ভিটামিন ‘এ’ শিশুদের অন্ধত্ব ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। …………আতিক সিদ্দিকী
- প্রকাশিত সময় ০৯:০৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুলাই ২০১৮
- / 134
সারাদেশে শুরু হচ্ছে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন। এ দিন ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী সকল শিশুকে ভিটামিন এ খাওয়ানো হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকলাপনা বিভাগের সকল মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক একযোগে দেশব্যাপি এই ক্যাম্পেইন করবে।
দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের পুরাতন প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮ টি করে ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার পরিকলাপনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ সহকারি ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও বাসস্ট্যান্ট, নৌপথ, রেলপথ, টোলপ্লাজা এমনকি বিমানবন্দর এবং সীমান্তবর্তী এলাকাতেও এই ক্যাম্পেইন করা হবে।
সারা দেশের মতো ১৪ জুলাই শনিবার একযোগে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন পৌরসভায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। রাজধানীসহ সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদিন তারা ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী সকল শিশুকে ১ টি করে নীল রঙর এবং ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী সকল শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াবেন।
এই ক্যাম্প চলবে বিরতিহীনভাবে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত। জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ের তদারকিদল নির্দিষ্ট চেকলিষ্ট মোতাবেক কর্মীদের কাজের সুপারভিশণ এবং মনিটরিং করবেন।
পূর্বে করা এ সব বয়সের তালিকাভূক্ত শিশুদের নীল রঙের ক্যাপসুলে ১ লাখ আই ইউ ( ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ) এবং লাল রঙের ক্যাপসুলে রয়েছে ২ লাখ আই ইউ ( ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ) ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল যা খাওয়ানো হবে তাদেরকে। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিটি সুপারভাইজারকে কমপক্ষে ৮টি কেন্দ্র পরিদর্শণ করে চেকলিষ্ট জমা দিতে হবে নিজ নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ডাঃ শহিদুল ইসলাম বলেছেন, শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও দৃষ্টিশক্তির জন্য ভিটামিন ‘এ’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ও শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখে। বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে থাকে ভিটামিন এ’।ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগসহ চোখের নানা রোগ এবং শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। রক্তস্বল্পতা এমনকি শিশু মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
সবুজ শাকসবজি, লাল ও হলুদ ফলমূলে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। এছাড়াও গরুর কলিজা, মুরগির কলিজা, মাছ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, দই, ডিম, বড় বড় মাছের তেল, ছোট মাছ, গাজর, পাকা আম, পাকা বেল, পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, কমলা, পাকা টমেটো, কলা, জাম, মিষ্টিকুমড়া, পালং শাক, লাল শাক, লাউ, বাঁধাকপি এবং গাঢ় সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
ভিটামিন এ’ এর অভাবে যে সব লক্ষণগুলো দেখা দেয় সে গুলোর মধ্যে রাতকানা রোগ অন্যতম। এছাড়াও চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায়, চুল রুক্ষ হয়ে যায়, চামড়া শুষ্ক হয়ে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে ত্বকে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়, অনেক সময় আঙ্গুলের নখ ভেঙে যায়, শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে মানবদেহে নানা রোগ দেখা দেয় প্রকটভাবে, বিশেষ করে ৯ মাস থেকে ৪ বৎসরের বাচ্চাদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে বেশী। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরাই বেশী করে এ রোগে আক্রান্ত হয়। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে রাতকানা যেটা আগেই বলা হয়েছে।এছাড়া ভিটামিন এ-এর অভাবে অনেক ক্ষেত্রে ঘা হয় এবং অস্থি-ঝিল্লির প্রদাহ ও ক্যারাটোম্যালেশিয়া রোগও হতে পারে।
বাংলাদেশের শতকরা ২ দশমিক ৭ শতাংশ গর্ভবতী মা ও ২ দশমিক ৪ শতাংশ স্তন্যদানকারী মায়েরা রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।ভোজ্য তেলগুলোর মধ্যে পাম তেল হচ্ছে বিটা-ক্যারোটিনের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উৎস।অপরিশোধিত পামতেলে ভিটামিন ‘এ’ গাজরের চেয়ে ১৫ গুণ এবং টমেটোর চেয়ে ৩০০ গুণ বেশী থাকে বলে এ ক্ষেত্রে যারা বিশেষজ্ঞ তারা জানিয়েছেন।
