ক্রমাগত লোকসানে বন্ধ হতে যাচ্ছে পাবনা সুগার মিল
- প্রকাশিত সময় ১১:৩৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর ২০২০
- / 99
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ ক্রমাগত লোকসানের কারণে বন্ধ হতে যাচ্ছে পাবনা সুগার মিল। জন্মলগ্ন থেকেই ঋণ ও ঋনের সুদসহ লোকসানের বোঝা নিয়ে মিলটি এতোদিন চালু ছিল।
চার শত কোটি টাকারও বেশি লোকসানে পড়ায় চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ইতোমধ্যে মিলটি বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।
উৎপাদন ঘাটতি ও উৎপাদন খরচ অপেক্ষা বিক্রয়মূল্য কম থাকার কারণে ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও রয়েছে প্রতিষ্ঠাকালীন ঋণ ও ঋণের সুদের ভার।
পাবনা সুগার মিল এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন পাবনা সুগার মিল বন্ধের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের পর থেকে এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রনালয় চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
পাবনা সুগার মিল ছাড়াও বন্ধের তালিকায় কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ, রংপুর, শ্যামপুর ও পঞ্চগড়ের ৫টি মিলও রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মিল বন্ধ করা ঠোকাতে এবং চিনি শিল্প রায় ৫ দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ চিনি শিল্প কর্পোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন সারা দেশে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার ৬টি মিল গেটে ফটক সভা, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
শ্রমিক কর্মচারী ফেড়ারেশন চলতি বছর আখ মাড়াই মৌসুমের তারিখ নির্ধারন না হওয়া পর্যন্ত দেশের কোন সুগার মিলে বয়লার স্লো ফায়ারিং করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।
বাংলাদেশ আখচাষী ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক ও পদক প্রাপ্ত ঈশ্বরদীর আখ চাষী শাজাহান আলী বাদশা জানান, মিল জোনে এ বছর ৫ হাজার ২ শত একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে।
পাবনা সুগার মিলে আগত মাড়াই মৌসুমে ৮০ হাজার মেঃ টন আখ মাড়াই করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এর বীপরিতে কৃষকদের ৪ কোটি টাকারও বেশী ঋণ দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ।
প্রায় ৫ হাজার কৃষক এ বছর ঈশ্বরদীতে তাদের জমিতে আখ চাষ করেছেন। আবাদকৃত আখ কাটারও উপযোগী হয়েছে। এখন যদি মিল বন্ধ ঘোষনা করা হয় তাহলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
১৯৯২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজায় ৬০ একর জমির উপর পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ‘পাবনা সুগার মিল’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়।
বাণিজ্যিকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে। চালুর পর থেকেই উৎপাদন ঘাটতি ও লোকসানের কবলে পড়ে এই সুগার মিল।
আখের স্বল্পতা, আখ হতে চিনি আহরণের হার কম থাকা, মাথাভারী প্রশাসন, সুদসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ, উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত থাকাসহ নানা সংকটে পাবনা চিনিকলের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার শত কোটি টাকারও বেশী।
পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কাস ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল জানান, বিগত ৫/৬ মাস এই মিলের শ্রমিক কর্মচারীর বেতন দেওয়া হয়নি।
প্রায় ৬৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন বাবদ মিলের কাছে ৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ অবস্থায় মিল বন্ধের খবরে সকলে হতাশাগ্রস্থ।
বাংলাদেশ চিনি শিল্প কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন মিল বন্ধ ঠোকাতে গত ১৬ নভেম্বর ফেডারেশনের যৌথসভায় আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পাবনা সুগার মিলের এমডি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি তবে মৌখিক ভাবে শুনেছি পাবনা সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াইয়ের নির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি।
বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনত্ কুমার সাহা সোমবার রাতে বলেন, গত অর্থ বছরে ১৫টি সরকারি সুগার মিলে ৯৩৭ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এভাবে প্রতি বছরই হাজার কোটি টাকার মতো লোকসান হয়েছে।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে পাবনা সুগার মিলসহ ছয়টি সুগার মিল বন্ধে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে করপোরেশন থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলে গেজেট করার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
আরও পড়ুনঃ বহুমুখী সংকটে নাটোর লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস