ঢাকা ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

পাবনার চলনবিলে এবার ২ হাজার টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৪:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 98

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :চলনবিল এলাকায় বন না থাকলেও আছে বিস্তীর্ণ সরিষা খেত। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে চলনবিলের মাঠগুলোতে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখা যায়। দেখে মনে হয় মাঠগুলোতে যেন হলুদ গালিচা বিছানো। এমন দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

বিখ্যাত কবি নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য তার কাজের লোক কবিতায় লিখেছেন “মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই।” “ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য অনেক বছর পূর্বে তার কবিতায় যে চরণগুলো লিখেছিলেন চলনবিল এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিলছে তার সত্যতা।

এক সময়ের মৎস খ্যাত চলনবিল এখন মধুর বিলে পরিণত হয়েছে। মৌ চাষীরা ধারণা করছেন এবার চলনবিল এলাকার সরিষা
খেত থেকে আনুমানিক প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে যার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, শাজাদপুর, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে জমিতে বোরো চাষ করেন তারা।

অগ্রহায়ন মাস থেকে পাবনা, নাটোর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাতক্ষিরা, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌখামারীরা মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। খামারের মৌ বক্স গুলো তারা সরিষা খেতের পাশে স্থাপন করেন এবং কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষিরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের মৌখামারী ইমদাদ হোসেন সরিষার মধু সংগ্রহে এসেছেন চলনবিলে। চলনবিলের চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা খেতের পাশে গত ২৮ নভেম্বর তিনি তার ১৮০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন।

ইমদাদ হোসেন জানান, মৌমাছি এখন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বক্সে সাঁচে জমা করছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু করতে পারবেন তিনি।

এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে মধু সংগ্রহ করতে পারবো। এ দুই মাসে ছয় থেকে সাত বার মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এক বারে ৮ থেকে ১০ মন মধু পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই মাসে ৬০ থেকে ৭০ মন মধু পেতে পারেন তিনি। বর্তমান প্রতি মন মধুর পাইকারী দাম ৭হাজার টাকা। প্রতি বছর এই এলাকা থকে পাইকাররা মধু কিনে বিভিন্ন কোম্পানীতে সরবরাহ করেন।

চলনবিলে প্রায় এক হাজার মৌচাষী মধু সংগ্রহে আসেন। খামার গুলোতে প্রায় তিন থেকে চার হাজার শ্রমিকের কর্ম সংস্থান হয়। ২০২০ সালে খামারীরা মধুর ভালো দাম পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় ৮ শত খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। কয়েক দিনের মধ্যে আরো খামারী এ এলাকায় মধু সংগ্রহে আসবেন।

ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আনুমানিক প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে যার বাজার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ পাবনার ভাঙ্গুড়াতে মাঠ জুড়ে সবুজ আর হলুদের সমারোহ

পাবনার চলনবিলে এবার ২ হাজার টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত সময় ০৪:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :চলনবিল এলাকায় বন না থাকলেও আছে বিস্তীর্ণ সরিষা খেত। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে চলনবিলের মাঠগুলোতে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখা যায়। দেখে মনে হয় মাঠগুলোতে যেন হলুদ গালিচা বিছানো। এমন দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

বিখ্যাত কবি নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য তার কাজের লোক কবিতায় লিখেছেন “মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই।” “ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য অনেক বছর পূর্বে তার কবিতায় যে চরণগুলো লিখেছিলেন চলনবিল এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিলছে তার সত্যতা।

এক সময়ের মৎস খ্যাত চলনবিল এখন মধুর বিলে পরিণত হয়েছে। মৌ চাষীরা ধারণা করছেন এবার চলনবিল এলাকার সরিষা
খেত থেকে আনুমানিক প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে যার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, শাজাদপুর, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে জমিতে বোরো চাষ করেন তারা।

অগ্রহায়ন মাস থেকে পাবনা, নাটোর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাতক্ষিরা, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌখামারীরা মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। খামারের মৌ বক্স গুলো তারা সরিষা খেতের পাশে স্থাপন করেন এবং কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষিরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের মৌখামারী ইমদাদ হোসেন সরিষার মধু সংগ্রহে এসেছেন চলনবিলে। চলনবিলের চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা খেতের পাশে গত ২৮ নভেম্বর তিনি তার ১৮০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন।

ইমদাদ হোসেন জানান, মৌমাছি এখন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বক্সে সাঁচে জমা করছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু করতে পারবেন তিনি।

এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে মধু সংগ্রহ করতে পারবো। এ দুই মাসে ছয় থেকে সাত বার মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এক বারে ৮ থেকে ১০ মন মধু পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই মাসে ৬০ থেকে ৭০ মন মধু পেতে পারেন তিনি। বর্তমান প্রতি মন মধুর পাইকারী দাম ৭হাজার টাকা। প্রতি বছর এই এলাকা থকে পাইকাররা মধু কিনে বিভিন্ন কোম্পানীতে সরবরাহ করেন।

চলনবিলে প্রায় এক হাজার মৌচাষী মধু সংগ্রহে আসেন। খামার গুলোতে প্রায় তিন থেকে চার হাজার শ্রমিকের কর্ম সংস্থান হয়। ২০২০ সালে খামারীরা মধুর ভালো দাম পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় ৮ শত খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। কয়েক দিনের মধ্যে আরো খামারী এ এলাকায় মধু সংগ্রহে আসবেন।

ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আনুমানিক প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে যার বাজার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ পাবনার ভাঙ্গুড়াতে মাঠ জুড়ে সবুজ আর হলুদের সমারোহ