ঢাকা ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

করোনার তৃতীয় ঢেউ? প্রতিরোধ ব্যবস্থা?

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৭:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • / 86

স্বতঃকণ্ঠ ডেস্কঃ অবশেষে করেনায় মৃত্যুর সংখ্যা আবার ৮০ ছারিয়ে গেল। জেলায় জেলায় লক ডাউন দেওয়া হলো।এছাড়াও ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে ঢাকার কাচাকাছি সমস্ত জেলাগুলো সংলগ্ন ২৭ জেলায় গণ পরিবহন বন্ধ করে দেওযা হয়েছে।

দিন দশেক হলো বাংরাদেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ উভয়ই উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে করেছে। বহুদিন পর দৈনন্দিন মৃত্যুর সংখ্যা ৬০-৬৫ তে উন্নীত হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, করোনা সংক্রমণ এখন ঢাকা ছাড়িয়ে মফ:স্বলের জেলাগুলিতে এবং গ্রামগুলিতেও অনুপ্রবেশ করেছে।

মৃত্যুর সংখ্যা অতীতে একশত ছাড়িয়ে গেলেও তা প্রধানত: সীমাবদ্ধ থেকেছে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম এখন তা বিস্তৃত হয়েছে সারাটি দেশে-কোথাও কিছুটা কম-কোথাও বা মারাত্মকভাবে বেশী সংখ্যায়।

মৃত্যু ও শনাক্ত সংক্রান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে বিগত এক সপ্তাহের সরকার ঘোষিত পরিসংখ্যান নীচে তুলে ধরছি:
১৬ জুন মৃত্যু ৬০ শনাক্ত ৩৯৫৬
১৫ জুন মৃত্যু ৫০ শনাক্ত ৩৩১৯
১৪ জুন মৃত্যু ৫৪ শনাক্ত ৩০৫০
১৩ জুন মৃত্যু ৪৭ শনাক্ত ২৪৩৬
১২ জুন মৃত্যু ৩৯ শনাক্ত ১৬৩৭
১১ জুন মৃত্যু ৪৩ শনাক্ত ২৪৫৪
১০ জুন মৃত্যু ৪০ শনাক্ত ২৫৭৬

উল্লেখিত পরিসংখ্যান দৃষ্টে দেখা যায় মৃত্যু এবং সংক্রমণ-উভয় ক্ষেত্রে সংখ্যা প্রতিদিন ওঠানামা করলেও ঝোঁক বাড়তির দিকে। মে মাসের সাথে তুলনা করতে পারলে দেখা যেত-গত সপ্তাহের ঐ সরকারী পরিসখ্যানের তুলনায় তখন কত কম ছিল।

বিগত দুই সপ্তাহ যাবত দেখা যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও রোগটি হানা দিচ্ছে। চাপাই নবাবগঞ্জ দিয়ে শুরু হলেও রাজশাহী খুলনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও খুলনায় রোগটির ভয়াবহ বিস্তৃতি ঘটেছে। এলাগুলি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।

এর সাথে আরও উৎকণ্ঠা জাগানো বিষয়টি হলো-দেশে যত মানুষ করোনার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তার ৬৮ ভাগের ক্ষেত্রেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। খবরটি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশী চিকিৎসক ও গবেষকেরা।

তাঁরা এ করণে তাঁদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছেন এবং যথেষ্ট সতর্কতা কড়াকড়িভাবে অবলম্বনের সুপারিশ করেছেন। এমত অবস্থায় সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক লক-ডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে বলেছেন এবং বলেনে যে করোনা নিয়ে আদৌ কোন রকম ঝুঁকি নেওয়া যেন না হয়।

এই নির্দেশ জারীর পর থেকে সীমান্তের বহু সংখ্যক জেলায় উপজেলায় এমন কি ইউনিয়নেরও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ লক ডাউন ঘোষণা করেছেন। নানা ধরণের বিধিনিষেধ জারী করেছেন-কোথাও কোথাও বিধি নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

কিন্তু বিগত ১৭ জুনে এসে দেখা গেল অবাধ্য করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে প্রায় চার হাজারে এবং মৃত্যু ৬৩ তে উন্নীত হলো। করোনার এই অবাধ্য চেহারা প্রত্যক্ষ করে অতীতের এক সপ্তাহের জন্য বিধি নিষেধ আরোপের স্থলে দেশব্যাপী এক বারেই এক মাসের লক-ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

ঐ ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্তে সব অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই পর্য্যন্ত এই বিধিনিষেধ বলবত থাকবে। সরকার কর্তৃক এ প্রসঙ্গে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস খোলা থাকবে।

এতদিন শুধু জরুরী সেবা সংশ্লিষ্ট অফিসগুলি খোলা রাখতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও হোটল রেস্তোঁরা বাজার-বিপণী প্রভৃতি নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী খোলা থাকবে। গণ পরিবহণও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সর্বত্র চালু থাকবে।

অপরপক্ষে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বড় বাধা হলো এক. সরকার এখনও পর্য্যাপ্ত পরিমাণে টিকা সংগ্রহ করতে পারে নি। দুই. চীন থেকে চীনা টিকার যে তিন কোটি ডোজ কিনবার কথা রয়েছে তা স্বাস্থ্যদফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অমার্জনীয় কারণে থমকে আছে।

এ জট কতদিনে কাটবে এবং কতদিনে চুক্তি হবে ও চীন থেকে নিয়মিত টিকা সরবরাহ আসতে শুরু করবে তা অনুমান করাও দুরুহ। হঠাৎ জানা গেল উপহার হিসেবে চীন আবার ৯১,০০০ ডোজ পাঠিয়েছে কিন্তু ক্রয়ের ব্যাপারে কোন কিছু জানা যাচ্ছে না চীন থেকে।

তিন. সরকারের হাতে বর্তমানে যে চীনা টিকা আছে তা দিয়ে টিকাদান কার্য্যক্রম ১৯ জুন থেকে সুরু করা হলেও তার মোট ডোজ পরিমাণ হলো মাত্র ১১ লক্ষ ৯১ হাজার যা দিয়ে সাড়ে ছয় লাখ মত মানুষকে দেওয়া যাবে।

এই মওজুত ফুরিয়ে যেতে বেশী দিন লাগবে না কিন্তু ফুরানোর আগেই যদি নতুন সংগ্রহ না এসে পৌছায় তবে এক্ষেত্রে আবারও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। চার. দেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আগেই ডবল ডোজ টিকা পেয়েছেন।

কিন্তু দেশে নতুন নতুন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। তাই দেশের সকল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্রালয় ও কলেজ সমূহে শিক্ষাদানরত শিক্ষক- শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদেরকে নিরবিঘ্নে তাঁদের শিক্ষাকার্য্যক্রম অক্ষুন্ন রাখতে টিকাদান দ্রুততার সাথে করা প্রয়োজন বুঝা যায় প্রশিক্ষণরত নার্স ও অপরাপর স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রেও দ্রুততার সাথে টিকাদান সমভাবে প্রযোজ্য।

পাঁচ. দেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকবাবে ছড়িয়ে পড়লেও করোনা পরীক্ষার ব্রাপারে প্রস্তুতি নেহায়েতই অপ্রতুল। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী চিহ্নিত করা হয় লক্ষণ দেখে। কিন্তু কেউ যদি লক্ষণ উপলব্ধি করতে সক্ষম না হন এবং কাউকে সে সম্পর্কে না জানান সে ক্ষেত্রে তো তাঁকে বা তাঁদেরকে হিসাবের আওতাতেই আনা সম্ভব হবে না এবং হচ্ছেও না।

ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর দৈনন্দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে বিবরণ প্রকাশ করছেন তা অসম্পূর্ণ। সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা প্রকৃত প্রস্তাবে আরও যথেষ্ট পরিমাণে বেশী হবে যদি ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায় সর্বত্র।

ছয়. গুরুতরভাবে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, অক্সিজেন সংকট, বেড আই.সি.ইউ. বেড এর প্রয়োজনীয়তাও তেমনই বাড়ছে। কিন্তু মাস দেড়েক আগে হাসপাতাল, বেড, আই সি ইউ প্রভৃতি বিগত এক বছরে যে পরিমাণে বাড়ার হিসেব প্রকাশ করেছেন তা আদৌ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

দ্রুত এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাত. সরকারি সিদ্ধান্ত হলো ৪০ বছর ঊর্ধদেরকে প্রথমে টিকা দেওয়া হবে। এই কার্য্যক্রম অন্তত: দু’আড়াই মাস যাবত স্থগিত থাকার পর ১৯ জুন থেকে তা পুনরায় শুরু হলেও এই বয়োসীমার আওতাধীন নারী-পুরুষদের টিকাদান শেষ হতে আরও যাথেষ্ট সময় লাগবে।

এ বিষয়টি ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। সেই সাথে কত দ্রুত ঐ বয়ো:সীমা অন্তত: ১৮ বছর পর্য্যন্ত বিস্তৃত করা যায় তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভেবে সেই অনুযায়ী বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

করোনা বৃদ্ধ বয়সীদের জন্য অধিকতর বিপজ্জনক হলেও রোগটি এখন ক্রমশ শিশু-কিশোর-যুবক-যুবতী সকলকেই আক্রমণ করছে। একদিকে যেমন প্রয়োজন ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা, তেমনই আবার প্রয়োজন দ্রুত তম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনমত করোনার টিকা নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা, বিষয়টিকে আরও ত্বরান্বিত করা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ করা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনা রাজশাহীতে সরকারি হাসপাতালগুলিতে বর্তমানের চাইতে কমপক্ষে ২৫ ভাগ শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, অনুরূপ হারে আই সি ইউ শয্যা বৃদ্ধি ও অক্সিজেন প্রাপ্তি ও বিতরণের প্রয়োজনানুরূপ ব্যবস্থা, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও শতকারা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করা কারণ, বরাবরই হাসপাতালগুলিতে এঁদের সংখ্যা অত্যন্ত কম।

সাথে সাথে করোনা প্রতিরোধেল ক্ষেত্রে সর্বজনীন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর মনোভাব গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার এর ব্যাপক প্রয়োগ, যেমন হাতে, সকল প্রকার যানবাহনে তাদের প্রতিটি ষ্টপেজে যাত্রী ওঠানামাকালে যে যান-বাহন রিকসা, ষ্কুটার বা অন্য যাই হোক না কেন। বাড়ীর সকল ঘরের মেঝে, বারান্দাগুলিকে রোজ স্যনিটাইজার করাও অপরিহার্য্য।

গণপরিবহন পূরোপূরি বন্ধ রাখ, অফিস আদালত, কল-কারখানা বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় রোগের প্রকোপ শনৈ: শনৈ: বৃদ্ধির কারণে অপরিহার্য্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার বিপণী হোটেল সমূহ পর্য্যটন কেন্দ্র প্রভৃতিও বন্ধ রাখার (কমপক্ষে তিন সপ্তাহের জন্যে) প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য্য।

হ্যাঁ, এতে আর্থিক ক্ষেত্রেও বিপর্য্যয় নেমে আসবে। তবু উপায় নেই। মানুষের জীবন বাঁচানোর চাইতে বড় কোন কাজ নেই। তাই এগুলি করতে হবে-এবং অত্রন্ত দ্রুততার সাথে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরকে আর্থিক সহায়তা অবশ্যই দিতে হবে।

কারণ হিসেবে আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাকেই স্মরণে আনা প্রয়োন। সেই কবে থেকে চলচে লক ডাউন-তবুও রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এমনটি তো হওয়ার কতা না এই দীর্ঘ লক ডাউনের ফলে। কিন্তু রোগের প্রকোপ বাড়ছেই।

