পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুকে বাল্যবিবাহ, অবশেষে হলো লাশ
- প্রকাশিত সময় ১০:২০:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
- / 111
ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধিঃ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুকে রাখী খাতুন(১৬) নামের এক স্কুল ছাত্রীর বাল্য বিবাহের প্রায় আড়াই বছরের মাথায় পারিবারিক অশান্তিতে ওই গৃহবধূর অত্মহত্যা ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভেড়ামারা পূর্বপাড়াতে এঘটনা ঘটেছে। তিনি ঐ এলাকার সেনা সদস্য সুজন আহম্মেদ এর স্ত্রী ও মোকছেদ আলীর পুত্রবধূ এবং ভেড়ামারা দিয়ার পাড়া লাকার হারুণ আর রশিদের কন্যা।
নিহতের পিতার দাবী তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবী তাদের পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরাত হাল প্রতিবেদন শেষে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন।
সরেজমিন উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভেড়ামার এলাকা ঘুরে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের দিকে ভেড়ামারা পূর্বপাড়া এলাকার মোকছেদ আলীর ছেলে সুজন মাহম্মুদ এর সাথে নগদ সাড়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুকে ভেড়ামারা দিয়ারপাড়া গ্রামের হারুণ অর রশিদ এর মেয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাখী খাতুনের বিবাহ হয়।
মূলত শ্বশুর বাড়ির যৌতুকের টাকা নিয়ে মোটা আঙ্কের উৎকোচ দিয়েই সুজন আহম্মেদ সেনা সদস্যের চাকুরী নিয়েছে এমন অভিযোগ করছেন সুজন আহম্মেদ এর শ্বশুর হারুণ অর রশিদ।
কিন্তু সেনা বাহিনীতে প্রশিক্ষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ এই বিবাহের ঘটনা গোপন রাখেন। এভাবে সুজন আহম্মেদ দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষ করে বাড়িতে আসলে বিবাহিত বধূ রাখী খাতুনকে তার ঘরে তুলে নেন।
বর্তমানে রাখী খাতুন শ্বশুরবাড়িতে থেকেই ভেড়ামারা উদায়ন একাডেমীর ১০ম শ্রেণিতে পড়া লেখা করত। কিন্তু সম্প্রতি সেনা সদস্য সুজন আহম্মেদ তার জনৈক খালাতে বোনের সাথে পরকীয়া গড়ে ওঠে এবং তাদের সংসারে অশান্তির তৈরি হয়।
এনিয়ে মাঝে মধ্যেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হত না। এমন অবস্থার মধ্যে গত কয়েকদিন আগে সুজন আহম্মেদ ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষে সুজন আহম্মেদ বাড়ি থেকে আবার চাকুীতে গেলে সোমবার(২৮জুন) দিবাগত রাতে তার শয়ন ঘরে রাখী খাতুনকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ডাবের সাথে ঝুলতে দেখতে পেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন উদ্ধার করেন।
ততক্ষণে তিনি মুত্যুবরণ করেছেন বলে দাবী করেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অপর দিকে, রাখী খাতুনের পিতা হারুল আর রশিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মহিষ বিক্রি করে জামাই সুজনের চাকুরীবাবদ সাড়ে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে বিবাহ দিয়েছিলাম।
কিন্তু চাকুরীর পেয়ে প্রশিক্ষণ শেষে সেই জামাই তার মেয়ের সাথে ভালো আচারণ করে নাই। সেই কারণে তার মেয়ে আজ লাশ হলো।
সুজন আহম্মেদ ও রাখী খাতুন এর বিবাহ নিবন্ধক ভেড়ামারা এলাকার কাজী মোক্তার হেসেন বলেন , ৬ লাখ টাকা দেনমহরে প্রায় ২বছর পূর্বে তাদের বিবাহ পড়ানো হয়েছে মর্মে স্বীকার করেছেন।
ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মুঃ ফয়সাল বিন আহসান বলেন ভেড়ামারা এলাকায় রাখী খাতুন নামের এক গৃহবধূর আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরৎহাল প্রতিবেদন শেষ ময়না তদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পাওয়া যাবে।