ঢাকা ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

পুঠিয়ায় কোরবানির পশুগুলো এখন গলার কাঁটা

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১১:৩৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০২০
  • / 99

তারেক মাহমুদ, রাজশাহীঃ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ২৪ হাজার গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে পালিত হয়েছে। এতে ক্রেতাদের কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়েও অনেক পশুই উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে মহামারি করোনাভাইরাস ও বন্যার প্রভাবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে একদিকে লোকসানের মুখে খামারিরা, অপরদিকে গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এই উপজেলার খামারিরা।

অনেকে ব্যাংক, এনজিও ও ধারদেনা করে বড় করা গরুগুলোকে বিক্রির চেষ্টা করছে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিততে এখন সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

পুঠিয়া উপজেলার গন্ডগোহালী গ্রামের রবি এগ্রো ফার্মের মালিক খামারি রবিউল ইসলাম (রবি) বলেন, খামারের মোট ২৩ মহিষ ১০ গরু ও ৮ খাঁসি নিয়ে ভীষণ বিপাকে আছি। আমার খামার নিয়ে কুরবানিতে সকল পশু বিক্রির লক্ষমাত্রা ধরেছিলোম ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার দুইটি মহিষ বিক্রি করতে হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত ৩ মার্চ খামারে নতুন করে এই পশুগুলোকে তুলেছিলাম। পশু কেনা থেকে শুরু করে ৪০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। করোনার কারণে মোট ২০ লক্ষ টাকার লোকসান গুনছি। ইদের পরে কী হবে কে জানে! ৫ বিঘা জমির উপরে ঘাস লাগানো আছে প্রতিদিন ৬ ধরনের খাবার এই পশুগুলোকে খাওয়াতে হচ্ছে। এভাবে চললে পশুগুলোকে নিয়ে কি করবো ভাবছি।

পুঠিয়ার উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাইদুল ইসলাম জানান, আমার বাসায় মোট ৫ টি গরু আছে। একটাও বিক্রি করতে পারিনি! দাম অনেক কম এই দামে বিক্রি করলে ব্যাপক লোকশান গুনতে হবে। ইদের পরে দাম বাড়লে বিক্রি করবো। সারা বছর গরুগুলোর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে। প্রতি বছর কোরবানির হাটে বিক্রি করি। দাম অনেক কম থাকায় রেখে দিতে হচ্ছে।

এলাকার আরো কয়েকজন খামারিদের সাথে কথা বলে জানা জায়, হাটে তুলনামূলক বেপারিদের আনাগোনা খুব কম ও হাঁক-ডাক নেই বললেই চলে। কোরবানির গরুর ন্যায্য দাম অনুযায়ী ক্রেতা না থাকায় তেমন বিক্রিও হচ্ছে না। ফলে লোকসানের ঝুঁকিতেই রয়েছেন বলে জানালেন বেশিরভাগ খামারি।

পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট প্রায় পাঁচ হাজার গবাদিপশুর খামারি রয়েছেন। এ সব খামারে মোট গবাদিপশু আছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ৫ হাজার গরু মহিষ ও ২০ হাজার ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। এতে কোরবানির চাহিদা পূরণে হয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে।

বর্তমানে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গরু পুঠিয়া উপজেলায় ‘শান্ত বাবু’ গরুর মালিক আলিমুদ্দিন বলেন,‘আমার ছোট খামারটিতে ৫ গরু রয়েছে। এ সব গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, ভুট্টা ভাঙ্গা, গমের ভুসি ও ধানের কুড়াসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক খাবার। বড় গরু শান্তর বিক্রির বিষয়ে এখনো তেমন কাস্টমার পায়নি। আমি ধরে নিয়েছি এবার শান্তকে বিক্রি করতে পারবো না!

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, গরু মোটাতাজাকরণে প্রতিবছরই আমরা খামারিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সবমিলে এখন ২৪ হাজার পশু এই উপজেলায় আছে। তবে করোনায় বিক্রি অনেক কম। কুরবানির কয়েক সপ্তাহ থেকেই এলাকায় উপযুক্ত ক্রেতা না আসায় খামারিরা হতাশায় পড়েছে। সিংহভাগ খামারি কিছু পশু বিক্রি করেছে। আর বাকি সব পশু খামারে আছে।

তিনি আরো জানান, ডিসি অফিসের নির্দেশ মতো অনলাইনে গবাদিপশুর বিক্রির বিষয়ে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে বিক্রি তেমন সাড়া ফেলেনি!

এই রকম আরও টপিক

পুঠিয়ায় কোরবানির পশুগুলো এখন গলার কাঁটা

প্রকাশিত সময় ১১:৩৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জুলাই ২০২০

তারেক মাহমুদ, রাজশাহীঃ ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ২৪ হাজার গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে পালিত হয়েছে। এতে ক্রেতাদের কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়েও অনেক পশুই উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে মহামারি করোনাভাইরাস ও বন্যার প্রভাবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে একদিকে লোকসানের মুখে খামারিরা, অপরদিকে গরুর ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এই উপজেলার খামারিরা।

অনেকে ব্যাংক, এনজিও ও ধারদেনা করে বড় করা গরুগুলোকে বিক্রির চেষ্টা করছে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিততে এখন সেটা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

পুঠিয়া উপজেলার গন্ডগোহালী গ্রামের রবি এগ্রো ফার্মের মালিক খামারি রবিউল ইসলাম (রবি) বলেন, খামারের মোট ২৩ মহিষ ১০ গরু ও ৮ খাঁসি নিয়ে ভীষণ বিপাকে আছি। আমার খামার নিয়ে কুরবানিতে সকল পশু বিক্রির লক্ষমাত্রা ধরেছিলোম ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার দুইটি মহিষ বিক্রি করতে হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত ৩ মার্চ খামারে নতুন করে এই পশুগুলোকে তুলেছিলাম। পশু কেনা থেকে শুরু করে ৪০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে। করোনার কারণে মোট ২০ লক্ষ টাকার লোকসান গুনছি। ইদের পরে কী হবে কে জানে! ৫ বিঘা জমির উপরে ঘাস লাগানো আছে প্রতিদিন ৬ ধরনের খাবার এই পশুগুলোকে খাওয়াতে হচ্ছে। এভাবে চললে পশুগুলোকে নিয়ে কি করবো ভাবছি।

পুঠিয়ার উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাইদুল ইসলাম জানান, আমার বাসায় মোট ৫ টি গরু আছে। একটাও বিক্রি করতে পারিনি! দাম অনেক কম এই দামে বিক্রি করলে ব্যাপক লোকশান গুনতে হবে। ইদের পরে দাম বাড়লে বিক্রি করবো। সারা বছর গরুগুলোর পেছনে অনেক খরচ হয়েছে। প্রতি বছর কোরবানির হাটে বিক্রি করি। দাম অনেক কম থাকায় রেখে দিতে হচ্ছে।

এলাকার আরো কয়েকজন খামারিদের সাথে কথা বলে জানা জায়, হাটে তুলনামূলক বেপারিদের আনাগোনা খুব কম ও হাঁক-ডাক নেই বললেই চলে। কোরবানির গরুর ন্যায্য দাম অনুযায়ী ক্রেতা না থাকায় তেমন বিক্রিও হচ্ছে না। ফলে লোকসানের ঝুঁকিতেই রয়েছেন বলে জানালেন বেশিরভাগ খামারি।

পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট প্রায় পাঁচ হাজার গবাদিপশুর খামারি রয়েছেন। এ সব খামারে মোট গবাদিপশু আছে ২৪ হাজার। এর মধ্যে ৫ হাজার গরু মহিষ ও ২০ হাজার ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। এতে কোরবানির চাহিদা পূরণে হয়েও উদ্বৃত্ত থাকবে।

বর্তমানে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গরু পুঠিয়া উপজেলায় ‘শান্ত বাবু’ গরুর মালিক আলিমুদ্দিন বলেন,‘আমার ছোট খামারটিতে ৫ গরু রয়েছে। এ সব গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, ভুট্টা ভাঙ্গা, গমের ভুসি ও ধানের কুড়াসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক খাবার। বড় গরু শান্তর বিক্রির বিষয়ে এখনো তেমন কাস্টমার পায়নি। আমি ধরে নিয়েছি এবার শান্তকে বিক্রি করতে পারবো না!

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মকলেছুর রহমান জানান, গরু মোটাতাজাকরণে প্রতিবছরই আমরা খামারিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সবমিলে এখন ২৪ হাজার পশু এই উপজেলায় আছে। তবে করোনায় বিক্রি অনেক কম। কুরবানির কয়েক সপ্তাহ থেকেই এলাকায় উপযুক্ত ক্রেতা না আসায় খামারিরা হতাশায় পড়েছে। সিংহভাগ খামারি কিছু পশু বিক্রি করেছে। আর বাকি সব পশু খামারে আছে।

তিনি আরো জানান, ডিসি অফিসের নির্দেশ মতো অনলাইনে গবাদিপশুর বিক্রির বিষয়ে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে অনলাইনে বিক্রি তেমন সাড়া ফেলেনি!