পাবনার সাঁথিয়ায় স্বামীর পরকীয়ার জের ধরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা
- প্রকাশিত সময় ০৫:৪৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মে ২০২১
- / 92
নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ পাবনার সাঁথিয়া করোমজায় স্বামীর পরকীয়া জের ধরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে স্বামী রাকিবুল ইসলাম (২৫)।
ঈদের আগের রাতে ১৩ মে স্ত্রীকে হত্যা করে নদীর ক্যানেলে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন রাকিবুল। নিখোঁজের ২ দিন পর শনিবার ১৫ মে সকাল দশটার দিকে সাথিয়ার পাড় করোমজা এলাকার একটি ডোবা থেকে নিহত কানিজ ফাতেমার (২০) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত কানিজ ফাতেমার বেড়া পৌর এলাকার মোঃ আব্দুল কাদের মেয়ে। আটক রাকিবুল ইসলাম সাঁথিয়া পৌর সদরের ফেছুয়ান মহল্লার চাঁদু শেখের ছেলে।
কানিছ’র ভাই ফরিদ জানান, দুই বছর আগে রাকিবুলের সাথে বিয়ে হয় কানিজের। বিয়ের সময় সাড়ে ৫ লাখ টাকা যৌতুক নেয় রাকিবুলের পরিবার। বিয়ের পড়েও বিভিন্ন সময় টাকার জন্য নির্যাতন করতো রাকিবুলের পরিবার। এছাড়াও তার অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এই কারণে আমার বোন কে হত্যা করেছে।
পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ঘটনা সতত্যা নিশ্চিত করে জানান, আটক রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদে যেটুকু মনে হয়েছে বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। এ নিয়ে মনোমালিন্য ও সাংসারিক অস্থিরতা ছিল। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন রাকিবুল।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে রাকিবুলের সাথে বিয়ে হয় কানিজ ফাতেমার। বিয়ের পর থেকে তাদের মনোমালিন্য ও পারিবারিক কলহ চলছিল। গত ২৮ এপ্রিল স্ত্রী ফাতেমাকে তার বাবার বাড়িতে রেখে যায় রাকিবুল। ঈদের আগে নিয়ে যাবার কথা ছিল। এর মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যার ছক কষতে থাকেন রাকিবুল।
ঈদের আগেরদিন ১৩ মে সন্ধ্যার পর বেড়ানোর কথা বলে মোবাইল ফোনে স্ত্রী ফাতেমাকে বাড়ির বাইরে বের হতে বলেন রাকিবুল। তবে তার বাইরে বের হওয়ার কথা তার পরিবারের কাউকে বলতেও নিষেধ করেন।
স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে ফাতেমা বাইরে বের হলে তাকে মোটরসাইকেলে নিয়ে সাঁথিয়া উপজেলার তলট ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিরিবিলি জায়গা পেয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে প্রসাব করার কথা বলে স্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে রেখে একটু দূরে সরে যায়। কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্ত্রী ফাতেমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে রাকিবুল। এবং ইছামতি নদীর ক্যানেলে কচুরিপানার মধ্যে ফাতেমার মরদেহ লুকিয়ে রেখে বাড়ি চলে আসে।
বাড়িতে আসার পূর্বে স্ত্রী ফাতেমার মোবাইল ফোন থেকে ‘আমাকে মাফ করো, অন্য একটি ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে, তাই চলে গেলাম’ এই কথা লিখে নিজের ফোনে ও ফাতেমার ভাইয়ের ফোনে মেসেজ পাঠান রাকিবুল।
মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বাবা কাদের বেড়া থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। প্রথমে স্বামী রাকিবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি পুলিশকে তার স্ত্রীর মেসেজের কথাও জানান। এরপরই সন্দেহ হয় পুলিশের।
শুক্রবার ১৪ মে রাতে স্বামী রাকিবুলকে আটক করে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্য মতে শনিবার ১৫ মে সকালে নদীর ক্যানেল থেকে ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো এবং এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানান বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরবিন্দ সরকার।