কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা
- প্রকাশিত সময় ১১:০৬:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
- / 90
দফায় দফায় সুতা, রঙসহ তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় কাপড় তৈরি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না দেশের বৃহত্তম তাঁত সমৃদ্ধ অঞ্চল পাবনা ও সিরাজগঞ্জের প্রান্তিক তাঁতিরা।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিরা কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলেও বাজারে বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মো.হায়দার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত ১ দশকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ৬ লাখ তাঁতের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ তাঁতই বন্ধ হয়ে গেছে।
এ দুই জেলায় ২ থেকে আড়াই লাখ তাঁত সচল থাকলেও চড়া দামে কাঁচামাল নিয়ে কাপড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতে না পারায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে তাঁত শিল্প, জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নগরডালা গ্রামের তাঁতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তার কারখানার ৩০টি তাঁতের প্রায় সবগুলোই গত বছর বন্ধ ছিল। ঈদকে সামনে রেখে এ বছর ধার দেনা করে ২০টি তাঁত চালু করেছেন তিনি তবে লাভের মুখ দেখাতো দূরের কথা লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেছেন না।
নজরুল জানান, ঈদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গত সপ্তাহে ২০০ শাড়ি তৈরি করেছেন। প্রতিটি শাড়িতে উৎপাদন খরচ ৫০০ টাকার উপরে হলেও ৪৫০ টাকা দিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে।
তিনি জানান, গত সপ্তাহে পাইকাররা মাত্র ১২০টি শাড়ি তার কাছ থেকে কিনেছেন, এখনও ঘরে পরে আছে ৮০ টি শাড়ি তারপরও ঈদের শেষ মুহূর্তের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কারখানা চালু রাখছেন তিনি।
নজরুল বলেন, ঈদকে সামনে রেখে দেড় হাজার শাড়ি তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে তার, কিন্তু বাজারে কাপড়ের চাহিদা না থাকায় লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও ঘরেই জমা করে রাখতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
একই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ৪১টি তাঁত ছিল, করোনার থাবায় ক্রমাগত লোকসান আর দেনার দায়ে সব তাঁত বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
তাঁতিরা জানান, তাঁত কাপড়ের কাঁচামাল রঙ ও সুতার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক বছরে সুতার দাম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে অথচ কাপড়ের দাম সে তুলনায় বাড়েনি ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
তাঁতিরা জানান, প্রতি বান্ডিল ৫০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকায় যা গত বছর ছিল ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একই ভাবে ৬০ কাউন্ট সুতা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ টাকায় যদিও গত বছর এর দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। একিভাবে ৮০ কাউন্ট সুতা এখন ৩৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা রোল বিক্রি হচ্ছে যদিও তা গত বছর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
একই ভাবে রঙের দামও বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ।
পাবনার জালালপুর গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী মো. সবুর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সুতার দাম গত এক বছরে তিন দফা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রঙ ও সুতার দাম বাড়ার ফলে কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি কিন্তু বাজারে কাপড়ের দাম মাত্র ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না তাঁতিরা।
সবুর বলেন, তার করখানায় চার পিসের ৫০ কাউন্ট সুতার লুঙ্গি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় আর বাজারে একটি থান ৮৫০ থেক ৯০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। একটি ৮০ সুতার লুঙ্গির থান তৈরি করতে আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে কিন্তু বাজারে ২ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
সবুর বলেন লোকসান দিয়ে কাপড় তৈরি করেও বাজারে নিয়ে বিক্রি না করতে পেরে ফেরত আসতে হচ্ছে তাকে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতি সপ্তাহে তার কারখানা থেকে ৬০০ লুঙ্গি তৈরি করলেও ২০০ থেকে ২৫০ পিসের বেশি লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে না এতে আরও বিপাকে পড়েছে তার মতো সাধারণ তাঁতিরা।
ঈদে কাঙ্ক্ষিত ব্যবসা করতে না পারলে মূলধন হারিয়ে পথে বসতে হবে তাঁতিদের বলে জানান তিনি।
এদিকে তাঁত কাপড়ের পাইকার ব্যবসায়ীরাও জানান, এবার ঈদে কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা করতে পারছেন না তারা।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম তাঁত কাপড়ের পাইকারি হাট আতাইকুলা হাট ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা না থাকায় পাইকাররা বাজারে আশানুরূপ বেচাকেনা করতে পারছে না।
আতাইকুলা হাটের পাইকার ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরে ঈদের সময় প্রতি হাটবারে তার দোকান থেকে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ পিস তাঁত কাপড় বিক্রি হতো। এ বছর প্রতি হাটবারে মাত্র ৫০/৬০ পিস এর বেশি কাপড় বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।
মহিউদ্দিন জানান প্রতিবছর বাইরে থেকে পাইকাররা এ হাটে এলেও এ বছর বাইরের ক্রেতাদের আনাগোনা একেবারেই কম। ফলে স্থানীয় ক্রেতাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। তবে ঈদের শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে বলে আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আয়ুব আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দুরুহ হবে।
আয়ুব বলেন, তাঁত কাপড়ের ক্রেতাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ, কাপড়ের দাম বেশি বাড়ানো হলে তাদের পক্ষে কাপড় কেনা কঠিন হয়ে পড়বে, আর সে কারণেই উৎপাদন খরচ কমানের জন্য কাঁচামালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানান তিনি।
লেখা: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু
সাংবাদিক, কলামিস্ট
আরও পড়ুনঃ
টেলিভিশনের প্রিয়মুখ সামিয়া রহমান চাকরি থেকে অবসরে যেতে চান
ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে ঈদোপলক্ষ্যে চলাচলকারী বেসরকারি লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েই শেষ
সুজানগরে প্রতিপক্ষের হামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও যুব লীগ সভাপতি গুরুতর আহত
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট পাবনা জেলা শাখার কমিটি অনুমোদন
গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার ও ৭ দফা দাবিতে সমাবেশ
মুক্তিযুদ্ধের এক মাইলফলক : পাবনার ঐতিহাসিক ডাববাগান দিবস
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জমি-জমা নিয়ে বিরোধে ১ ব্যক্তি খুন
গতকাল রোববার ছিল মুজিবনগরে সাধারণ ছুটি
ঈশ্বরদীতে মুজিবনগর দিবস পালিত