বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতে বাইডেন এখন কি করবেন? -শেষ পর্ব
- প্রকাশিত সময় ০৪:৫০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুন ২০২১
- / 284
আসাদুজ্জামান নোহাশআন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এমনিতেই পূর্বত্তরসরীর রেখে যাওয়া ঝামেলা পূর্ণ বৈদেশিকনীতি তার উপর আবার নিজ দলের মধ্যে বিভাজন (অপেক্ষাকৃত তরুনদের দ্বারা)। মাঝে মাঝে বয়সের জন্য মানসিক ভারসম্যহীনতার মতো কটুকথা শুনতে হয় তাকে। আবার যোগ হয়েছে ঋনের বোঝা, করোনায় বেকারত্ব ইতহাসের রেকর্ড ভেঙ্গে এখন ১৪.৮৮%। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি করোনায় মৃত্যু। সর্বশেষ যোগ হলো ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাত। উত্তপ্ত হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, কোন পথে এখন হাটবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট মি. জো বাইডেন?
চীনের সাথে দ্বন্দের সমাপ্তি এখনও হয়নি বরং শুরু
চীনের সাথে বিশ শতকে সম্পর্ক ছিলো ব্যাবসায়িক। কিন্তু একুশ শতকে এসে দাড়ালো যতটানা ব্যাবসায়িক তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক।
এক চীন নীতি মেনে নিয়েই আমেরিকা চীনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। কিন্ত এখন বিধিবাম। তাইওয়ান প্রণালীতে উসকানি, বাণিজ্য যুদ্ধ, দক্ষিন চীন সাগর নিয়ে ঝামেলা, কোয়াড, সীমান্ত সমস্যায় ভারতকে প্রকাশ্য সমর্থন ইত্যাদি।
তাইওয়ানের কাছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রয়, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের বিপক্ষে অবস্থান হতে বাইডেন সরে আসেননি। পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য যুদ্ধ (যা শুরু করেন ট্রাম্প ২০১৮ সালে) আর কুটনৈতিক বহিস্কার এর ফলস্বরূপ চীন গিয়ে হাজির হলো মধ্যপ্রাচ্যে।
পাকিস্থানের সাথে চীনের আগে থেকেই ভালো সম্পর্ক আর ইরানের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে চীন এখন মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ইরানের সাথে চুক্তির উদ্দেশ্য যতটানা ইরান এবং এর অর্থনীতিকে রক্ষা, তার চেয়ে বেশি বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কারন ইরানকে হাতে পেলে ইরাক, সিরিয়া আর লেবাননকে হাতে পাওয়া অধিকতর সহজ। তাতে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পৌঁছানো গেল।
আর তুরস্কের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক আগে থেকেই ছিলো যার কারনে সে তুরস্কেরও ঘনিষ্ঠ হয়।
প্রশ্ন হল চীন কেন মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশাধিকার পেল?
তুরস্ক ন্যাটোর অংশীদার। আবার ইরানের সাথে মোটামুটি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষনা বাইডেন আগেই দিয়েছেন। সমস্যা হলো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর ঐতিহ্যের ধারের কাছে না গিয়ে তুর্কি সমকক্ষকে ফোন করেছেন প্রায় তিন মাস পর।
আবার এই বাইডেনকে ২০১৬ সালের তুর্কি অভ্যুত্থানের কুশলীব বলে মনে করা হয়। ফলে বাইডেনকে এরদোগান ভালো চোখে নিবেন না তা চীনারা ভালো করেই জানেন। আর আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বিকৃতি প্রদান নিয়ে তুরস্কের সাথে যে শূন্যতা তৈরি করে সে সুযোগকে শি জিনপিং লুফে নিয়েছেন।
নিজ দেশের জিংজিয়ান এর কাহিনী ঢাঁকতে, ইরান আর তুরস্কের প্ররোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার জন্য চীন এখন প্রতিপক্ষ। এছাড়াও আফ্রিকাতে আমেরিকাকে চীন অনেক আগেই পেছেনে ফেলেছে।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের পর চীনা নেতারা ১৫ নভেম্বর ২০২০ এ নতুন করে বাজার ধরার জন্য রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তি করে। যার মাঝে আসিয়ান ভুক্ত দেশ সহ নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো কোয়াডের অন্যতম সদস্য অষ্ট্রেলিয়াও এখানে আছে। অর্থাৎ চীন কোয়াড হতে অষ্ট্রেলিয়াকে ভাগিয়ে নিয়ে এসেছে। বলে রাখা ভাল যে কোয়াড হল চীন বিরোধী একটি অর্থনৈতিক জোট।
রাশিয়ার অবন্ধু তালিকায় যুক্তরাষ্ট
রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুতিন নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে কখনই ভালো না। তাছাড়া বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর পূর্ব ইউরোপে যে ঘটনা প্রবাহ তাতে আমেরিকার মাথা ব্যাথা অনেকগুন বেড়ে গেছে। রাশিয়া বাধ্য হয়ে অবন্ধু দেশ সমূহের তালিকা তৈরি করেছে।
বলে রাখা ভালো বর্তমান বিশ্বের যত রাজনীতিবিদ আছেন তার মধ্যে পুতিনের সমকক্ষ বা ধারের কাছে কেউ নেই। এই পুতিনই তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্রের সর্ম্পকে ফাটলের নেপথ্যে কারিগর। কেননা ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের সময় একমাত্র পুতিনই এরদোগানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।
আবার ন্যাটো-তুরস্ক ৭০ বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গেছেন এস-৪০০ এর মুলা ঝুলিয়ে। সেখানে চীনের সাথে ১৪ কিলোমিটার সীমান্ত সমস্যা মিটিয়েছেন কৌশলে। আবার চীনকে দিয়েই দাড় করালেন সাংহাই কো-ওপারেটিভ ওর্গানাইজেশন। বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প দিয়ে চীনকে পুরো বিশ্ব কব্জায় করার বুদ্ধি দেখালেন পুতিন।
আমেরিকা আগে কারনে-অকারনে ইউরোপকে দিয়ে রাশিয়াকে সাইজ করাতে পারত। কিন্ত এখন ব্যাপারটি উল্টো। যদিও মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা অনুভব করেন বিরোধী নেতা নাভারিনকে নিয়ে, তবুও রাশিয়া একটি প্রতিপক্ষ। কেননা মার্কিন নির্বাচন কিভাবে হবে তা রাশিয়া তৈরি করেছে, আর তার পছন্দমত প্রার্থীকে জিতিয়েছে।
রাশিয়া এখন আর ঘুমন্ত বাঘ নয়, এখন সে আরও আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য জড়ো করছে। অবশ্য তার আগেই ক্রিমিয়া দখল করেছে (যা ইউক্রেনের একটি দ্বীপ ১৯৫৪ সালে রাশিয়া এটি উপহার স্বরুপ প্রদান করেছিল) রাশিয়া।
এছাড়া ১৯৮৭ সালে মিখাইল গর্ভাচেভ ও রিগ্যান প্রশাসনের করা ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তিটি সম্পাদান করেন। তা হতে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ২ আগষ্ট ২০১৯ সালে।
তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৪ সালে রাশিয়া চুক্তির শর্ত মানছে না এমন কারণ দেখিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েও যেতে পারেননি তার ইউরোপীয় অংশীদারদের কারনে। (এখানে উল্লেখ্য যে এই চুক্তির আওতায় ৫০০ হতে ৫৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে মাঝারি দুরত্বের ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়)। এখনও বাইডেন এই বিষয়টির সমাধানের কোন পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় অংশীদারদেরকে কিভাবে নিরাপত্তা প্রদান করবে অথবা রাশিয়াকে কিভাবে থামাবে তা বাইডেনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। যার প্রভাব আঁচ করতে গিয়ে বাইডেন ১৪ জুন ন্যাটোর ৩১ তম মিটিয়ে পুতিনের সাথে সাক্ষাত প্রার্থনা করেছেন।
এরদোগান এখন পূর্ব মুখি
এরদোগান সম্ভবত কাশেম সোলাইমানির হত্যার পর পুতিনের সেই প্রিয় পাত্র যার ব্যাপারে তিনি চোখবুঝে বাজি ধরতে পারেন।
ম্যাকরন এর লাফালাফি থামাতে কৌশলে এরদোগান পুতিনকে রাজি করিয়ে আজারবাইজান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন (আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দের সুহারা কমিটি মিনস্ক গ্রুপটি ফ্রান্সের নেতৃত্বে করা)। আরো কৌশলে রাশিয়াকে দিয়ে মধ্যস্থতা করিয়েছেন। কেননা সে সিরিয়াতে যুদ্ধ করলে পুতিন যাতে বাধা না দেয়।
এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো লিবিয়াতে রাশিয়া, ফ্রান্স আর সৌদিবলয়ের বিপরীতে যুদ্ধ করা তাতে বিজয় এরদোগানের। কিন্ত রাশিয়া তাতে বাধা দেয়নি।
বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরে এরদোগানের সাথে কথা বলেছেন ঐতিহ্য ভঙ্গ করে, আবার কথা শেষে আরমেনিয়ার গনহত্যার স্মৃতি উসকে দিয়েছেন ঘটা করে। ব্যাপারটি তুরস্ক ভালো ভাবে নেয়নি। এর আগে কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন কাজ করার সাহস দেখায়নি।
বাইডেন কোন পলিসির জোরে এমন করেছেন তা বোদ্ধা মহলের নিকট বোধগম্য না। কেননা ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের সময় এই বাইডেনই ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন আর আমেরিকা সে অবস্থানে নেই যে সেনাবাহিনী দিয়ে নাজিমুদ্দিন এরবাকানের মতো করে ক্ষমতা হতে তুস্কের নির্বাচিত কাউকে বিদায় করে দিবেন (১৯৯৭ সালে এটি ঘটে)। এই জায়গাতেই এরদোগানের শক্তি।
২০১৬ সালে অভ্যুত্থানের সময় জনগনকে দিয়ে সেনাবাহিনীকে রুখে দিয়েছিলেন এরদোগান। আর পরবর্তী সময়ে পুতিনের স্টাইলে সবাইকে জেলে পুরে নিজেকে আরো ঝানু রাজনীতিবিদ করে তুলেছেন।
কাতার অবরোধ এর সময় বিপরীত মেরুতে দাড়িয়ে কাতারকে সহযোগিতা করে ইরান এর কাছাকাছি এসেছেন। কাতার এর বিজয়ের পর এখন সৌদি বাদশার সাথে সম্পর্ক মেরামাত আর মিশরের সাথে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে উঠে এসছেন বিশ্ব নেতার কাতারে।
এখন এরদোগান সম্পূর্ণ আমেরিকা বিপরীত। যা বাইডেন এর ভুলভাল পররাষ্ট্রনীতির ফল। যার ফলে তুরস্ক এখন বেশি করে চীন মুখী হয়েছে। কেননা ২০১৬ সালে জার্মানিকে পেছনে ফেলে চীন তুস্কের প্রধান বাণিজ্যের অংশীদার হয়েছে। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর তুরস্কে প্রথম পণ্যবাহী ট্রেন দীর্ঘ ৮৬৯৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চীনের সানজি’তে পৌছায়। যাতে পরিলক্ষিত হয় যে তুরস্ক এখন পূর্বমূখি।
অথচ তুরস্ক ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহৎ অংশীদার। তাছাড়া তুরস্কের ইনজারলিক ঘাটিতে মার্কিন সৈন্য আছে। এখান হতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের উপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়। তুরস্ক যদি বাইডেনের হাতছাড়া হয় তাহলে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
ঠান্ডা মাথায় খেলছেন খামেনী
ইরান মধ্য প্রাচ্যে বড় খেলোয়াড়। খামেনীর ব্রেন এতটাই ঠান্ড যে নিজের বাজির ঘোড়া সোলাইমানির মৃত্যুর পরও কোন সামরিক সংঘাতে জড়াননি। বরং বিভিন্ন ছকে আর কৌশলে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের ক্ষতি সাধনের খেলায় লিপ্ত সে।
আরব বসন্তের সময় (২০১১ সালে) গোটা সিরিয়াতে যখন টালমাটাল অবস্থা তখন সিরিয়াতে আমেরিকার বিপরীতে গিয়ে বাশার আল আসাদকে সমর্থন করে তার অনিবার্য পতন ঠেকিয়ে দিয়েছে।
ইয়েমেন যুদ্ধে ইরানের সামরিক কৌশলের কাছে আমিরাত জোট ধরাশায়ী হয়েছে। এ সমস্ত অভিজ্ঞতা ইরান অজর্ন করেছে বিগত চার দশক ধরে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লাড়াই করে।
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর হতে (৪০ বছরের অধিক সময়) নিষেধাজ্ঞার কারনে ইরানের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এতদসত্বেও গোটা আরব জাহানে ইরানের মত শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আর কারো নেই। প্রায় প্রতিদিনই ইরাকের কোন মার্কিন ঘাটিতে হামলা হচ্ছে। তালেবানের সাথেও ইরান তার বিরোধ মিটিয়ে নিয়েছে।
এর আগে নিজের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ইরান ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল নিজেদের তৈরী সামরিক স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপন করে। এর ফলে মার্কিন ও ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা এঅঞ্চলে হুমকির মুখে পড়বে।
এছাড়াও আছে তার প্রক্সি হুতি, হিজবুল্লাহ, হামাস, ইসলামি জিহাদ, শাদ আল শাবাব। এক কথায় বিশাল এক বাহিনী যা আন্ত মহাদেশীয় ছদ্মরূপ।
২৭ মার্চ ২০২১ এ ইরান বুঝেশুনে চীনের সাথে ২৫ মেয়াদী চুক্তি করেছে। রাশিয়াকে সিরিয়াতে টেনে এনেছে। আবার হামাসকে দিয়ে ইসরাইলকে সাইজ করার মাধ্যমে বোঝালো ইরান এখানে এমন একটি শক্তি যাকে কোনভাবেই হেলাফেরা করা চলবে না।
কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুর পর ইরানই প্রথম রাষ্ট্র যে রেকর্ড ভেঙ্গে ১৯৫৩ সালের পর মার্কিন ঘাটিতে আঘাত করে।
নতুন নতুন ড্রোন আর যুদ্ধজাহাজের পাশাপাশি ব্যালিষ্টিক মিসাইলের সমারহ করে নিজের অস্ত্রগারে শান দিচ্ছে ইরান। মাঝে মাঝে প্রকাশ করছে তার ভূগর্ভস্থ মিসাইলের শহর। আর আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলের অধিবাসীদের মাঝে।
বোদ্ধা মহলের ধারনা ইরান কলকাঠি নেড়ে চীন-পাকিস্থান-ইরান-তুরস্ক এর সাথে রাশিয়ার অক্ষ শক্তি জোট গঠন করছে (পাঠক এ বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে আরেকটি লেখা আনব ইনশাল্লাহ)।
এখন ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত আনবিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আর কোন অংশ নয়। আমেরিকা ছাড়াই এটি হচ্ছে। কারন ইরানের ইশারাতে চীন আর রাশিয়া আমেরিকাকে বাদ দিয়ে এটি করছে।
আমেরিকা ছাড়াই ইরান ডিল পুনুরুজ্জিবিত করন যখন চুড়ান্ত পর্যায়ে তখন ৯ জুন ২০২১ ব্লিংকেন ঘোষনা করেন যে আমেরিকা এই চুক্তিতে ফিরলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি পরাজয়। কারন স্নায়ু যুদ্ধের পর কোন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে এই প্রথম আমেরিকা নেই। আর এই চুক্তিতে ফিরে আসা এখন বাইডেনের জন্য চরম পরীক্ষার বিষয়।
সৌদি এখন ইরানের সাথে তার কুটনৈতিক সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন। যা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ২০১৬ সালে সৌদি কর্তৃক প্রখ্যাত শিয়া আলেম শেখ নিমোরের ফাঁসি মাধ্যমে। সৌদি আরব এখন ইয়েমেনের বাস্তবতা ধরতে পেরেছেন। আর যেহেতু ইয়েমেনে ইরান বড় প্রতিপক্ষ তাই সৌদি আরব এখন চাইছে লজ্জাজনক পরাজয় হতে বেঁচে আসার জন্য ইরানের সাথে বন্ধুত্ব করতে।
৬ জুন ২০২১ এ ইরানী নিউজ চ্যানেল ফার্স টুডে একটি খবরে প্রকাশ কর যে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এর প্রধান রিচার্ড আটউড বলেছেন, “ইয়েমেনে মুখ রক্ষার পথ খুঁজছে সৌদি আরব।
তাছাড়া কাতার অবরোধের সময় ইরানের সামর্থের প্রমানও সৌদি শাসকেরা ঢের উপলব্দি করতে পেরেছেন। সৌদি এখন ইরান আর তুরস্কের পথের পথিক।
যে সৌদি গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত-বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের পরম বন্ধু ছিলো সে এখন চীনের দিকে ক্রমশ ধাবিত হচ্ছে।
নতুন মেরুকরনের জন্য ইরানই সর্ব প্রথম রাশিয়াকে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্যের আহ্বান জানায়। যার জবাবে পুতিন ৫ জুন ২০২১ বলেন যে, রাশিয়া তেল গ্যাস ডলারে বিক্রি করবে না।
প্রাচ্যের এই ঘটনা প্রবাহ এখন বাইডেনের জন্য বড় চিন্তার কারন হয়ে যাবে। এতে দ্বিমত করার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না।
এখন কি করবেন বাইডেন?
পুতিন-শি-এরদোগান-ইমরান আর খামেনীর বিপরীতে নিজের ভাঙাচোরা অর্থনীতি আর সামরিক বাহিনী নিয়ে কিভাবে দাঁড়াবেন বাইডেন? উল্লেখিত নাম সমূহ কোন মামুলি ব্যক্তি নয়। এরা সাবাই ঝানু দাবাড়ু।
আফগানিস্থানে আমেরিকা যে পরাজয়ের স্বাদ বরণ করলো সেখানে এই নামগুলোর কথা চিন্তা করেন দেখবেন সবারই সেখানে হাত আছে। ইরাকেও ঠিক একই অবস্থা। ফিলিস্তিনেও অভিন্ন নয়। সিরিয়াতে যা হচ্ছে সেখানে চীনের উপস্থিতি না থাকলেও বাকিরা হাজির। যেখানেই আমেরিকা মত প্রকাশ করছে সেখানেই এরা বিপরীতে অবস্থান করছে।
এখন দেখার বিষয় যে, এই বিশ্ব আগামী দশ বছর পর আর আমেরিকাকে বিশ্ব মোড়ল হিসেবে দেখে কিনা। ১৯৫৫ (বাগদাদ প্যাক্ট) সালের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মেরু করনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।