পাবনায় পাটের অধিক ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি
- প্রকাশিত সময় ০৩:৩১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০
- / 200
আবুল কাশেম, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধিঃ কৃষি প্রধান এ দেশে এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে কৃষক দুরাবস্থার সম্মুখীন হলেও চলতি মৌসুমে পাবনার সোনালী আঁশের দিন ফিরে আসতে শুরু করেছে।
এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দিকে পাটের বাজার দর নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল কৃষকরা। পাট হাটে উঠতেই সে চিন্তা দুর করে সোনার হাসিতে হাসতে শুরু করেছে কৃষক পরিবার। তারা কিছু দিনের ব্যাবধানে বাজারে ভাল পাট ২৪শত থেকে ২৫শত টাকায় বিক্রয় করছেন। পাটের এমন সু-দিন আসবে বলে কখনও মনে করেনি তারা।
দেশের সরকারি পাট মিলগুলো বন্ধ ঘোষনার সংবাদে তাদের চিন্তা বেড়ে যায় আবাদকৃত পাট নিয়ে। পাবনার প্রায় ৩৫ জন ব্যবসায়ী ৩৩ কোটি টাকা সরকারি মিলগুলোর কাছে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়ে। সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আবার পাটের সু-দিনের যুগে বাংলাদেশ। অনেকের ধারনা সরকারি মিল বন্ধ হওয়ায় অনেক বে-সরকারি মিলে পাটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক কৃষাণীরা। অন্য বছরের তুলনায় এবারে পাটের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুঁটেছে হাঁসি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সময় মত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিচ্ছে কৃষকেরা। চাষীরা পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল, ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আশঁ ছড়ানো, এবং হাটে বাজারে তা বিক্রি করছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পাট থেকে আশঁ ছড়ানোর কাজ চলছে।
সাগরকান্দি গ্রামের খলিলপুর গ্রামের পাট চাষী সামছুল আলম বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলন ভাল হয়েছে। পাটের বর্তমান বাজারে কৃষকের লাভ হচ্ছে তবে শ্রমিকের মুল্য বেশি না হলে বেশি পরিমান লাভের মুখ দেখত কৃষকেরা।
সুজানগরের আজিবর ও সাঁথিয়ার বাবু শেখ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পাটের ফলন কম হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে।
বুধবার স্থানীয় পৌরহাটে গিয়ে দেখাযায় ভালমানের পাট ২৪’শ টাকা থেকে ২৫’শ টাকা এবং নিম্নমানের পাট ২২’শ থেকে ২৩’শ টাকা মণ দরে বিক্রয় হচ্ছে। আর এবারে পাটের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আনার স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয় সুজানগর উপজেলায়। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৭শত হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়েছে এ উপজেলা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার দ্বিতীয় পাট উৎপাদনকারী উপজেলা সাঁথিয়ায়ও। এ উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার হেক্টর।
জেলার সাঁথিয়ার পাট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব হযরত আলী শেখ জানান, সরকারি মিলে পড়ে থাকা বকেয়া টাকা না পাওয়ায় এ বছর ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বাজারে পাটের দাম অনেক ভালো। কৃষকরা পাট বিক্রয় করে খুশি মনে বাড়ি ফিরছে। তবে বাজারে পাটের আমদানী খুবই কম।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬শত হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ১০মন করে পাট উৎপাদন হয়েছে।
পাবনা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক আজাহার আলী জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদের লক্ষ মাত্র ছিল ৪৪ হাজার ২শত ৫৪ হেক্টর। লক্ষমাত্রার চেয়েও এ জেলায় পাটের বেশি আবাদ হয়েছে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ কোটি ৭৮ লক্ষ ৮শত মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন পাট কাটার মৌসুমের পূর্ব থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা পাট পঁচাতে পেরেছে। সব মিল কারখানা পাট ক্রয় শুরু করায় কৃষকরা উৎপাদিত সোনালী আঁশের দাম পেয়ে লাভোবান হচ্ছে।