পাবনা ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে
- প্রকাশিত সময় ১১:৪৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ জানুয়ারী ২০২১
- / 165
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ঈশ্বরদীর পদ্মা নদী তীরবর্তি লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে চরাঞ্চলের আবাদি জমিগুলো।
এর আগে পাকশী ও সাঁড়া ইউনিয়নে বালু উত্তোলন বন্ধে কয়েক দফা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা উপক্ষা করে নদী ও চর থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি দুষ্টচক্র।
লক্ষীকুন্ডার বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন। ক্ষমতার দাপটে দীর্ঘদিন এই এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে গত ৩১ শে ডিসেম্বর উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় তীব্র সমালোচনাও হয়েছে।
সরেজমিনে শনিবার (২ জানুয়ারি) উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের নবীনগর হতে কামালপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ৬-৭ টি স্থানে ভেক্যু দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা চলছে। সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন ও পরিবহন হচ্ছে দাদাপুর ও বিলকেদার গ্রামের চরাঞ্চল থেকে। বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে দিনমজুর। বিক্রি ও ট্রাকলোডের কাজ করছে কর্মচারী। মূলহোতারা ধারে কাছে নেই।
কারা ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে এ বিষয়ে শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করলে তরা বলেন আমরা চিনিনা এবং জানিনা। দিনশেষে কর্মচারীর কাছ থেকে হাজিরা পাই। বিক্রির কাজে নিয়োজিত লোককে জিজ্ঞেস করলে তিনি নাম না প্রকাশ করে বলেন, আমি বেতন পাই ও হিসেব-নিকেশ রাখি। কাদের হয়ে কাজ করছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে সটকে পড়েন। বালু তোলার ছবি নেয়ার সময় শ্রমিকরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।
লক্ষীকুন্ডায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু বহনকারী ট্রাক-ড্রাম ট্রাক। বালু বহনকারী ট্রাক-ড্রাম ট্রাকের কারণে লক্ষীকুন্ডার বেশীরভাগ রাস্তা ভেঙ্গে পড়েছে। এসব রাস্তায় এখন সাধারণ মানুষ, সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সা, সিএনজি ও মোটরকার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফের লক্ষীকুন্ডা নিজগ্রামের সকল রাস্তাতেই ছিল পীচঢালা পাকা সড়ক।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতরা ক্ষমতাসীন। তাই এলাকার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব চলছে। বালু ব্যবসায়ী একটি দুষ্টচক্র বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করছে। এতে ফসলি জমিগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। নদী থেকে বালু খনন করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ায় রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এবিষয়ে লক্ষীকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সামনে ইউপি নির্বাচন। বালু কে বা কারা এর সাথে জড়িত তা আমি বলতে পারব না। তবে এর সাথে যেই জড়িত থাক এর দায় একান্তই তার নিজের। লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মমতাজ মহল বলেন, লক্ষীকুন্ডায় এর আগে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা সদর হতে লক্ষীকুন্ডার অবস্থান দূরে হওয়ায় অভিযানের পর আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়। এজন্য তিনি এলাকাবাসীদের প্রতিরোধ করার আহব্বান জানিয়ে বলেন, ৬-৭ মাস আগে লক্ষীকুন্ডার কয়েকটি এলাকাকে বালুমহল হিসেবে ঘোষণার জন্য ফাইল প্রস্তুত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। বালুমহাল অনুমোদনের সিদ্ধান্ত আসলে বৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য একসনা লীজ প্রদান করা হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গত ৩১ শে ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় লক্ষীকুন্ডায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উত্থাপিত ও তীব্র সমালোচনা হয়। এই সভায় চেয়ারম্যান আনিস শরীফও উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও সভায় বলেন, বালু উত্তেলনের একটি নীতিমালা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে। নীতিমালায় সব এলাকায় বালু উঠানোর নিয়ম নেই। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে সরকার রাজস্ব পাবে। জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে খুব শিগগিরই উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি সভাতে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত: গত ১৭ই ডিসেম্বর বিকেলে পাবনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের ইসলামপাড়া বালুমহলে অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর হতে এই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এই অভিযানের সময় ভেক্যু, ড্রেজার ও বালু পরিবহণের গাড়ি জব্দ করা হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বালুমহলে অভিযান পরিচালিত হলেও বালু সিন্ডিকিটের মুল হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
আরও পড়ুনঃ পাবনার ঈশ্বরদীতে বালুমহলে অভিযান মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে