নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের সামনা সামনি বিতর্ক অনুষ্ঠান
- প্রকাশিত সময় ১০:০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০
- / 122
আমেরিকার নির্বাচন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনাঃ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগামী ৩ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার। এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষ।
আজ সমগ্র বিশ্বকে শাসন করছে যে রাষ্ট্রটি তাদের নির্বাচন নিয়ে মানুষের কৌতুহলের অন্ত নেই। আগামী নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে ?
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন। এ নিয়ে বিশ্বের মানুষের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
ইতোমধ্যে আমেরিকার নির্বাচনী রীতি অনুযায়ী গেল সপ্তাহের মঙ্গলবারে রিপাবলিকান মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট দল মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে সামনা সামনি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের কেজ ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি এই বিতর্ক অনুষ্টানের আয়োজন করে।
টিভিতে প্রচারিত এই বিতর্ক অনুষ্ঠান আমেরিকাবাসীসহ বিশ্বের মানুষ দেখেছে। প্রথম পর্যায়ের এই হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক অনুষ্টানে পারস্পরিক ব্যক্তিগত আক্রমনই ছিল মূখ্য বিষয়।
তবে বিতর্কে করোনা পরিস্থিতি এবং গেল ১৫ বছর ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগটি উঠে এসেছে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে অশ্বীকার করেছে।
বিতর্কে উভয় প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে পরিধেয় পোষাক এবং স্মার্টনেস নিয়েও কথা বলেছে। এ বিতর্কে কার ফারফরমেন্স ভাল ছিল তা নিয়ে উভয় প্রার্থী সমর্থদের মধ্যে বিজয়ী ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
গেল শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফাস্টলেডি ম্যালেনিয়ার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পর তারা এখন ওয়াশিংটনের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
করোনা আক্রান্ত হয়েছে হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা হোপ হিক্সসহ বেশ কিছু কর্মকর্তা। এ অবস্থায় রিপাবলিকান দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করলেও জো বাইডেন বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তারা ঠিকই নির্বাচনী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
আগামী ৩রা নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও আমেরিকার সংবিধানে নির্বাচন পিছানোর কোন কথা উল্লেখ নেই।
তবে আমেরিকার দুই কক্ষ বিশিষ্ঠ আইনসভার হাউজ অভ রেপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটদের আধিক্য রয়েছে। সেখানে নির্বাচন পিছানোর বিষয়টি তোলা হলে ভোটাভুটিতে তা নাকচ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে উভয় দলের গঠনতন্ত্রে প্রার্থী বদলের সুযোগ রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনা থেকে সম্পন্ন সুস্থ হয়ে উঠতে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহের সময় লাগতে পারে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন ছাড়া আর কোন বিকল্প রাস্তা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে একটি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন।
আমেরিকায় রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট ছাড়াও লিবার্টিরিয়ান, গ্রীণ, ইন্ডিপেনডেন্ট নামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সেই সব দলের পক্ষ থেকে প্রার্থীও দিয়ে থাকে। কিন্ত সেইসব দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারে না বলে তাদের প্রচার থাকে অনেক পিছনে।
১৯৬০ সাল থেকে নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে সামনা সামনি বিতর্কের একটি রেওয়াজ চলে আসছে। শুরু হওয়া প্রথম নির্বাচনি বিতর্কে রিপাবলিকান থেকে নিক্সন এবং ডেমোক্র্যাট থেকে জনএফ কেনেডি অংশ নেয়। বিতর্কের এই অনুষ্ঠানগুলি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় গুলি আয়োজন করে থাকে। বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন সংস্থাা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে ভোটারদের মাঝে সমীক্ষা চালানো শুরু করে। এ সব সমীক্ষার রিপোর্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্যি হয়। তবে আমেরিকায় প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা দ্রুতই উঠানামা করে।
পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি অন্য দেশের মত নয়। সর্বাধিক ভোট পাইলেই প্রার্থী বিজয়ী হবে এমন কথা নয়। প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে অবশ্যই ইলেক্টরিয়াল ৫৩৮ টি ভোটের মধ্যে ২৭০ টি পেতে হবে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারী ক্লিনটন সর্বাধিক ভোট পেয়ে শুধুমাত্র ইলেক্টরিয়াল ভোটে পিছিয়ে থাকার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়।
এক সময় কৃষি নির্ভর আমেরিকাবাসী সপ্তাহের শনিবারে মাঠের ফসল কাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। রবিবারে প্রার্থনার দিন বুধবারে গিয়ে তারা হাট বাজারে গিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা করতো। সোমবার এবং মঙ্গলবারে তুলনামূলক ভাবে তাদের উপর কাজের চাপ থাকতো কম। এ ছাড়াও নভেম্বরে গিয়ে তারা জমিন থেকে ঘরে ফসল তুলে আনতো। মাঠে আর কাজ থাকতো না। ফলে কৃষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ বিষয়টির কথা ভেবেই আইনপ্রণেতারা ৩রা নভেম্বর সোমবার অথবা মঙ্গলবারে নির্বাচন এবং পরবর্তী বছর জানুয়ারির ২০ তারিখে ক্ষমতা হস্তান্তর করে থাকে। ক্ষমতা হস্তান্তর উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল হিলের সামনের চত্বরে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।