্রকাশিত সময় ০৮:১৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল ২০২০
- / 261
এক সময়ের তলাবিহিন ঝুড়ির উপাধি খ্যাত বাংলাদেশ আজ সদর্পে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উত্তরনের টার্নিং মুহুর্ত সবসময়ই ঝুকিপূর্ণ হয়। এসব ঝুকি মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার এমনই এক মুহুর্তে করোনা ভাইরাস বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। জিবন বাঁচাতে সকল কর্মকান্ড বন্ধ করে সামজিক বা শারিরিক দুরত্ব বজায় রাখার মত চ্যালেঞ্জিং কাজে নামতে হয়েছে সমগ্র বিশ্বের মত বাংলাদেশকে।
বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার মতে করোনা সংকট দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ধরনের আকস্মিক সমস্যা মোকাবেলায় ভুল ভ্রান্তি অসমঞ্জস্যতা থাকা খুবই স্বাভাবিক। বন্যা, জলোস্বাস ঘুর্নিঝড় ইত্যাদি সাময়িক প্রকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলার সফল অভিজ্ঞতা আমাদের থাকলেও করোনা ভাইরাসের মত গভীর সমস্যা মোকাবেলা করার বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। এ বিষয় মাথায় রেখে আমাদের আজ আর্থ সামাজিক নানা বিষয়ে গতিশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
উন্নয়নের এই সূর্যক্ষণে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে অনেক সম্পদ থেকেও শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনা, দুর্ণীতি অদুরদর্শী পদক্ষেপের কারনে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে ছিটকে খাদে পড়ার উদহারন বিশ্বে আমাদের সামনে রয়ে গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার মাপকাঠিতে ত্রান খেয়ে বেচে থাকার মত অবস্থায় নেই দেশের মানুষ। তথাপি করোনা সংক্রান্ত অনআকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুর্ব থেকে কোন প্রস্তুতি গ্রহন না করতে পারার কারনে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এধরনের অনআকাঙ্খিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের নাগরিকের সুরক্ষায় রাষ্টের পক্ষ থেকে গঠনমুলক বাবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক হিসাবে এ প্রত্যাশা একজন নাগরিকের থাকা স্বাভাবিক।
অভিজ্ঞতায় দেখা যায় করোনার মত সংকট মোকাবেলায় রাষ্টের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান নাগরিক গনও জনগনের কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন ত্রান নিয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন মহলের এসব সদিচ্ছা সমূহকে সুসংহঠিত করে দেশের নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে কাজে লাগাতে ব্যার্থতার কারনে সম্পদ থেকেও মানুষ খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অব্যবস্থাপনার কারনে একই মানুষ বারবার ত্রান পাচ্ছে আবার অন্যজন একবারও পাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভিয়েতনাম চালের বুথ প্রতিষ্ঠা করেছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির পাশাপাশি খাদ্য পরিস্থিতিও ক্রমশ: অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রধান মহাপরিচালক টেড্রস আ্যাডহানম গ্রেব্রেইসুস যখন কোভিড-১৯ কে সোয়াইন ফ্লু’র চেয়েও দশ গুণ শক্তিশালী ক্ষতিকর ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অন্যদিকে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) এর ডিরেক্টর অব ইমারজেন্সিস ডোমিনিক কার্জন বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘পৃথিবীর কিছু স্থান দুর্ভিক্ষের খুব কাছাকাছি’।
নিশ্চয় এ ধরনের ঘোষণা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গকে চরম নাজুক অবস্থায় ফেলে দেয়। কেননা, খাদ্যের সংকট হলে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নয় বরং খাবারের অভাবে না খেয়েই মারা যাবে। বিশ্বের এসব বড় বড় প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাবধান বানীকে আমলে নিয়ে আমাদেরকে এখন ভাবতে হবে করোনা ভাইরাস সংকট শেষ সংকট নয় সামনে আরো বড় সংকট মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যে কোন পরিস্থিতিতে নাগরিকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চাল ও গমের উৎপাদন রেকর্ড ১.২৬ বিলিয়ন টন হতে চলেছে। এই পরিমাণ উৎপাদন হলে তা বিশ্বের চাহিদা মিটিয়ে আরও উদ্বৃত্ত থাকবে।
চাল উৎপাদন এবং মজুদ সন্তেষজনক হলেও করোনা পরিস্থিতির কারনে বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক ভারত লম্বা সময়ের জন্য লকডাউনে গেছে, যাতে অনেক সরবরাহ চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে রপ্তানিতে আরও বিধি-নিষেধ আসার শঙ্কায় এরইমধ্যে বিশ্ব বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে।
থাইল্যান্ডে চালের দাম এইরমধ্যে বেড়ে টন প্রতি ৪৯২ দশমিক ৫ ডলারে উঠেছে, যা ২০১৩ সালের অগাস্টের পর সর্বোচ্চ।
