পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রায় ৮ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
- প্রকাশিত সময় ০৬:০৭:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১
- / 157
ঈশ্বরদী প্রতিনিধিঃ ৭ কোটি ৭৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৭২ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া জিসিএম হতে আটঘরিয়া উপজেলা হেডকোয়াটার পর্যন্ত ৬.৫১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে । স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও সুফল পাচ্ছেন না।
নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালি দিয়ে ঠিকাদার কাজ করছেন অভিযোগ স্থানীয়দের। সরকারী প্রকল্পের আওতায় এলজিইডি ঈশ্বরদীর তত্ত্বাবধানে চলছে এই নির্মাণ কাজ।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হলো পাবনার মেসার্স জিনাত আলী জিন্নাহ লিমিটেড কনস্ট্রাকশন ফার্ম। ঈশ্বরদী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক দাশুড়িয়া জিসিএম হতে আটঘরিয়া উপজেলা হেডকোয়াটা পর্যন্ত।
সড়কটি মেরামত ও সড়কের পার্শ্ব প্রসস্থতার জন্য সরকারী প্রকল্পের আওতায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ টাকা বরাদ্ধ দেয়। এলজিইডি ঈশ্বরদীর তত্ত্বাবধানে শিডিউল অনুযায়ী সড়কটি ১৮ ফুট চওড়া ও ৬ ইঞ্চি খোয়া এবং ৪০ মিলি কার্পেটিং দিয়ে মেরামত করার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে খোয়া ঢালাইয়ের সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৩ ইঞ্চি রাবিশ খোয়া দিয়ে প্রায় ২.০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে।
রাস্তাটির কাজ পান পাবনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিনাত আলী জিন্নাহ লিমিটেডের কনস্ট্রাকশন ফার্ম। কাজের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠিানটি প্রসস্থ সাববেজটির ২ কিলোমিটার ভালমতো রোলার না করেই তড়িঘড়ি করে নিম্নমানের খোয়া (পোড়া মাটি) ব্যবহার করেছেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়কের কাজে বাঁধা দেন।
এলাকার আথাইলশিমুল, মাড়মী, মুনশিদপুর ও সুলতানপুর গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদার সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে দিনের বেলায় ট্রাক ট্রাক রাবিশ খোয়া (পোড়ামাটি) এনে সাববেজে ঢেলে ছিটিয়ে দিয়েছে।
শনিবার ১১ ডিসেম্বর সকালে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কাজে বাঁধা দিলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার ০৩ টি ট্রাক ভর্তি রাবিশ খোয়া নিয়ে পাবনাতে ফেরত যায়।
এ সময় এলাকার জাহাবুল ইসলাম বলেন অতিনিম্ন মানের খোয়া দিয়ে রাস্তা তৈরি হলে রাস্তা টেকশই হবেনা এবং অত্র এলাকার দূর্ভোগ আগের মতই রয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন ঈশ্বরদী উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল কবির ও এসও সরোয়ার হোসেনকে অভিযোগ জানানোর জন্য ফোন দিলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
আথাইল শিমুল গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আফিল উদ্দিন বলেন, আমাদের এই রাস্তার কাজ করতেছে ৩ নং ইট দিয়ে, আমরা কয়েকজন মিলে তাই বাধা দিছি কাজে। বাধা দেয়ার পরে তারা খারাপ ইটের খোঁয়া সরায়ে নিচ্ছে। এমন ইট দিয়ে যদি কাজ চলে রাস্তা খুবই খারাপ হবে তাতে আমাদের চলাচলের খুবই অসুবিধা হবে।
সাবেক মেম্বার আব্দুল বারেক প্রধানের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নির্মাণাধীন রাস্তাটি দীর্ঘদিন সমস্যার পরে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা লক্ষ করতেছি রাস্তার যেভাবে কাজ হচ্ছে যথাযথভাবে হচ্ছেনা। নিম্নমানের ইট খোয়া দিয়ে তারা কোনমতো লোক দেখানো কাজ করে যাচ্ছে।আমরা গত শুক্রবার ১০ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত বার বার বলার পর ও খারাপ খোয়া ফেলে নামমাত্র রোলার করে চলে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী এলজিইডির কর্মকর্তাদের প্রতি অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদারের সঙ্গে তাদের যোগসাজস আছে।এজন্য কেউই মাঠে নেই। ঝুলানো হয়নি কোনো কার্যতালিকার (ওয়ার্ক অর্ডার) সাইনবোর্ড।
আবার রোডের ধারে সীল করা গাছগুলো না কেটেই এজিং করা হয়েছে। যার ফলে কোথাও ১৭ ফিটে আবার কোথাও ১৮ ফিট প্রসস্থে রাস্তা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান এলজিডি কর্তৃপক্ষ আমাদের মাধ্যমে গাছগুলোতে সীল করেছে, প্রকৃতপক্ষে জেলা পরিষদের আওতায় রাস্তার দুধারে বৃক্ষরোপন হয়েছিল। এখন রাস্তার দুধারের সুলতানপুর দরগাজার পর্যন্ত মেহগণি গাছসহ কয়েক প্রজাতির প্রায় আড়াইশত গাছ কাটার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এ কর্মকর্তা জানান এ বিষয়টি আমার জানা নেই তবে গাছে আমরা সীল করেছিলাম।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় বনবিভাগ বা এলজিইডি কর্তপক্ষ গাছগুলো কাটেনি, কেটে নিয়ে গেছে এলাকার কতিপয় দূবৃত্তরা।
সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে জানার জন্য ঠিকাদার জিনাত আলী জিন্নাহ কে ফোন করেও পাওয়া যায় নাই।
তাছাড়া এ ব্যাপারে এলজিইডি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, নিম্নমানের খোয়া দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এবং ৩ (তিন) ট্রাক মালামাল রাবিশ খোয়া ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এবং পরবর্তীতে সঠিক মানের ইট, খোয়া দিয়ে কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে মৌখিক ভাবে নির্দেশ প্রদান করেছি।