সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি
- প্রকাশিত সময় ০১:১৮:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 64
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের উজানের পাহাড়ী ঢল ও প্রচুর বৃষ্টিপাতে দেশের তাঁত ও দুগ্ধশিল্প ক্ষ্যাত যমুনা নদীতে পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর ও গোহালা নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে শাহজাদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে । এতে পানিবন্দী হয়ে পড়া প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরম বেড়েছে।
ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটছে। আবার অনেকেই পরিবার পরিজন ও গবাদীপশু নিয়ে নদী তীরবর্তী উচু বাঁধে
আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক স্থানে নলক‚প তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব স্থানে দুস্থ ও অসহায় মানুষের হাতে কাজ না থাকায় তাদের মাঝে খাবার সংকট ক্রমশঃ ঘনিভ‚ত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক আকার ধারণ করেছে। পানিবাহিত নানা রোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।
অনেক স্থানে গ্রামীণ সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এর ওপর দিয়ে নৌকা যোগে চলাচল করছে পানিবন্দী মানুষ। অনেক স্থানে তাঁত কারখানায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও হ্যান্ড থাইজিং করতে না পারায় অসংখ্য তাঁতী মহাজন ও শ্রমিকেরা মহাবিপাকে পড়েছে।
ইতিমধ্যেই উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক গবাদিপশু নিয়ে গো-খামারিরা মহাবিপাকে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে কাঁচা ঘাসের তীব্র সংকট। এদিকে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ও যমুনার প্রবল স্রোতে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ৬ গ্রামে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
গত ১ সপ্তাহে এসব গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিস্তৃত ফসলী জমি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পাউবো এসব স্থানে জিও টেক্সটাইল বস্তা ফেললেও ভাঙনের তান্ডব রোধ না হয়ে এর তীব্রতা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। ফলে আতংকিত হয়ে প্রতিটি মুহ‚র্ত চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে যমুনা তীরবর্তী এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েকদিন ধরে উজানের ঢল ও ভারিবর্ষণে যমুনা, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর ও গোহালা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শাহজাদপুর উপজেলার রূপপুর উরিরচর, শান্তিপুর, পোরজনা, জামিরতা, কৈজুরি, জালালপুর, খুকনি, সোনাতুনী, গালা, রূপবাটি, কায়েমপুর ও পোতাজিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ জানান, গত ১ সপ্তাহে যমুনা তীরবর্তী জালালপুর ইউনিয়নের ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলা, জালালপুর, বাঔখোলা, ভ্যাকা ও কুঁঠিপাড়া গ্রামে ভাঙনের তান্ডবলীলা চলছে। যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে ওই ৬ গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলী জমি ইতিমধ্যেই যমুনায় বিলীন হয়েছে।
এ ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ভাঙন ও বন্যাকবলিত অসহায় এসব জনমানুষের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, জালালপুর ইউনিয়নে নদীভাঙন ও বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৫ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা
হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কৈজুরি, সোনাতনী ও খুকনি ইউনিয়নে আরও ৯ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে।