পাবনায় কমতে শুরু করেছে পেয়াঁজের দাম
- প্রকাশিত সময় ০৯:৪১:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 112
পাবনা প্রতিনিধি : চাহিদার এক চতুর্থাংশ পেয়াঁজ উৎপাদন হয় পাবনায়। পাবনার সুজানগর, সাথিঁয়া এবং বেড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পেয়াঁজ উৎপাদন হয়। হঠাৎ করে পেয়াঁজের দাম বাড়লেও আবার কমতে শুরু করেছে পেয়াঁজের দাম।
পাবনার বিভিন্ন এলাকায় হাটবাজারে খোজ নিয়ে জানা গেছে- গত সপ্তাহের তুলনায় শুক্রবার জেলার হাটগুলোতে পেয়াঁজ কমদামে কেনাবেচা হচ্ছে। শুক্রবার জেলার হাজির হাট, দুবলিয়া হাট, নাজিরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা গেছে পেঁয়াজের দাম গত হাটের চেয়ে মন প্রতি ৫-৭ শত টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে এসব হাটে পেয়াঁজের দাম ছিল গড়ে ৩ হাজার পাঁচ শত টাকা মন শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ২৭/২৮শত টাকা মন।
দেশের সবচেয়ে বড় পেয়াজের হাট পাবনার সুজানগর হাট। দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এ উপজেলার এই হাটেই গেল বুধবার প্রতিমন পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৩ শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকায় খুচরা বাজারে যার প্রতিকেজি মূল্য ১শ’ টাকা। শুক্রবার এই বাজারে দাম কমেছে মন প্রতি ৫-৭শ টাকা।
সুজানগর উপজেলা দুর্গাপুর গ্রামের পেয়াজঁ আবাদকারী রেজাউল করিম জানান- সুজানগর সবচেয়ে বেশী পেয়াঁজ উৎপাদন হয় এখান স্বচ্ছল কৃষকের অধিকাংশ পেয়াঁজ চাতাল করে রাখে। এর মধ্যে কিছু পেয়াঁজ মুরকাটা (বীজ বানানোর জন্য) রাখা হয় অবশিষ্ট পেয়াঁজ ঐ সময় বিক্রি করা হয়।
সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান- গত হাটের চেয়ে আজকের (শুক্রবার) হাটে পেয়াঁজের দাম ৫/৭ শত টাকা কম।
সুজানগর বাজারের ব্যবসায়ী গৌতমকুন্ডু জানান- গত বুধবার সুজানগর হাটে পেয়াঁজের দাম ছিল ৩৩/৩৫ শ টাকা করে আজ (শুক্রবার) মনপ্রতি ৫/৭ শত টাকা কমে পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে।
হাজির হাটের আব্দুর রাজ্জাক জানান- গত মঙ্গলবার এই হাটের যে দরে পেয়াঁজ বিক্রি হয়েছে আজকের (শুক্রবার) হাটে তার চেয়ে প্রতিমনে ৫/৭ শ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাবনা জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, পাবনা জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া, আতাইকুলা ও শহরের বেশ কিছু বড় বড় কৃষক এবং মজুদদার তাদের নিজেদের বাড়িতে অথবা ব্যক্তিগত গুদামে শত শত মণ পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে।
‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে’ এ রকম খবর প্রচারিত হওয়ার ঐ দিন থেকে এই চক্র তাদের মজুদকৃত পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করতে বাজারে ছাড়ছে না।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান- আমরা প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করছি। পাবনার সুজানগর, সাথিঁয়া এবং বেড়া উপজেলার বেশ কিছু মজুদদার, আড়ৎদার এবং কৃষকের ঘরে পেয়াঁজ আছে।
গতবার পেয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় তারা মজুদ রেখেছে। আবার মানুষের মধ্যে দাম বাড়ার আশংকায় পেয়াজ কিনে ঘরে রাখার প্রবনতা বাড়ছে। ভারত থেকে পেয়াজ আমদানি হচ্ছে না এরকম সংবাদ সহ বিভিন্ন কারণে পেয়াজের দাম বাড়ছে।
তবে গত কয়েকদিনের চেয়ে বাজারে পেয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে । এ ছাড়া পাবনার সুজানগরে আড়ৎদার, মজুদদার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে ।
পাবনা উপজেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলছেন, সরবরাহকারী নয়, বরং রাজধানীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই পেঁয়াজের বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা। ভারতে পিয়াজ রপ্তানীর সংবাদে কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দেয়।
সুজানগরে অনেক কৃষক এখন চাতাল করে পেয়াজ মজুদ রাখছে। জেলা প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকারের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। এরপরেও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে কারো কারসাজি থাকলে তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত মৌসুমে আকাশচুম্বী দামের কারণে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছে এখানকার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়ায় হয়েছে বাম্পার ফলন।
দেশে বাৎসরিক ২৪ লক্ষ মেট্রিকটন পেয়াঁজ প্রয়োজন হয়। চলতি মৌসুমে পাবনায় সাড়ে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন।