নোয়াখালীর কবিরহাটে ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাইয়ের ধর্ষণে বিধবা নারী ৯ মাসের অন্তঃসত্বা
- প্রকাশিত সময় ১১:৪৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 103
নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীতে চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাইয়ের ধর্ষণে বিধবা নারী ৯ মাসের অন্ত্বঃসত্ত্বা, অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয় চেয়ে আর্তনাদ করছেন ঐ নারী। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃস্টি হয়েছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।
গৃহপরিচারিকার উপর এমন নির্যাতন মানতে পারছেন না কেউ। এলাকা ছাড়া করতে ঐ নারীর বাড়ীতে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ছেলে আল আমিন। নিজেদের কোন অভিভাবক না থানায় আতংকে দিন কাটছে পরিবারটির, মানসিক ভাবেও ভেঙ্গে পড়েন ধর্ষিতা নারী। ধর্ষক সবুজের ভাইদের ভয়ে পালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বিধবা নারী।
এলাকার কিছু প্রভাবশালী এবং একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গুম করা হয় ঐ নারিকে। ভুক্তভোগির সন্তানের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ঐ নারিকে উদ্ধার করে কবিরহাট থানা পুলিশ, গুমের সাথে জড়িত সন্ধেহে ধর্ষণ কারীর আত্বীয় সেলিম নামের একজনকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।
ঘটনাটি ঘটে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরত্তমপুর ইউনিয়নের যাদেবপুর গ্রামে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, একই গ্রামের মজিবুল হকের পুত্র সবুজ ১ বছর আগে আবুধাবী থেকে ফিরে এসে বিয়ে করেন, বিয়ে করার কিছুদিন পর তার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করার জন্য ভুক্তভোগিকে নিয়োগ দেন, কিছুদিন পর একদিন রাতে ঐ নারীকে বিয়ের প্রলোভনে বাগানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সবুজ। এভাবে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে হত্যার হুমকি দেয়া হলে প্রাণের ভয়ে মুখ খোলেনি ভুক্তভোগি নারী।
এরই মধ্যে গৃহপরিচারিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, এ খবর শুনে গৃহপরিচারিকাকে সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপসৃষ্টি করা হয়, এতে সে রাজি না হওয়ায় নিজেকে বাঁচাতে গত ৪ মাস আগে আবুধাবীতে চলে যান সবুজ। বর্তমানে ঐ নারী ৯ মাসের গর্ভবতী।
এলাকায় জানা জানি হলে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃস্টি হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর ঐ নারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করা হয়। ঐ নারী জানান সে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নিজ বাবার বাড়ীতে গেলে সেখান থেকে তাকে ফুষলিয়ে সন্তান নষ্ট করার জন্য একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৯ মাসের অনাগত সন্তান নষ্ট করা সম্ভব নয় জানতে পেরে ঐ মহিলাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান যাদেবপুর গ্রামের মোমিন সর্দারের পৃত্র গিয়াস উদ্দিন ও একই এলাকার বেচু মিয়ার পুত্র নুর ইসলামসহ অজ্ঞাত কয়েকজন। সহযোগি হিসেবে আরো জড়িত থাকেন গিয়াস উদ্দিনের ভাই সেলিম।
এদিকে বাড়ীতে মাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে এলাকাবাসীর পরামর্শে কবিরহাট থানায় মৌখিক অভিযোগ জানালে গুমের ঘটনার সাথে জড়িত সন্ধেহে সেলিমকে আটক করা হয়, এবং নারীকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি মিমাংশার আস্বাস দিয়ে চেয়ারম্যানের জিম্মায় নারিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং সেলিমকে ছেড়ে দেয় বলে বিশেষ সূত্রে জানা যায়।
এলাকাবাসী বলেন, সবুজেরা খুব প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভাই মোস্তফা এবং স্বপন মিলে ভাই সবুজকে বাঁচাতে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। ঐ নারীর কোন আত্বীয় স্বজন না থাকায় বর্তমানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন বলেও জানান তারা।
এলাকায় প্রভাবশালী বলে ভয়ে কেউ মুখ খোলেনা বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী। নির্যাতিতা নারী এবং এলাকাবাসী এই রকম ন্যাক্কার জনক ঘটনার উপযুক্ত বিচার চান।
প্রবাসী সবুজের চাচা বলেন, আমি আজকে বিষয়টি শুনেছি চেয়ারম্যানের সাথে বসে আমরা মিমাংশা করবো।
নরত্তমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিরাজের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন “আমার চাচাতো ভাই হলেও অপরাধীর কোন ছাড় দেয়া হবেনা, উপযুক্ত বিচার হবে। বিষয়টি আমি শুনেছি, ওসির সাথে আমার কথা হয়েছে, আমরা বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা করছি।
কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাসানের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ নারীর ছেলে আল আমিনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সেলিম নামের এক জনকে থানায় ডেকে এনেছি এবং এলাকার মেম্বারকে ফোন দিলে কিছুক্ষণ পর ঐ নারী এসে বলেন, কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই, তাই পরে ঐ নারী থানা থেকে বের হয়ে চলে যান। এবং সেলিমও চলে যায়। মহিলাটি ধর্ষিত হয়েছে কিংবা তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এসব বিষয়ে ঐ নারী কোন অভিযোগ করেনি আমাদেরকে, অভিযোগ না করলে আমরা কিভাবে কাজ করবো বলেন”?