উদ্ভিদ উৎস হতে প্রাপ্ত ক্যারোটিনয়েডস থেকে প্রাপ্ত প্রাক ভিটামিন এ থেকে রেটিনল পেতে হলে যে সকল শাক সবজি ও তেল ব্যবহার করতে হবে সে গুলোর মধ্যে কাঁচা সবুজপাতার সবজি, কাঁচা অথবা হলুদ অথবা কমলা রঙ্গের সবজি, টাটকা সবজির রস, অল্প রান্না করা হলুদ, কমলা বা সবুজ রঙ্গের সবজি , সবজির রস, হলুদ অথবা কমলা রঙ্গের কন্দ, হলুদ অথবা সবুজ রঙ্গের ফল, লাল পাম তেল, কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত ক্যারোটিনয়েড।
স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এবং সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ খাদ্যের এসব পুষ্টি উপাদান গ্রহন করে আমরা রোগ প্রতিরোধ করতে পারি এবং আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি পরিপূর্ণভাবে করতে পারি।
ভিটামিন ‘এ ‘এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা প্রয়োজন হয় খুবই সামান্য পরিমাণে তবে এর উপকারিতা-কার্যকারিতা অনেক। শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজন। ভিটামিন এ-এর অভাবে কেবল অন্ধত্বই হয়, এমন সত্যের পাশাপাশি এর অভাবে মুখ গহবর, শ্বাসনালী ও ত্বকের রোগ হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ না পেলে মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গ যকৃত নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
এমন কি গর্ভের শিশুর অঙ্গহানি বা বিকলাঙ্গ পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ৬ বছর বয়সের শিশুরা ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত চোখের নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’ এর স্বল্পতা অথবা পরিপাকতন্ত্রের রোগ- যেমন দীর্ঘমেয়াদী ডায়ারিয়ার কারণে খাদ্যনালীর ভিটামিন ‘এ’ এর শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত চোখের রোগ দেখা দেয়। শিশুদের জীবনে নেমে আসে অন্ধত্বের দূর্বিসহ অভিশাপ।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ৯০ হাজার শিশু ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত চোখের অসুখে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার শিশু চোখের নানা জটিলতায় ভূগতে থাকে। কেউ কেউ অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যায। ভিটামিন ‘এ’ চর্বিতে দ্রবনীয় একটি ভিটামিন যার প্রধান উৎস প্রাণীজ খাদ্য লিভার, ডিম, মাখন, ঘি, পণির, দুধ ও মাছ। সকল রকমের মাছ বিশেষ করে মাছের তেলে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
ছোট মাছ বিশেষ করে মলা, ঢেলা এবং এ জতীয় ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ আছে। সবুজ শাক-সবজি ও পাকা ফলে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ আছে। লাল শাক, ডাটা শাক, পুঁই শাক, কলমি শাক, মটর শাক, লাউ শাক, সজনে শাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, টমেটো, পাকা পেঁপে, আম, কাঁঠাল, তরমুজ ইত্যাদি ভিটামিন ‘এ’ এর উৎকৃষ্ট উৎস বলে জানা যায়।
দেহে ভিটামিন ‘এ’-এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন ‘এ’ সহায়ক ভুমিকা পালন করে, ত্বক ও শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভিটামিন ‘এ’ খুবই প্রয়োজন। দেহের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয় প্রতিরোধ বিশেষ করে দেহের অস্থি স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সাথে ভিটামিন ‘এ’ এর গভীর সংযোগ রয়েছে, ভিটামিন ‘এ’ জীবাণু সংক্রমণ থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করে।
একজন সুস্থ মানুষের দৈনন্দিন ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’-এর প্রয়োজন হয়। তবে গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ভিটামিন ‘এ’-এর চাহিদা একটু বেড়ে যায়। একজন শিশুর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’-এর দরকার হয়। বয়:সন্ধিকালীন (১৩-১৯ বছর) সময় কিশোর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন ‘এ’-এর চাহিদা আরও বেড়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত চোখের রোগকে জেরোফথালমিয়া বলা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত চোখের রোগের মধ্যে রাতকানা রোগ প্রধান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। রেটিনা দিয়ে আমরা সাধারনত কোন কিছুকে দেখে থাকি। এর সাহায্যে কোন কিছুর ছবি গ্রহণ করে থাকি। চোখ দুইভাবে এর প্রয়োগ করে থাকে এর একটি রড ও অপরটি কোন্। রড অনুজ্জ্বল আলোতে বা কম আলোতে দেখতে সক্রিয় হয় যে জন্য আমরা রাতেও বা অন্ধকারেও দেখতে পাই।
এবং কোন্ উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সক্রিয় হয়। উজ্জ্বল আলোতে বা দিনের বেলায় কোন্ কাজ করে বলে এর সাহায্যে আমরা দিনের বেলা দেখতে পাই। অল্প আলোতে দেখার জন্য রড অত্যাবশ্যক। আলোকিত স্থানে কিছুক্ষণ থাকার পর অন্ধকার স্থানে আসলে প্রায় কিছুই দেখা যায় না। এ সময় বেশী অন্ধকার মনে হয়।
