পাবনায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- প্রকাশিত সময় ১১:৩০:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / 115
স্টাফ রিপোর্টার :
আসুন “ইছামতি বাঁচাই- পাবনা বাঁচাই” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পাবনা জেলা শাখার আয়োজনে পাবনায় পালিত হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস।
২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বেলা ১২ টায় পাবনা পিসিসি এস মিলনায়তনে (বাপা) পাবনা শাখার সহ-সভাপতি এ্যাড. তোসলিম হাসান সুমনের সভাপতিত্বে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সূচনা সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পূর্ণিমা ইসলাম, সেলিম নাজির স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কাউট নেত্রী হাসিনা আক্তার রোজী এবং দেবোত্তর কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন (বাপা) পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট আব্দুল হামিদ খান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাধন সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মনিরা পারভীন, ইমাম গাজ্জালী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া সুলতানা, পাইওনিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জেবুন্নেসা ববিন, বাপার সদস্য এটি ফজলুল করিম, সাংবাদিক সাহানুর রহমান প্রমুখ। আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান বলেন, পাবনার সীমান্তে পদ্মা নদী, মাঝ খান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ইছামতি নদী। ভৌগলিক অবস্থার কারণেই পাবনা বাংলাদেশের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ জেলা হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনার অভাবের কারণে, পাবনা বাসীর অদূরদর্শীতার কারণে এটি এখনও সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, আমার বাড়ি পদ্মা পার হয়ে গড়াই নদীর পাশে, কিন্তু পূর্বে এখানে ছিলনা। আমার বাবা চাকরি থেকে অবসরের পর নদীর তীরে বাস করবেন বলে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে গড়াই নদীর তীরে জায়গা কিনে বাড়ি করেন। নদী এলাকায় বসবাসের একটি আনন্দ আছে।
তিনি আরও বলেন, পাবনার ইছামতিকে দখলদার উচ্ছেদ করে একটি প্রবাহমান নদীতে পরিণত করা সম্ভব। সেজন্য প্রশাসন,সর্বোপরি পাবনার জনগণকে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি তার দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন, গাছকে ভালোবাসতে হবে। গাছের সাথে কাঁটা লাগিয়ে সাইনবোর্ড দেয়া যাবেনা, এতে গাছের খুব কষ্টহয়- গাছ মারা যায়।
পাবনায় নদী ও পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনরত বাপার কর্মীদের তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করে তার বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে পাবনার বিশিষ্ট সমাজসেবক এ্যাড. তোসলিম হাসান সুমন বলেন, এই ইছামতি নদী একসময় ছিল পাবনার মানুষের বিনোদনের অন্যতম স্থান। তিনি তার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় আমরা দল বেঁধে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি ব্রীজের ওপর থেকে লাফ দিয়ে। স্রোতের সাথে ভাসতে ভাসতে মাঝ শহরে আরেক ব্রীজে উঠে পড়েছি, সে এক নির্মল আনন্দ বটে! তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, কোথায় হারিয়ে গেল সেই ইছামতি নদী, কোথায় হারিয়ে গেল আমাদের সেই প্রাণ চঞ্চলতা। তখনকার দিনে সারাদিনই অসংখ্য তরুণ-যুবকদের ব্রীজের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আনন্দ উপভোগ ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন, পাবনায় যদি একজন সৎ-দক্ষ-বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মেয়র হন, যার মধ্যে দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকবে, পাবনার ওপর যার দরদ থাকবে, তিনি পাবনাকে সাজাতে পারবেন। পাবনাকে একটি সমৃদ্ধ অত্যাধুনিক শহরে পরিণত করতে পারবেন।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আব্দুল হামিদ খান বলেন, এক সময়ের পাবনার ঐতিহ্য ইছামতিকে রক্ষার জন্য বাপা কর্মীরাই প্রথম আন্দোলন শুরু করে। বাপার এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন অনেকে এগিয়ে এসেছেন ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে, আমরা তাদেরকেও স্বাগত জানাই।
দুই দশকের আন্দোলনে ইছামতি আজ দখল মুক্ত হতে শুরু করেছে। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ইছামতি পাড়ে যত শক্তিশালী ব্যক্তিই থাকুক না কেন, তারা নেপথ্যে যতই কলকাঠি নাড়ুক না কেন দখলদার উচ্ছেদ হবেই হবে। এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ইছামতির দু’পাড়ে ওয়াক ওয়ে তৈরি হবে। তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই ইছামতি নদী আবার প্রবাহমান নদী হবে, নদীতে স্বচ্ছ টলমলে পানি থাকবে। আবার ইছামতি নদীতে নৌকা ভাসবে। নদীর দুই তীরে দাঁড়িয়ে পাবনার মানুষ আবার বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নেবে।
যে ইছামতি আজ পাবনার পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে, সেই ইছামতিই আবার পাবনার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে।
পাবনা হবে একটি পরিচ্ছন্ন শহর, অবশ্য এ ব্যাপারে পাবনার জন প্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি দায় বদ্ধতার প্রমাণ দিতে হবে। পাবনার পরিবেশসহ সার্বিক উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান বাপা পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ খান।