এবার যে ৩০ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করে অতীতের চাইতে কিছু কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলো-তাতে কি রোগের প্রাদুর্ভাব সংক্রমণ ও মৃত্যু কমবে। এ ব্যাপারে সরকারে উচিত বিশেষজ্ঞদের মতামত অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।

নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলি বারবার দেখাচ্ছে ভারত তৃতীয় ঢেউ এর আশংকায়। ওখানকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অক্টোবরের মধ্যেই করোনার তৃতীয় ঢেউ ভারতকে গ্রাস করতে পারে।

ঐ ঢেউ এলে বাংলাদেশও পার পাবে না-যতই সীমান্ত সিল করা হোক না কেন। ইতোমধ্যেই সীমান্ত বন্ধ থাকা সত্বেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঢাকাতে কয়েকজনের দেহে ধরা পড়েছে। যার কবলে পড়ে জনা তিনেক শিশু তাদের চোখ হারিয়েছে।

আবার জুলাইতে এসে যাচ্ছে ঈদ-উল-আযহা। এই ঈদে অগণিত মানুষ নিজ নিজ জেলায় ও গ্রামের দিকে ছুটবেন। সৌদি আরব বিদেশীদের জন্য পর পর দুই বছর হজ্জ্ব যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে করোনার কারণে।

আমরা কি পারব ঈদ-যাত্রা ঠেকাতে-গাড়ী-ঘোড়া-লঞ্চ-ষ্টীমার-রিকসা ষ্টুটার ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে ১৫ দিন পর পর্য্যন্ত বন্ধ রাখতে? গরুর হাট নয়-বেপারীকে ফোনে অর্ডার দিয়ে বাড়ীতে গরু পৌঁছে দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে, দেশের সর্বত্র কোরবানীর পর ঐ দিনের বা রাত ১০টার মধ্যে তাবৎ বর্জ্য বাধ্যতামূলকভাবে পরিস্কার করার নির্দেশ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলিতে দিতে।

অতীতের পুরাতন প্রবর্চনাটিকে উল্লেখ করি “সাবধানের মার নেই”।

করোনার তৃতীয় ঢেউ? প্রতিরোধ ব্যবস্থা?

প্রকাশিত সময় ০৭:৪১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

স্বতঃকণ্ঠ ডেস্কঃ অবশেষে করেনায় মৃত্যুর সংখ্যা আবার ৮০ ছারিয়ে গেল। জেলায় জেলায় লক ডাউন দেওয়া হলো।এছাড়াও ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে ঢাকার কাচাকাছি সমস্ত জেলাগুলো সংলগ্ন ২৭ জেলায় গণ পরিবহন বন্ধ করে দেওযা হয়েছে।

দিন দশেক হলো বাংরাদেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ উভয়ই উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে করেছে। বহুদিন পর দৈনন্দিন মৃত্যুর সংখ্যা ৬০-৬৫ তে উন্নীত হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, করোনা সংক্রমণ এখন ঢাকা ছাড়িয়ে মফ:স্বলের জেলাগুলিতে এবং গ্রামগুলিতেও অনুপ্রবেশ করেছে।

মৃত্যুর সংখ্যা অতীতে একশত ছাড়িয়ে গেলেও তা প্রধানত: সীমাবদ্ধ থেকেছে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম এখন তা বিস্তৃত হয়েছে সারাটি দেশে-কোথাও কিছুটা কম-কোথাও বা মারাত্মকভাবে বেশী সংখ্যায়।

মৃত্যু ও শনাক্ত সংক্রান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে বিগত এক সপ্তাহের সরকার ঘোষিত পরিসংখ্যান নীচে তুলে ধরছি:
১৬ জুন মৃত্যু ৬০ শনাক্ত ৩৯৫৬
১৫ জুন মৃত্যু ৫০ শনাক্ত ৩৩১৯
১৪ জুন মৃত্যু ৫৪ শনাক্ত ৩০৫০
১৩ জুন মৃত্যু ৪৭ শনাক্ত ২৪৩৬
১২ জুন মৃত্যু ৩৯ শনাক্ত ১৬৩৭
১১ জুন মৃত্যু ৪৩ শনাক্ত ২৪৫৪
১০ জুন মৃত্যু ৪০ শনাক্ত ২৫৭৬

উল্লেখিত পরিসংখ্যান দৃষ্টে দেখা যায় মৃত্যু এবং সংক্রমণ-উভয় ক্ষেত্রে সংখ্যা প্রতিদিন ওঠানামা করলেও ঝোঁক বাড়তির দিকে। মে মাসের সাথে তুলনা করতে পারলে দেখা যেত-গত সপ্তাহের ঐ সরকারী পরিসখ্যানের তুলনায় তখন কত কম ছিল।

বিগত দুই সপ্তাহ যাবত দেখা যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও রোগটি হানা দিচ্ছে। চাপাই নবাবগঞ্জ দিয়ে শুরু হলেও রাজশাহী খুলনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও খুলনায় রোগটির ভয়াবহ বিস্তৃতি ঘটেছে। এলাগুলি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল।

এর সাথে আরও উৎকণ্ঠা জাগানো বিষয়টি হলো-দেশে যত মানুষ করোনার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন তার ৬৮ ভাগের ক্ষেত্রেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। খবরটি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশী চিকিৎসক ও গবেষকেরা।

তাঁরা এ করণে তাঁদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করেছেন এবং যথেষ্ট সতর্কতা কড়াকড়িভাবে অবলম্বনের সুপারিশ করেছেন। এমত অবস্থায় সরকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক লক-ডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে বলেছেন এবং বলেনে যে করোনা নিয়ে আদৌ কোন রকম ঝুঁকি নেওয়া যেন না হয়।

এই নির্দেশ জারীর পর থেকে সীমান্তের বহু সংখ্যক জেলায় উপজেলায় এমন কি ইউনিয়নেরও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ লক ডাউন ঘোষণা করেছেন। নানা ধরণের বিধিনিষেধ জারী করেছেন-কোথাও কোথাও বিধি নিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

কিন্তু বিগত ১৭ জুনে এসে দেখা গেল অবাধ্য করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে প্রায় চার হাজারে এবং মৃত্যু ৬৩ তে উন্নীত হলো। করোনার এই অবাধ্য চেহারা প্রত্যক্ষ করে অতীতের এক সপ্তাহের জন্য বিধি নিষেধ আরোপের স্থলে দেশব্যাপী এক বারেই এক মাসের লক-ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

ঐ ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মানার শর্তে সব অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই পর্য্যন্ত এই বিধিনিষেধ বলবত থাকবে। সরকার কর্তৃক এ প্রসঙ্গে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস খোলা থাকবে।

এতদিন শুধু জরুরী সেবা সংশ্লিষ্ট অফিসগুলি খোলা রাখতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও হোটল রেস্তোঁরা বাজার-বিপণী প্রভৃতি নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী খোলা থাকবে। গণ পরিবহণও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সর্বত্র চালু থাকবে।

অপরপক্ষে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বড় বাধা হলো এক. সরকার এখনও পর্য্যাপ্ত পরিমাণে টিকা সংগ্রহ করতে পারে নি। দুই. চীন থেকে চীনা টিকার যে তিন কোটি ডোজ কিনবার কথা রয়েছে তা স্বাস্থ্যদফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অমার্জনীয় কারণে থমকে আছে।

এ জট কতদিনে কাটবে এবং কতদিনে চুক্তি হবে ও চীন থেকে নিয়মিত টিকা সরবরাহ আসতে শুরু করবে তা অনুমান করাও দুরুহ। হঠাৎ জানা গেল উপহার হিসেবে চীন আবার ৯১,০০০ ডোজ পাঠিয়েছে কিন্তু ক্রয়ের ব্যাপারে কোন কিছু জানা যাচ্ছে না চীন থেকে।

তিন. সরকারের হাতে বর্তমানে যে চীনা টিকা আছে তা দিয়ে টিকাদান কার্য্যক্রম ১৯ জুন থেকে সুরু করা হলেও তার মোট ডোজ পরিমাণ হলো মাত্র ১১ লক্ষ ৯১ হাজার যা দিয়ে সাড়ে ছয় লাখ মত মানুষকে দেওয়া যাবে।

এই মওজুত ফুরিয়ে যেতে বেশী দিন লাগবে না কিন্তু ফুরানোর আগেই যদি নতুন সংগ্রহ না এসে পৌছায় তবে এক্ষেত্রে আবারও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। চার. দেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আগেই ডবল ডোজ টিকা পেয়েছেন।

কিন্তু দেশে নতুন নতুন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। তাই দেশের সকল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্রালয় ও কলেজ সমূহে শিক্ষাদানরত শিক্ষক- শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদেরকে নিরবিঘ্নে তাঁদের শিক্ষাকার্য্যক্রম অক্ষুন্ন রাখতে টিকাদান দ্রুততার সাথে করা প্রয়োজন বুঝা যায় প্রশিক্ষণরত নার্স ও অপরাপর স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রেও দ্রুততার সাথে টিকাদান সমভাবে প্রযোজ্য।

পাঁচ. দেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপকবাবে ছড়িয়ে পড়লেও করোনা পরীক্ষার ব্রাপারে প্রস্তুতি নেহায়েতই অপ্রতুল। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী চিহ্নিত করা হয় লক্ষণ দেখে। কিন্তু কেউ যদি লক্ষণ উপলব্ধি করতে সক্ষম না হন এবং কাউকে সে সম্পর্কে না জানান সে ক্ষেত্রে তো তাঁকে বা তাঁদেরকে হিসাবের আওতাতেই আনা সম্ভব হবে না এবং হচ্ছেও না।

ফলে স্বাস্থ্য অধিদফতর দৈনন্দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে বিবরণ প্রকাশ করছেন তা অসম্পূর্ণ। সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা প্রকৃত প্রস্তাবে আরও যথেষ্ট পরিমাণে বেশী হবে যদি ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায় সর্বত্র।

ছয়. গুরুতরভাবে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, অক্সিজেন সংকট, বেড আই.সি.ইউ. বেড এর প্রয়োজনীয়তাও তেমনই বাড়ছে। কিন্তু মাস দেড়েক আগে হাসপাতাল, বেড, আই সি ইউ প্রভৃতি বিগত এক বছরে যে পরিমাণে বাড়ার হিসেব প্রকাশ করেছেন তা আদৌ চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

দ্রুত এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাত. সরকারি সিদ্ধান্ত হলো ৪০ বছর ঊর্ধদেরকে প্রথমে টিকা দেওয়া হবে। এই কার্য্যক্রম অন্তত: দু’আড়াই মাস যাবত স্থগিত থাকার পর ১৯ জুন থেকে তা পুনরায় শুরু হলেও এই বয়োসীমার আওতাধীন নারী-পুরুষদের টিকাদান শেষ হতে আরও যাথেষ্ট সময় লাগবে।

এ বিষয়টি ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। সেই সাথে কত দ্রুত ঐ বয়ো:সীমা অন্তত: ১৮ বছর পর্য্যন্ত বিস্তৃত করা যায় তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভেবে সেই অনুযায়ী বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

করোনা বৃদ্ধ বয়সীদের জন্য অধিকতর বিপজ্জনক হলেও রোগটি এখন ক্রমশ শিশু-কিশোর-যুবক-যুবতী সকলকেই আক্রমণ করছে। একদিকে যেমন প্রয়োজন ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা, তেমনই আবার প্রয়োজন দ্রুত তম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনমত করোনার টিকা নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা, বিষয়টিকে আরও ত্বরান্বিত করা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ করা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনা রাজশাহীতে সরকারি হাসপাতালগুলিতে বর্তমানের চাইতে কমপক্ষে ২৫ ভাগ শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, অনুরূপ হারে আই সি ইউ শয্যা বৃদ্ধি ও অক্সিজেন প্রাপ্তি ও বিতরণের প্রয়োজনানুরূপ ব্যবস্থা, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও শতকারা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করা কারণ, বরাবরই হাসপাতালগুলিতে এঁদের সংখ্যা অত্যন্ত কম।

সাথে সাথে করোনা প্রতিরোধেল ক্ষেত্রে সর্বজনীন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর মনোভাব গ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার এর ব্যাপক প্রয়োগ, যেমন হাতে, সকল প্রকার যানবাহনে তাদের প্রতিটি ষ্টপেজে যাত্রী ওঠানামাকালে যে যান-বাহন রিকসা, ষ্কুটার বা অন্য যাই হোক না কেন। বাড়ীর সকল ঘরের মেঝে, বারান্দাগুলিকে রোজ স্যনিটাইজার করাও অপরিহার্য্য।

গণপরিবহন পূরোপূরি বন্ধ রাখ, অফিস আদালত, কল-কারখানা বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় রোগের প্রকোপ শনৈ: শনৈ: বৃদ্ধির কারণে অপরিহার্য্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার বিপণী হোটেল সমূহ পর্য্যটন কেন্দ্র প্রভৃতিও বন্ধ রাখার (কমপক্ষে তিন সপ্তাহের জন্যে) প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য্য।

হ্যাঁ, এতে আর্থিক ক্ষেত্রেও বিপর্য্যয় নেমে আসবে। তবু উপায় নেই। মানুষের জীবন বাঁচানোর চাইতে বড় কোন কাজ নেই। তাই এগুলি করতে হবে-এবং অত্রন্ত দ্রুততার সাথে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদেরকে আর্থিক সহায়তা অবশ্যই দিতে হবে।

কারণ হিসেবে আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাকেই স্মরণে আনা প্রয়োন। সেই কবে থেকে চলচে লক ডাউন-তবুও রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এমনটি তো হওয়ার কতা না এই দীর্ঘ লক ডাউনের ফলে। কিন্তু রোগের প্রকোপ বাড়ছেই।

এবার যে ৩০ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করে অতীতের চাইতে কিছু কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলো-তাতে কি রোগের প্রাদুর্ভাব সংক্রমণ ও মৃত্যু কমবে। এ ব্যাপারে সরকারে উচিত বিশেষজ্ঞদের মতামত অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।

নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলি বারবার দেখাচ্ছে ভারত তৃতীয় ঢেউ এর আশংকায়। ওখানকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অক্টোবরের মধ্যেই করোনার তৃতীয় ঢেউ ভারতকে গ্রাস করতে পারে।

ঐ ঢেউ এলে বাংলাদেশও পার পাবে না-যতই সীমান্ত সিল করা হোক না কেন। ইতোমধ্যেই সীমান্ত বন্ধ থাকা সত্বেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঢাকাতে কয়েকজনের দেহে ধরা পড়েছে। যার কবলে পড়ে জনা তিনেক শিশু তাদের চোখ হারিয়েছে।

আবার জুলাইতে এসে যাচ্ছে ঈদ-উল-আযহা। এই ঈদে অগণিত মানুষ নিজ নিজ জেলায় ও গ্রামের দিকে ছুটবেন। সৌদি আরব বিদেশীদের জন্য পর পর দুই বছর হজ্জ্ব যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে করোনার কারণে।

আমরা কি পারব ঈদ-যাত্রা ঠেকাতে-গাড়ী-ঘোড়া-লঞ্চ-ষ্টীমার-রিকসা ষ্টুটার ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে ১৫ দিন পর পর্য্যন্ত বন্ধ রাখতে? গরুর হাট নয়-বেপারীকে ফোনে অর্ডার দিয়ে বাড়ীতে গরু পৌঁছে দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে, দেশের সর্বত্র কোরবানীর পর ঐ দিনের বা রাত ১০টার মধ্যে তাবৎ বর্জ্য বাধ্যতামূলকভাবে পরিস্কার করার নির্দেশ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলিতে দিতে।

অতীতের পুরাতন প্রবর্চনাটিকে উল্লেখ করি “সাবধানের মার নেই”।