বিশ্বের তৃতীয় চাল রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম এবং নবম গম রপ্তানিকারক কাজাখস্থান অভ্যন্তরীণ যোগানের কথা চিন্তা করে এরইমধ্যে এসব খাদ্যশস্য রপ্তানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য গুদামে বর্তমানে প্রায় ১৬.৯৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রয়েছে। তন্মধ্যে চাল ১৩.৮৭ লাখ মে. টন এবং গম ৩.০৮ লাখ মে. টন। এই মজুদ সন্তোষজনক এবং খাদ্য শস্য ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ‘খাদ্য শস্য পরিস্থিতি’ বিষয়ক এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ২০ এপ্রিল সোমবার গণভবন থেকে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের করোনাভাইরাস সৃষ্ট প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “সরকার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে বেশি ধান, আতপ চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার চেয়ে অনেক বেশি আমরা নিচ্ছি। এখন আমরা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করব।”
বিশ্বে প্রচুর চালের মজুদ আছে, এই বছরই প্রথম বিশ্বে চালের মজুদ ১৮০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়েছে, যা ২০১৫-১৬ সময়ের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। বিশ্বে খাদ্য শষ্য উৎপাদনকারি শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশর অবস্থান ১১ নম্বরে।
খাদ্য শস্যের পর্যাপ্ত মজুদ দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য সবার কাছে পৌঁছে দেয়া এবং খাদ্য কেনার সামর্থ্য থাকার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মজুদকৃত খাদ্য দেশের মানুষের জন্য সরবরাহ করা হলেও অসাধু ব্যবসায়ী বা তৎসংশ্লিষ্ঠ কেউ যদি অন্যায়ভাবে তা মজুদ রাখে এবং দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তখন খাদ্যের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
এসব তথ্য উপাত্ত থেকে এটি স্পস্ট যে খাদ্য উৎপাদন এবং মজুদের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা যথেষ্ট সন্তোষজনক। এই উৎপাদন এবং মজুদ ব্যবস্থা সংকটকালিন সময়ে জনকল্যানে ব্যবহার করাই আজকের চ্যালেঞ্জ।
পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প সহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প জাতির সামনে আশাজাগানিয়া ভবিষ্যৎ কে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে। এসব মেগা প্রকল্প এর পাশাপাশি একটি উন্নত সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ‘সামাজিক নিরাপত্তা, ‘সামাজিক ক্ষমতায়ন’ ও ‘সামাজিক সুরক্ষা’ কর্মসুচির আওতায় বয়স্ক ভাতা, দরিদ্র মায়েদের ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, অনাথ আশ্রম কর্মসূচি, প্রান্তিক চাষিদের জন্য ভর্তুকি, ঝরেপড়া ছাত্রভাতা, প্রতিবন্ধী ছাত্রভাতা, হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মস্থান, গ্রামীণ দুঃস্থ মায়েদের সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং প্রকল্পের ১৩০টি খাতে সরকারের চলমান জনকল্যান মুখি বরাদ্দ রয়েছে।
সমাজের পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর কল্যানে কাজ থাকলেও যাদের শ্রমে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহা সড়কের গর্বিত পথিক সেই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং তাদেরকে নিয়ত্রনের বিষয়ে চিন্তা করার আজ সময় এসেছে টেকশই উন্নয়নের প্রশ্নে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মুখ্য অবদান রেখে চলেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। বিগত দশ বছরে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি খাতের অবদান মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। পক্ষান্তরে ৯৫ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে বেসরকারি খাতে যার মধ্যে প্রায় ৮১ শতাংশ অবদান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের।
আমাদের দেশে কৃষি, মৎস্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ, নির্মাণ কাজ, হকার, চাতাল, সেলাই কাজ, ওয়েল্ডিং, তাঁত, বিড়ি কারখানা, প্রিন্টিং, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, গৃহস্থালি কর্ম, ক্ষুদ্র কারখানা প্রভৃতি খাতকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশ্ব শ্রম সংস্থা (আইএলও), এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বূরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে বাংলাদেশের প্রায় ৮৯ শতাংশ শ্রমশক্তি নিয়োজিত আছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। মাত্র ১১ ভাগ মানুষ কাজ করেন তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক খাতে।
টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নীরবে করে যাচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘শ্রমশক্তি জরিপ’ অনুযায়ী ২০১০ সালে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ ২০০০ সালে এ হার ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ২০০০ সালে যেখানে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ কাজ করতেন, ২০১৮ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ১১ শতাংশে।
কর্মসংস্থান ছাড়াও মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) এই খাতের অবদান নিতান্ত কম নয় প্রায় ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপের তথ্য মতে, দেশে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৩৫ লক্ষ। এর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত আছে প্রায় ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ।