কিছুক্ষণ পর অন্ধকার অবস্থা ধীরে ধীরে কমে আস থাকে এবং অন্ধকারেও মোটামুটি ভাল দেখা যায়। এই অবস্থায় রড কাজ করে। কোন্ তাৎক্ষণিক ভাবে সক্রিয় হয়। কিন্তু রড সক্রিয় হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। কোন কোন সময় ১০ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে দেহে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব থাকলে রড সক্রিয় হতে উল্লেখ করা এ সময়ের চেয়েও বেশী সময় লেগে যেতে পারে।
আবার কারও কারও পুরোপুরি সক্রিয় হয় না। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে রডের ভিজুয়াল রডপসিন তৈরী হতে পারে না। রডের সুষ্ঠভাবে কাজ করা ব্যাহত হলেই শিশু রাতে ভাল দেখতে পায় না। এ অবস্থাকেই রাতকানা বলা হয়ে থাকে। শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবের এটাই মানবদেহের প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ।
কনজাংটিভাল জেরোসিস বা কনজাংটিভার শুষ্কতা বা ড্রাইনেজ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব বেশী দিন চলতে থাকলে কনজাংটিভা শুষ্ক হয়ে যায়। কনজাংটিভা নির্মল ও স্বচ্ছ দেখানোর পরিবর্তে শুষ্ক, অপরিচ্ছন্ন ও কুঁচকানোর মতো দেখায়। প্রথমে সমস্ত কনজাংটিভা শুষ্ক না হয়ে কিছু অংশে শুষ্কতা দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে বাড়তে কনজাংটিভার সকল অংশই শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল হয়ে যায়।
বিটট্স স্পট-কনজাংটিভার মধ্য দিয়ে সাদা ফেনার মত লবণদানার মত ধূসর বর্ণের যে দাগ দেখা যায় ওটাকেই বিটট্স স্পট বলে। বিটট্স স্পটকে জেরোফথালমিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন বলে মনে করা হয়। কর্ণিয়ার শুষ্কতা-সাধারণত: কনজাংটিভার শুষ্কতাকেই অনুসরণ করেই কর্ণিয়ার শুষ্কতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে কর্ণিয়ার পৃষ্টদেশ শুষ্ক হয়ে যায়। কর্ণিয়ার উজ্জ্বলতা আস্তে আস্তে কমে যায় এবং কর্ণিয়াকে দেখতে খনিকটা ঘষা কাঁচের মত অস্বচ্ছ মনে হয়। কর্ণিয়ার ক্ষত বেশ ছোট থাকে এবং সেটি সাধারণত: গোলাকার থাকে। কর্ণিয়ার বাইরের পরিধিতে এ ক্ষত দেখা যায়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে ক্ষত সেরে যায় এবং দৃষ্টিশক্তির তেমন কোন ক্ষতি হয় না। ক্ষত সেরে গেলেও দাগ থেকেই যায়। কর্ণিয়ার এই ক্ষত ধীরে ধীরে বড় হয়ে গেলে বা সময়মত চিকিৎসা না হলে ক্রমান্বয়ে এই ক্ষত পুরো কর্ণিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় কর্ণিয়া ফুটো হয়ে শিশু স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। কর্ণিয়াতে দাগ দেখতে পেলে মনে করতে হবে পূর্বে জেরোফথামিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল শিশুটি। কর্ণিয়ায় দাগ পাওয়া এ সব শিশুর ইতিহাস সংগ্রহ করলে জানা যাবে শিশুটি তার জীবনের কোন এক সময় সে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে ভূগেছে এবং এখনও ভূগছে।
কেরাটোম্যালাশিয়া এটিও ভিটামিন এ অভাবজনিত একটি রোগ। এ অবস্থায় চোখের কর্ণিয়া সাদা এবং স্ফীত হয়। একসময় নরম হয়ে যায় ও গলে গিয়ে এটি জটিল অবস্থা সৃস্টি করে। এ সময় শিশুর জীবনে নেমে আসে অন্ধত্বের চির অভিশাপ। এ অবস্থায় শিশুরা চরম পুষ্টিহীনতায় ভোগে। গায়ের চামড়া কুনোব্যাঙের চামড়ার মত খস খসে হয়ে যায়, চেহারা বিবর্ণ হয়ে অস্বাভাবিক হয়ে যায় ও পায়ে মুখে পানি স্পস্ট হয়ে আসে।
যাদের রাতকানা, জেরোফথালমিয়া, কেরাটোম্যালাসিয়া রোগ সনাক্ত হলে চোখের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে অবশ্যই পাঠাতে হবে। আক্রান্তদের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ( ২ লাখ ইউনিট ) ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল প্রথম দিন একটি ও দ্বিতীয় দিন একটি ও সাত দিন পর একটি মোট তিনটা ক্যাপসুল দিয়ে চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। সাথে সাথে শারীরিক অন্যান্য সমস্যা বিশেষ করে ডায়রিয়া, হাম, জ্বর, কাশি এসব থাকলে সে গুলোর চিকিৎসা করাতে হবে।
শিশুকে কৃমির ওষুধ দিতে হবে। চোখের চিকিৎসা দিতে হবে। এ পর্যায়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ খুব প্রয়োজন। শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর সুষম খাদ্য দিতে হবে। সেই সাথে ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবারও দিতে হবে পর্যাপ্ত।
ভিটামিন এ অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ছয় মাস বয়স থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে ৬ মাস অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। সবুজ শাক সবজি, পাকা ফল, ছোট মাছ, দুধ, ডিম প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে এবং ৩ থেকে ৬ মাস অন্তর ক্রিমির ওষুধ দিতে হবে। শিশুকে সময়মত সবগুলো টিকা দিতে হবে। জন্মের পর থেকেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণ মত ঘরে তৈরি সুষম খাবার খাওয়ান। #
লেখক ঃ কবি ও সাংবাদিক