স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সুতিকাগার পাবনার ‘স্বাধীনতা চত্ত্বর’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ উদ্বোধন করবেন
- প্রকাশিত সময় ০৯:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
- / 101
স্টাফ রিপোর্টারঃ ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পাবনা জেলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আপামর জনতার সাহসি ভুমিকা চিরস্মরণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনার সুর্য সন্তানদের কির্তি অম্লান।
এ ছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে পাবনার ছাত্র যুবক ও শ্রমিকদের অনন্য অবদান। তারই সুতিকাগার ছিল পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দান। উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে এই টাউন হল প্রতিষ্ঠা হয়।
ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে পাবনা টাউন হল। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই টাউন হল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বীনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, শেখ হাসিনা প্রমুখ নেতা ভাষণ দিয়েছেন এই ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানের জনসভায়।
১৯০৮ সালে এই টাউন হল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়া শিল্পী আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন।
পরবর্তিতে পাবনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটিকে মুজিব বাহিনীর সংগঠক বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেন। সময়ের প্রয়োজনে এই টাউন হলকে আরো আধুনিকায়নের দাবী উঠে।\
বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনার নতুন প্রজন্ম পাবনা টাউন হলকে আরও আধুনিয়ন করে ‘স্বাধীনতা চত্ত্বর’ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। যার ফলশ্রুতিতে পাবনা পৌরসভার সহায়তায় স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির নামে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের অর্থায়নে এটি নির্মান করা হয়।
স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে সবার অংশ গ্রহণে বৃহত্তর পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিবাহিনী এবং মুুিজব বাহিনী প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুলের স্মরনে পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হলের মুক্তমঞ্চের নামকরন করা হয় ‘স্বাধীনতা চত্বর’।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর পাবনা অঞ্চলের অন্যতম সদস্য ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ফলক উন্মোচন এবং এ চত্বরের নির্মান কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে স্বাধীনতা চত্ত্বরের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়।
এটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সকাল সাড়ে
১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরের শুভ উদ্বোধন করবেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, আধুনিয়কয়নের পর এটি হল উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা চত্ত্বর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২টি উক্তিসহ একটি বিশাল মুর্যাল। ইট পাথরে খোদাই করা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন, ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠর ছবি, মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পনের সেই ঐতিহাসিক মুহুর্তকেও ধরে রাখা হয়েছে এখানে।
স্বাধীনতা চত্ত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু‘টি গ্রীণ রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত ১১৭ ফুট। যার তিন দিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারী রয়েছে।
মাঠের উত্তরপুর্ব কনার্রে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কণার্রে ছোট একটি গেট রয়েছে। এ ছাড়া সর্বপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন সবুজ ঘাস।
পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ছাত্র মাশফিক মাহবুব বলেন, পাবনা টাউন হলআগে ছিল জরাজীর্ন ভগ্নদশায়। যারা এটিকে আধুনিকায়ন করছেন তারা মুক্তিযুদ্ধকে নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
পাবনা নাগরিক সমাজের সভাপতি আব্দুল মতীন খান সময়ের প্রয়োজনে এটি আধুনিকায়ন জরুরী হয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতা চত্ত্বর আরো বড় পরিসরে পাবনার মানুষকে দেশের মধ্যে পরিচিত করবে।
পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি‘র সিনিয়র সহসভাপতি মো. আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি বলেন, স্বাধীনতা চত্ত্বরের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।
পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার মানুষ সর্বপ্রথম পাকহানাদারকে প্রতিহত করে।
তাই স্বাধীনতা চত্বর পাবনাকে নতুন মাত্রায় পৌছে দেবে। পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু বলেন, স্বাধীনতা চত্ত্বর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মর পাবনার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে পড়বে।
স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুচনা লগ্নেই সারা দেশের মধ্যে পাবনা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়।
এখানেই এ জেলার প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনা লালন করেই এ চত্বরে নির্মান শুরু করা হয় একটি অত্যাধুনিক বিশাল মঞ্চ।
অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু আরও বলেন, সরকারের সহায়তায় ছাড়াই স্থানীয় উদ্যোগে এত বড় একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন সমাজে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এতে করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা জন্ম নেবে। গতকাল শনিবার স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু স্বাধীনতা চত্বরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে স্বাধনিতা চত্বর পরিদর্শন করেন।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার মিলি, পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, পাবনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি‘র সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা যুবলীগ আহবায়ক মো. আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শিবলী সাদিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।