ঢাকা ০৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

শেরপুরে পুলিশের সামনেই কুপিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, পুলিশ কী করলো?

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৫:২৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
  • / 124

শেরপুর পুলিশ

শেরপুরে পুলিশের সামনে একজন ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

উনিশ দিন আগে ওই হত্যার ঘটনা ঘটলেও ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকদিন আগে।

এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কারণ ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু পুলিশকে সেটি ঠেকাতে দেখা যায়নি।

তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে কোন সহিংসতা চলাকালে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নীরব ভূমিকা পালনের।

কি রয়েছে ভিডিওতে?
হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনাটি ঘটে তেসরা মার্চ, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার হালুয়াকাটি এলাকায়।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক মানুষের উপস্থিতিতে একজন ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে কয়েকজন।

কাছেই ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাদের সামনেই ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

একজন সদস্য হত্যাকাণ্ড ঠেকানোর জন্য এগিয়ে গেলেও তাকে আরেকজন ঢেলে নিয়ে আসে।

কে এই ভিডিও ধারণ করেছে, তা নিশ্চিত নয়। বিবিসি ভিডিওটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি, তবে ভিডিওটি বানোয়াট নয় বলে পুলিশের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে।

ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, “পুলিশের সামনেই যদি হত্যা হয়, তাহলে এই বাহিনী কি জনগণের??? না এরা বিরোধী মতবাদকে দমন করতে করতে ক্লান্ত??”

জিসান আহমেদ মন্তব্য করেছেন, “অনেক খারাপ হয়েছে, পুলিশের সামনে তারা হত্যা করল, অনেক খারাপ হয়েছে”।

তবে তাজ মোহাম্মদ মন্তব্য করেছেন, “দুঃখজনক ভিডিওটি আমি খুব ভালোভাবে পুরোটা দেখেছি, কিন্তু এখানে পুলিশের কোন দোষ নেই”। সেখানে পুলিশ গেছিল থামানোর জন্য। কিন্তু দৌড়ে এসে একজনকে এভাবে হত্যা ঠেকানো কয়েকজন পুলিশের পক্ষে কখনোই সম্ভব না, ফেসবুকে লিখেছেন তাজ মোহাম্মদ।

পলাশ মৃধা লিখেছেন, “এখন থেকে বিচার পেতে হলে আগে ভাইরাল করতে হবে তা নাহলে বাংলাদেশে বিচার পাওয়া মুশকিল”।

কী বলছে শেরপুরের পুলিশ?
ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে শেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান নাহিদ চৌধুরীর সঙ্গে।

তিনি বলছেন, “ওখানে পুলিশের কিছু দুর্বলতা ছিল, এটা ঠিক। সেটা জানতে পেরেই আমরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আমাদের দুর্বলতার বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি বলেই ব্যবস্থা নিতে পেরেছি”।

মি. চৌধুরী দাবি করেন, এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগেই ওই কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে তার দায়-দায়িত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, হঠাৎ করে আক্রমণ হওয়ায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তারা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় তারাও একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, বিবিসিকে বলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার।

তাদের আচরণকে পেশাদারিত্বের ঘাটতি বলে উল্লেখ করেন মি. চৌধুরী।

এ ধরণের ঘটনায় সর্বোচ্চ চাকরি হিসাবে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে আগে থেকেই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করতে সেদিন পুলিশ ওই স্থানে গিয়েছিল। সে সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে।

গ্রেপ্তারের পর দুইজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেনি ভুক্তভোগীর পরিবার।

হামলা-সহিংসতায় পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব থাকার অভিযোগ
এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগেও সহিংস ঘটনা বা মারামারির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব থাকার বা সহিংসতা ঠেকাতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসেই বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে তাদেরও পর হামলা চালানো হয়।

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময়ও অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে।

এমনকি সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলার সময় পুলিশের সামনেই বাংলাদেশের একাধিক স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল।

কিন্তু যেখানে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা বা সহিংসতা ঠেকানোই পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব, সেখানে তাদের এরকম নীরব ভূমিকার পেছনে কি কারণ কাজ করে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, পুলিশের মূল কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

”কিন্তু সমস্যা হলো ব্যক্তিগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। পুলিশকে বাংলাদেশে ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আবার আইনেও পুলিশকে এমন কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে,” তিনি বলছেন।

অধ্যাপক রহমান বলছেন, ”বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী, তারা পুলিশকে ব্যবহার করে নানারকম অপরাধ করে থাকে। এই অপরাধের কোন না কোন লভ্যাংশ পুলিশের একটা অংশ ভোগ করছে।”

”ফলে পুলিশের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদের কোন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ চুপ করে থাকে। এই আনহোলি অ্যালায়েন্সের (অসৎ সম্পর্ক) কারণে অনেক সময় দেখা যায়, তার সামনে সহিংসতা ঘটলেও পুলিশ নিশ্চুপ থাকে, সক্রিয়ভাবে কাজ করে না”, বলছেন অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান।

বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নানা নির্দেশনা রয়েছে।

প্রশিক্ষণেও এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের করণীয় বিষয়ে শেখানো হয়ে থাকে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিন্তু শেরপুরের ঘটনায় পুলিশের সদস্যদের সেরকম কোন আচরণ করতে দেয়া যায়নি।

একে পেশাদারিত্বের ঘাটতি বলে কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন।

শেরপুরের হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলছেন, ”এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, এখানে কি পুলিশের সদস্যরা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছেন নাকি আঁতাতের কোন ব্যাপার আছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে পরিষ্কার হতে পারে।”

তবে শেরপুরের পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি আছে কিনা, সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, সে নিয়ে তদন্ত চলছে।

সেই তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। – বিবিসি

 

আরও পড়ুনঃ

শেরপুরে পুলিশের সামনেই কুপিয়ে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, পুলিশ কী করলো?

প্রকাশিত সময় ০৫:২৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

শেরপুরে পুলিশের সামনে একজন ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

উনিশ দিন আগে ওই হত্যার ঘটনা ঘটলেও ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকদিন আগে।

এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কারণ ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু পুলিশকে সেটি ঠেকাতে দেখা যায়নি।

তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে কোন সহিংসতা চলাকালে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নীরব ভূমিকা পালনের।

কি রয়েছে ভিডিওতে?
হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনাটি ঘটে তেসরা মার্চ, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার হালুয়াকাটি এলাকায়।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক মানুষের উপস্থিতিতে একজন ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে কয়েকজন।

কাছেই ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তাদের সামনেই ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

একজন সদস্য হত্যাকাণ্ড ঠেকানোর জন্য এগিয়ে গেলেও তাকে আরেকজন ঢেলে নিয়ে আসে।

কে এই ভিডিও ধারণ করেছে, তা নিশ্চিত নয়। বিবিসি ভিডিওটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি, তবে ভিডিওটি বানোয়াট নয় বলে পুলিশের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে।

ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, “পুলিশের সামনেই যদি হত্যা হয়, তাহলে এই বাহিনী কি জনগণের??? না এরা বিরোধী মতবাদকে দমন করতে করতে ক্লান্ত??”

জিসান আহমেদ মন্তব্য করেছেন, “অনেক খারাপ হয়েছে, পুলিশের সামনে তারা হত্যা করল, অনেক খারাপ হয়েছে”।

তবে তাজ মোহাম্মদ মন্তব্য করেছেন, “দুঃখজনক ভিডিওটি আমি খুব ভালোভাবে পুরোটা দেখেছি, কিন্তু এখানে পুলিশের কোন দোষ নেই”। সেখানে পুলিশ গেছিল থামানোর জন্য। কিন্তু দৌড়ে এসে একজনকে এভাবে হত্যা ঠেকানো কয়েকজন পুলিশের পক্ষে কখনোই সম্ভব না, ফেসবুকে লিখেছেন তাজ মোহাম্মদ।