এই শ্রমশক্তির প্রায় ৩৯ শতাংশ নিয়োজিত আছে কৃষি খাতে। বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সর্বোপরি এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে কৃষি খাত যে অনন্য সাধারণ অবদান রেখে চলেছে তা নজিরবিহীন। এখানে কর্মরত শ্রমশক্তির ৯৫ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক।
দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হচ্ছে সেবা খাত। অনধিক ২ কোটি ৩৭ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছে এই খাতে।
পরের স্থান শিল্প খাতের যেখানে কাজ করে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ শ্রমিক। ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭’ এর তথ্য অনুযায়ী সেবা খাতে কর্মরত শ্রমশক্তির প্রায় ৭২ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক অন্যদিকে শিল্প খাতে এই সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ।
করোনা ভাইরাস বা কথিত আগামী দিনের অর্থনৈতিক মন্দায় বা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সর্বপ্রথম অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির প্রতিদিনের খাদ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনিয় চাহিদা মেটানোর সুষ্টু পরিকল্পনা করা আজ আমাদের জাতীয় স্বার্থে তথা টেকশই উন্নয়নের স্বার্থে অতিব জরুরি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমশক্তি রাষ্ট্রিয় নুন্যতম সুযোগ সুবিধা ভোগ করার কারনে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এদেরকে একটি শৃংখলে নিয়ে আসা সম্ভব। অপরদিকে আমাদের দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এই বৃহৎ শ্রম শক্তি সাধারন ভাবে রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা ধেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত থাকে।
একথা আজ আমাদের সামনে পরিস্কার যে রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম নীতির বাইরে থেকে বাংলাদেশেরে উন্নয়নের মহাসড়কে চলার নিয়ামক শক্তি হিসাবে সামনে এসেছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। প্রচলিত নিয়ম শৃংখলার বাইরে রাষ্টের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম শক্তির বিকাশের দিকে আজ নজর দেওয়ার সময় এসেছে। নইলে বাংলাদেশের উন্নয়নের নিয়ামক অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রম শক্তির ভিতর থেকেই হয়তবা সেই পুরাতন চিৎকার শোনা যেতে পারে “ভাত দে হারামজাদা, তা-না-হ’লে মানচিত্র খাব”।
সরকারের আর দশটি মেগা প্রকল্পের মত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমশক্তিকে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহন করা যেতে পারে। যে প্রকল্পের আওতায় এই বৃহৎ শ্রমশক্তিকে রাষ্টের নুন্যতম নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে আসা যেতে পারে। যে নিয়ন্ত্রন বিকাশমান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিকাশে বাধা না হয়ে এখানে নিয়জিত শ্রমশক্তির জন্য আপদকালিন সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
প্রথমত মুলধারার বাইরে থাকা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমশক্তিকে রাষ্টের নুন্যতম শৃংখলার মধ্যে নিয়ে আশা প্রয়োজন।
এ কাজটি করা যেতে পারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যে সকল দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসব শ্রম শক্তি নিয়োজিত আছে, রাষ্টের আদেশের মাধ্যমে প্রতিজন শ্রমিকের ব্যাক্তিগত বিশেষ ধরনের ব্যাংক হিসাব নিশ্চিত করা। প্রতিষ্ঠান যত ক্ষুদ্রই হোক সরকার ভ্যাট আদায় করার সময় এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের হিসাব নম্বর সরকারি ঘরে জমা দেওয়া ব্যধ্যতামুলক করতে পারে। এই হিসাব নম্বর ধরে সকল শ্রমিককে সরকার আপদকালিন বিমা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে পারে। যে বিমা শুধুমাত্র আপদকালিন সময়ে ব্যবহৃত হতে পারে।
অনেক চড়াই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে অর্জিত সাফল্যকে সঠিক সময়ে সঠিক নাগরিকের কল্যানে ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহন করা প্রয়োজন। নাগরিকের জন্য এ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলেই সংকটকালিন সময়ে রাস্টের আদেশ নির্দেশ সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে এবং দেশ জাতি আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই শ্রমশক্তিই আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নেয়ামক শক্তি। এবারের করোনা ভাইরাস এর আক্রমনকে আগামি দিনের আরো বড় বিপদের বিপদ সংকেত হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে আপদকালিন সময়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই কেবল তাদেরকে রাষ্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সময়মত ঘরে থাকা, শারীরিক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত সামাজিক শৃংখলায় আনা সম্ভব হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর যত মানুষের এ অবধি মৃত্যু হয়েছে, সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যেন এর চেয়ে অধিক মানুষ দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ না করেন।
নুরউদ্দিন শফি কাজল
সম্পাদক, দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ।