মুক্তিযুদ্ধের এক মাইলফলক : পাবনার ঐতিহাসিক ডাববাগান দিবস
- প্রকাশিত সময় ০৭:৫২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
- / 80
লেখা: এবিএম ফজলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ সন্ধ্যা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
আজ ১৯ এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধের এক মাইলফলক : পাবনার ঐতিহাসিক ডাববাগান দিবস।
আজ ১৯ এপ্রিল। ঐতিহাসিক পাবনার সাঁথিয়ার ডাববাগান দিবস। একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের ডাববাগানের যুদ্ধ আজও ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি। ডাববাগানের এই যুদ্ধ ছিল একাত্তরের এক মাইলফলক। নগরবাড়ীঘাট ছেড়ে পশ্চিম দিকে কাশিনাথপুর পেরিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের (বর্তমান নাম শাহীদনগর) ডাববাগান নামক স্থানে একাত্তরের ১৯ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।
একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার পর থেকেই সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের আরও সংগঠিত করে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। স্বাধীনতা ঘোষণার পর বাঙালিরা দেশব্যাপী পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকা থেকে আসা পাক হানাদার বাহিনী উত্তর জনপদের এই স্থানে মুক্তিসেনাদের সম্মুখে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিসেনাদের পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ইপিআর সুবেদার গাজী আলী আকবর। (বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গা গ্রামে)। এ যুদ্ধে বেশির ভাগ যোদ্ধা ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী আনসারসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা। এই রাস্তা দিয়ে পাকসেনারা নগরবাড়ী থেকে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মুক্তিসেনারা ডাববাগানে অবস্থান নেয়। প্রথমত পাকসেনারা সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতি স্বীকার ও হতাহতের পর পিছু হটে নগরবাড়ী ফিরে যায়। যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। চূর্ণ হয় তাদের শক্তি, ধ্বংস হয় তাদের মনোবল। এদিকে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয় ইপিআর হাবিলদার মমতাজ আলী, হাবিলদার আঃ রাজ্জাক, নায়েক হাবিবুর রহমান, সিপাহী এমদাদুল হক, সিপাহী ঈমান আলী, সিপাহী রমজান আলীসহ আরও অনেক ইপিআর সদস্য। পাক বাহিনী ওই সকল শহীদ ইপিআর সদস্যদের দেহ এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেয়।
ডাববাগানের এ যুদ্ধ বেলা দুপুরে শুরু হয়ে দিনভর চলে। সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয় বরণের পর পিছু হটে যাওয়া পাকবাহিনী নতুন করে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। শক্তি বৃদ্ধি করে রাত্রিবেলা আবার আক্রমন করে। এবার পাক বাহিনীর বিশাল শক্তির কাছে টিকতে না পেরে মুক্তিসেনারা পিছু হটে যায়। পাকসেনারা এবার গ্রামবাসীর উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। একে একে পুড়িয়ে দেয় ডাববাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামভদ্রবাটি, কোড়িয়াল, বড়গ্রাম, সাটিয়াকোলা প্রভৃতি গ্রাম। নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। লোকজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে এনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে শ’শ’ স্বাধীনচেতা গ্রামবাসীকে। এদের মধ্যে করমজার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আফাজ ডাক্তার, আঃ লতিফ, শেখ কাজেম আলী, খোয়াজ শেখ, পিয়ার মন্ডল, জাকের আলী শেখ, সৈয়দ আলী মোল্লা, জগনারায়ণ বিশ্বাস প্রমুখ। যে গাব গাছটির কাছে নিয়ে এসে গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল,সে গাব গাছটি এখনও কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে। আরও আছে সেই ডাববাগান। এলাকাবাসী জায়গাটির নতুন নামকরণ করেছে ‘শহীদ নগর’। একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের সেই ভয়াল রাতের কথায় শহীদনগরবাসী ফিরে যায় সেদিনের স্মৃতিতে। খুঁজে পেতে চায় সে সব শহীদ ভাইদের যাদের তাজা রক্তে ভিজে গেছে গ্রামের মেঠো পথ। শহীদ নগরে রয়েছে ইপিআরদের ‘গণকবর’। এখানে ঘুমিয়ে আছে শ শ মুক্তিপাগল গ্রামবাসী। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করার জন্য এখানে “বীর বাঙালি” নামে একটি ‘স্মৃতি সৌধ’ গড়ে তোলা হয়েছে।
লেখক: এবিএম ফজলুর রহমান
সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব ও স্টাফ রির্পোটার, দৈনিক সমকাল।
আরও পড়ুনঃ
এতিম ছাত্রদের সাথে ইফতার করলেন রাণীনগর যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন জয়
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জমি-জমা নিয়ে বিরোধে ১ ব্যক্তি খুন
গতকাল রোববার ছিল মুজিবনগরে সাধারণ ছুটি
সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্বপনকে দুর্বৃত্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে: হাসান আলীর বিবৃতি
ঈশ্বরদীতে মুজিবনগর দিবস পালিত
নাটোরে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
পাবনায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপনের আরও খবর
ঈশ্বরদীতে অবৈধ পলিথিন ফ্যাক্টরী সিলগালা, মালিক গ্রেফতার
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দেব-দেবী বেশে নেচে-গেয়ে চড়ক পূজোর অর্থসংগ্রহ
এতিম ছাত্রদের সাথে ইফতার করলেন রাণীনগর যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন জয়