ঢাকা ০২:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

এবার শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করল বিএফআরআই

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০২:৪৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
  • / 192

এবার শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করল বিএফআরআই

শোল মাছ। ছবি: বিএফআরআইয়ের সৌজন্যে

 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৪৩ রাত, ২৮ এপ্রিল ২০২২

দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদে একের পর এক সফলতা অর্জনের পর এবার হ্যাচারিতে প্রথমবারের মতো শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।

চলতি এপ্রিল মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ স্বাদু পানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এ সফলতা অর্জন করেন।

গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো শাহাআলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মো. রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো. সাইফুল ইসলাম।

গবেষক দলের প্রধান ড. মো শাহাআলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্যান্য মাছের মত খৈল, কুঁড়া জাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই পোনা তৈরির জন্য ব্রুড মাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদেরকে প্রোটিন সমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়। তারপর ব্রুড তৈরি করে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এ মাছটি স্বজাতিভোজী হওয়ায় শোল পোনা বাঁচিয়ে রাখাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশে মিঠাপানির দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ শোল। মাছটি খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় এ মাছ পাওয়া যায়।

দেশে বর্তমানে জলাশয় সংকোচন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি দূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় এর প্রাপ্যতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে।

শোল মাছকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদু পানি কেন্দ্রে এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়।

গবেষণায় পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় দেশে শোল মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিএফআরআইয়ের গবেষণা থেকে জানা যায়, শোল মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে এপ্রিল থেকে আগস্ট এই মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শোল মাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।’

বিএফআরআই জানায়, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে শোল মাছের চাষ করা হয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেশীয় শোল মাছের পোনা না থাকায় এ মাছটিকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না।

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে শোল মাছের পোনা উৎপাদিত হওয়ায় এ মাছকে এখন চাষের আওতায় আনা হয়েছে।

বেসরকারি খামারিদের উদ্যোগে চাষের জন্য ২০১১ সালে ভিয়েতনাম থেকে শোল মাছের পোনা দেশে আমদানি করা হয় এবং চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু বিদেশি এ মাছ দেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে দেশীয় শোল মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে। চাষের মাধ্যমে এ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ মাছ রপ্তানি করা যাবে।

 

 আরও পড়ুনঃ

এই রকম আরও টপিক

এবার শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করল বিএফআরআই

প্রকাশিত সময় ০২:৪৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
শোল মাছ। ছবি: বিএফআরআইয়ের সৌজন্যে

 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৪৩ রাত, ২৮ এপ্রিল ২০২২

দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদে একের পর এক সফলতা অর্জনের পর এবার হ্যাচারিতে প্রথমবারের মতো শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।

চলতি এপ্রিল মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহ স্বাদু পানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এ সফলতা অর্জন করেন।

গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো শাহাআলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব মো. রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো. সাইফুল ইসলাম।

গবেষক দলের প্রধান ড. মো শাহাআলী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্যান্য মাছের মত খৈল, কুঁড়া জাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই পোনা তৈরির জন্য ব্রুড মাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদেরকে প্রোটিন সমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়। তারপর ব্রুড তৈরি করে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া এ মাছটি স্বজাতিভোজী হওয়ায় শোল পোনা বাঁচিয়ে রাখাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।’

বাংলাদেশে মিঠাপানির দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ শোল। মাছটি খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় এ মাছ পাওয়া যায়।

দেশে বর্তমানে জলাশয় সংকোচন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি দূষণ এবং অতি আহরণের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় এর প্রাপ্যতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে।

শোল মাছকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদু পানি কেন্দ্রে এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়।

গবেষণায় পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় দেশে শোল মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিএফআরআইয়ের গবেষণা থেকে জানা যায়, শোল মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে এপ্রিল থেকে আগস্ট এই মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। শোল মাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।’

বিএফআরআই জানায়, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে শোল মাছের চাষ করা হয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেশীয় শোল মাছের পোনা না থাকায় এ মাছটিকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না।

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে শোল মাছের পোনা উৎপাদিত হওয়ায় এ মাছকে এখন চাষের আওতায় আনা হয়েছে।

বেসরকারি খামারিদের উদ্যোগে চাষের জন্য ২০১১ সালে ভিয়েতনাম থেকে শোল মাছের পোনা দেশে আমদানি করা হয় এবং চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু বিদেশি এ মাছ দেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে দেশীয় শোল মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে। চাষের মাধ্যমে এ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ মাছ রপ্তানি করা যাবে।

 

 আরও পড়ুনঃ