সিরাজগঞ্জে যমুনায় দুই কোটি টাকার সম্পদ হারিয়ে তালুকদার পরিবার এখন নিঃস্ব
- প্রকাশিত সময় ০৩:৪৫:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
- / 168
আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জঃ আর মাত্র একদিন পরেই ঈদুল আযহা। ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু এবারের সেই উৎসবের নেই কোন আমেজ। এদিকে দেশে করোনা মহামারি অপর দিকে বন্যা। দুইয়ে মিলে একাকার মানুষের জীবন।
সর্বনাশা করোনা মহামারিরতে মানুষ যখন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার জন্য সর্বচেষ্টা করছে ঠিক সেই সময়ে দেশের চারি দিক থেকে বন্যঅয় প্লাবিত মানুষের জীবন সংসার। তাই এবারের ঈদুল আযহা মানুষের মাঝে দিতে পারছেনা আনন্দ।
তেমনি একটি বন্যাকবলিত পরিবার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের তালুকদার পরিবার। তিন মিনিটে যে পরিবার নিঃস্ব হয়েছে যমুনার করাল গ্রাসে সেই তালুকদার পরিবারের সদস্যরা আজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে ঝুপড়ীতে অবস্থান করছে। প্রায় দুই কোটি টাকার সহায় সম্বল হারিয়ে এই পরিবার এখন নিঃস্ব।
জানাগেছে, গত ২৮ জুলাই শুক্রবার দুপুরে আকস্মিক ভাবে সিরাজগঞ্জের সিমলা পাঁচ ঠাকুরী এলাকায় দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙ্গন। মুহুর্তের মধ্যে বিলিন হয় নদী তীরবর্তি পাঁচঠাকুরী গ্রামে সবচেয়ে বড় বাড়ি খ্যাত তালুকদার পরিবারটি। এই পরিবারের বড় সন্তান হারুন অর রশিদ তালুকদার। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান কিভাবে নদীগর্ভে চলেগেলো কিভাবে তাদের বাড়ি ঘর।
তিনি জানান, আমি হারুন-অর রশিদ তালুকদার, ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম তালুকদার, আকতার হোসেন তালুকদার ও সাইদুল ইসলাম তালুকদারদের পরিবার নিয়ে আমরা এক সাথে বসবাস করতাম। তিন বিঘা জমির উপর তৈরী করা বাড়িতে ছিলো একটি টিনসেড ও ১১টি অর্ধপাকা ঘর। ছিল তিন হাজার মুরগির বৃহৎ খামার। বাড়ির সামনে আরও চার বিঘা জমিও ছিল। বাড়ির গাছপালা, আসবাবপত্র সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা সম্পদের মালিক ছিলাম আমরা তালুকদার পরিবার। কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করেই যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাড়িঘর-জমিজমা সবকিছুই বিলীন হয়ে আজ সব হারিয়ে নিঃস্ব।
তিনি আরও জানান, আমি তালুকদার পরিবারের বড় ছেলে হারুন-অর রশিদ তালুকদার। এখনও বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ওয়ার্কশপ সহকারী পদে কর্মরত, ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম ও আকতার হোসেন দুজনেই মুরগির খামার ব্যবসায়ী। অপর ভাই সাইদুল ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।
শুক্রবার হঠাৎ করেই সিমলা স্পারটি দেবে যায়। শুরু হয় তীব্র নদীভাঙন। কেউ বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক ভেঙে পড়তে থাকে বসতভিটা। আমাদের ১১টি অর্ধপাকা ও একটি পুরো পাকা ঘর মুহূর্তেই নদীতে চলে যায়। এমন ভাঙন আমরা কখনো দেখিনি। ভাঙনের গতি এতটাই তীব্র ছিল যে, কোনো আসবাবপত্র আমরা সরাতে পারিনি। আমার বড়মার কাছে দুই ভরি স্বর্ণের গয়না, দেড় লাখ টাকা নগদ ছিল-সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে কোনোমতে বৃদ্ধা বড়মাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। বাবাকে প্রতিবেশিরা উদ্ধার করে ডাঙ্গায় এনেছে। ঘরের ভেতরে থাকা কিছুই আনতে পারিনি।
ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম তালুকদারের মুরগি খামারের ব্যবসার নগদ প্রায় চার লাখ টাকা ও ঘরে ডিম ছিলো সাড়ে তিন হাজার। সমস্ত সম্পদের মায়া ত্যাগ করে শুধু জীবন নিয়ে ফিরেছি। সম্পদের দিকে ফিরে তাকানোর কোনো সময় ছিল না। বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। আমরা সবাইকে সাহায্যে করতাম আজ আমরাই পথের ফকিরে পরিণত হয়েছি।তিনি অবশ্য এমন ভাঙ্গনের জন্য স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, আগে থেকেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিলে এই ভাঙন দেখা দিতো না, আমরাও নিঃস্ব হতাম না।
চলমান বন্যায় সর্বসান্ত হওয়া তালুকদার পরিবারে এবারে কোরবানীর ঈদ উৎসব কেমন কাটবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন কিসের উৎসব, কিসের ঈদ। যেখানে পেটে ভাত নেই, পরনের কাপড় নেই, থাকার জায়গা নেই, রাতে ঘুমানোর নিশ্চয়তা নাই সেখানে আবার ঈদ। এর চেয়ে মরন ভালো ছিলো।
তার দাবি সরকারের নিকট অনুরোধ আমার মতো কোন পরিবারের যেন এমন দশা না হয় সেজন্য এই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ দেয়া হোক। সেই সাথে বাঁধ এলাকা থেকে যেন কোন প্রকার বালু উত্তোলন না করা হয় সেদিকটা দেখাসহ সম্ভব হলে আমরা যারা ভাঙ্গনের কবলে পরে নিঃস্ব হয়েছি তাদের পুনর্বাসন করা হোক। তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিু কামনা করেন।