পলাশ মৃধা লিখেছেন, “এখন থেকে বিচার পেতে হলে আগে ভাইরাল করতে হবে তা নাহলে বাংলাদেশে বিচার পাওয়া মুশকিল”।

কী বলছে শেরপুরের পুলিশ?
ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে শেরপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান নাহিদ চৌধুরীর সঙ্গে।

তিনি বলছেন, “ওখানে পুলিশের কিছু দুর্বলতা ছিল, এটা ঠিক। সেটা জানতে পেরেই আমরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আমাদের দুর্বলতার বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি বলেই ব্যবস্থা নিতে পেরেছি”।

মি. চৌধুরী দাবি করেন, এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগেই ওই কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে তার দায়-দায়িত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, হঠাৎ করে আক্রমণ হওয়ায় প্রথমে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তারা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় তারাও একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, বিবিসিকে বলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার।

তাদের আচরণকে পেশাদারিত্বের ঘাটতি বলে উল্লেখ করেন মি. চৌধুরী।

এ ধরণের ঘটনায় সর্বোচ্চ চাকরি হিসাবে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে আগে থেকেই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরির তদন্ত করতে সেদিন পুলিশ ওই স্থানে গিয়েছিল। সে সময় হামলার ঘটনাটি ঘটে।

গ্রেপ্তারের পর দুইজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলেও মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেনি ভুক্তভোগীর পরিবার।

হামলা-সহিংসতায় পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব থাকার অভিযোগ
এই ঘটনাই প্রথম নয়, এর আগেও সহিংস ঘটনা বা মারামারির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নীরব থাকার বা সহিংসতা ঠেকাতে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসেই বরিশাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে তাদেরও পর হামলা চালানো হয়।

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময়ও অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেছে।

এমনকি সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন চলার সময় পুলিশের সামনেই বাংলাদেশের একাধিক স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল।

কিন্তু যেখানে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা বা সহিংসতা ঠেকানোই পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব, সেখানে তাদের এরকম নীরব ভূমিকার পেছনে কি কারণ কাজ করে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, পুলিশের মূল কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

”কিন্তু সমস্যা হলো ব্যক্তিগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে বা অর্থনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। পুলিশকে বাংলাদেশে ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আবার আইনেও পুলিশকে এমন কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে,” তিনি বলছেন।

অধ্যাপক রহমান বলছেন, ”বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী, তারা পুলিশকে ব্যবহার করে নানারকম অপরাধ করে থাকে। এই অপরাধের কোন না কোন লভ্যাংশ পুলিশের একটা অংশ ভোগ করছে।”

”ফলে পুলিশের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদের কোন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ চুপ করে থাকে। এই আনহোলি অ্যালায়েন্সের (অসৎ সম্পর্ক) কারণে অনেক সময় দেখা যায়, তার সামনে সহিংসতা ঘটলেও পুলিশ নিশ্চুপ থাকে, সক্রিয়ভাবে কাজ করে না”, বলছেন অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান।

বাংলাদেশের পুলিশ প্রবিধানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নানা নির্দেশনা রয়েছে।

প্রশিক্ষণেও এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের করণীয় বিষয়ে শেখানো হয়ে থাকে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কিন্তু শেরপুরের ঘটনায় পুলিশের সদস্যদের সেরকম কোন আচরণ করতে দেয়া যায়নি।

একে পেশাদারিত্বের ঘাটতি বলে কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন।

শেরপুরের হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলছেন, ”এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, এখানে কি পুলিশের সদস্যরা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছেন নাকি আঁতাতের কোন ব্যাপার আছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে পরিষ্কার হতে পারে।”

তবে শেরপুরের পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে পুলিশ সদস্যদের গাফিলতি আছে কিনা, সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, সে নিয়ে তদন্ত চলছে।

সেই তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। – বিবিসি

 

আরও পড়ুনঃ