পাবনার চাটমোহরে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে স্বীকৃতি না দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা!
- প্রকাশিত সময় ০৭:০৮:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২
- / 112
চাটমোহর প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহরের হান্ডিয়াল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বেজপাটিয়াতা গ্রামে মো: আব্দুস সামাদ (ঠান্টুর) ছেলে আব্দুল হালিম (৩৫) এর বাড়িতে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে ধর্ম পরিবর্তন করা ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মোছা: রত্না খাতুন (৩০) ৩ মাস যাবত অবস্থান করছে।
একই সাথে তার স্বামী হালিম হোসেনের বাড়িতেই শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রত্না অনশন শুরু করেন।
শ্বশুরের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা রত্নাকে হত্যা করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ করে অন্তঃসত্ত্বা রত্না বলেন, মৃত লসিমুদ্দির ছেলে জাহাঙ্গীর ও সাইদুল, আমার শ্বশুর আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী মঞ্জিলা খাতুনসহ তার দুই ছেলে রিপন ও ঠান্টু মিলে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর ২০২১) রাতের বেলায় আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করার সময় আমি নিজে আরাল থেকে শুনেছি।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ও আমার চাচা শশুর আব্দুল মান্নানসহ গ্রামের অনেক কেই জানিয়েছি। এদিকে ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হওয়া নারীকে বিয়ে করার পর স্ত্রীর স্বীকৃতির না দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা এলাকা জুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বেজপাটিয়াতা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুল হালিম পূর্বে আরোও দুইটা বিয়ে করেছিল একজনকে ডিভোর্স দিয়েছে বাড়ীতে ২ টি সন্তান ও মেজো বউ আছে এবং ছোট বউ রত্না খাতুন সাতক্ষিরা জেলার দেভাটা উপজেলার হিজলডাঙ্গা গ্রামের শ্রী সুভল চন্দ্রের মেয়ে।
আব্দুল হালিম ২০১৭ সলে গাবতলিতে পাথরের ব্যবসা করতো। সেই সুবাদে ঢাকার গাবতলিতে রত্না খাতুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আব্দুল হালিম নিজের পূর্বের বিয়ের কথা আড়াল করে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক রত্নাকে বিয়ে করে এবং তার সঙ্গে তিন বছর সংসার করে।
হালিমের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই শুরু করতো বিভিন্ন তাল-বাহানা। বিভিন্ন অজুহাতে নিত মোটা অংকের টাকা। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে রত্নার কাছ থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা দাবি করলে রত্না দিতে অস্বীকার করলে রত্নাকে রেখে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। রত্নার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
উপায় না পেয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে হাজির হন স্বামীর গ্রামের বাড়ীতে। অভিযোগও দিয়েছেন থানায়। ধর্না ধরেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামের মুরুব্বিদের কাছে। তবুও মিলছেনা প্রতিকার।
অনশনরত রত্না খাতুন জানান, আমি হিন্দু ছিলাম পরে মুসলিম হয়ে একজন মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করি। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই আব্দুল হালিমের সাথে পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে আমার আগের সংসার ভেঙ্গে যায়।
দুই বছর প্রেমের সম্পর্কের পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ হাজার টাকা কাবিন দিয়ে ইসলামি শরীয়ত মাতাবেক ঢাকার গাবতলিতে হালিমের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ঢাকা গাবতলি ভাড়া বাসায় দীর্ঘ ৩ বছর আমার সাথে তার সংসার হয়।
বিয়ের পর আব্দুল হালিম আমার কাছ থেকে গ্রামের বাড়ী মেরামত ও তার ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সময়ে আমার গরু ও পুকুরের মাছ বিক্রির প্রায় ৭ লক্ষ টাকা নিয়েছে।
পুনরায় আমার নিজ নামের সম্পত্তি বিক্রি করে আবারো ১০ লক্ষা টাকা দাবি করে এবং বলে টাকা না দিলে আমার মা-বাবা মেনে নেবে না। আমি তখন টাকা দিতে অস্বীকার করি।
এখন আমি নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে এখানে ৩ মাস যাবত স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে অবস্থান করছি। আমি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে আমি যাব না, আমার লাশ যাবে।
আব্দুল হালিমের চাচা আব্দুল মান্নান বলেন, আমার ভাতিজা তাকে বিয়ে করেছে এটা কাবিননামায় দেখেছি এখন মেয়েটা অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটাকে রেখে বাড়ীর সবাই পালিয়েছে তিন-চার দিন যাবত আমার বাড়ীতে আছে এখন দ্রুত এটার ফয়সালা হলে মেয়েটার জন্য ভাল হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে হান্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল করিম এম এ বলেন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টা স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে হান্ডিয়াল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম নুরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটি লিখিত অভিযাগ দিয়েছে। বিষয়টা তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।