ঢাকা ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের বন্ধু পাবনার প্রফেসর আবুল হোসেন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদধূলি চান তার প্রতিষ্ঠানে

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০১:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
  • / 98

ব্রেইল পদ্ধতির শিক্ষা

পাবনা: অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে প্রফেসর আবুল হোসেন সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন।

এবিএম ফজলুর রহমান
প্রকাশিত: ১১:৩২ রাত, ১৭ মে ২০২২

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ওমর ফারুক। বয়স ১৪। জন্মগতভাবে দুই হাত নেই অথচ প্রচন্ড মেধার অধিকারী সে। পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহ। বাবা মা তাকে বিভিন্ন স্কুলে পাঠানোর আগ্রহ পোষণ করলেও শাররীক অক্ষমতার কারণে একা একা স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তার পড়াশুনা আর হয়ে উঠেনি।

লোক মারফত খবর পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন তাকে পাবনায় এনে পড়াশুনার সুযোগ করে দেন। ভর্তি করে দেন পাবনার আর এম একাডেমিতে। দশ বছরে সে এসসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপি ৪.৬ পায়।

ওমর ফারুকের পা দিয়ে লেখা অনেকের হাতের লেখার চেয়ে সুন্দর বলে জানান কয়েকজন শিক্ষক।

দুই হাত না থাকায় অথবা বিকলাঙ্গ থাকায় মানবকল্যান ট্রাষ্টে থেকে এ রকম পা দিয়ে লিখে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন জয়পুরহাটের বিউটি খাতুন (১৪), রাজশাহীর হাবিব (১৫), পাবনার আটঘরিয়ার মিরাজুল (১৭), লালমনিরহাটের আখিমনি (১৫) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঈশ্বর কুমার ধর (১৮) এবং কুড়িগ্রামের মোছাঃ নাজনীন (১৬)।

এই সাত জনের দুই হাত নেই। এক পা দিয়ে লিখে শহরের বিভিন্ন স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন তারা।

সবচেয়ে সাফ্যলের কথা শারিরীক প্রতিবন্ধি ও জন্মান্ধ গাজীপুর জেলার আব্দুল জলিল (২৫) গতবার ভাল ফলাফল করে এমএ পাশ করেছে। সে বিএসএস পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আব্দুল জলিল বলেন, ‘আবুল হোসেন স্যার যেন তাদের কাছে শান্তি ও আস্থার প্রতীক। পরিবার ও সমাজের সবাই যখন তাকে ফেলে দিয়েছিল তখন আবুল হোসেন স্যার তাকে তুলে এনে স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এখন তার সাহস ও মনোনবল বেড়েছে কয়েকগুন’।

এ রকম পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে পাবনা শহরের নবাব আলী (২৪) এবার ভাল ফলাফল করে ডিগ্রি পাশ করে বিএড করছে। সেও বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পা দিয়ে লিখছে ছাত্ররাপাবনা: মানব কল্যাণ ট্রাষ্টে পা দিয়ে লিখেও ভাল ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা।

এ ভাবে অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের আস্থা, ভরসা ও আশ্রয়ের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন। প্রফেসর আবুল হোসেনকে দেখলেই মন জুড়ে প্রশান্তি এসে যায় এ সব অসহায় অবহেলিত মানুষের। খুঁজে পান আস্থা সম্মান মর্যাদা এবং প্রতিবন্ধিদের সমাজে ক্ষমতাবান করার এক মহানযোদ্ধাকে। প্রফেসর আবুল হোসেন প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটান এ সব প্রতিবন্ধিদের সঙ্গে। পিতামাতার স্নেহ ভালবাসা দেন। খেলার জন্য মাঠ তৈরি দিয়েছেন। সব সময় খোঁজ খোঁজ নেন, কার পড়াশুনা কেমন হচ্ছে। কার কি সমস্যা। খাওয়া দাওয়ার অবস্থা কি!

জানা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা প্রফেসর আবুল হোসেন ২০০২ সালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর নেন। তার ১ মেয়ে ৩ ছেলে। সবাই ভাল চাকুরি করে।

বর্তমানের আবুল হোসেন স্যারের বয়স ৭২ বছর। অবসর গ্রহণের আগেই নিজের গোছানো টাকা দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি পাবনা শহরের সিঙ্গা এলাকায় ছোট পরিসরে গড়ে তোলেন এই মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট। অবসরের পর পেনশনের টাকা দিয়ে এই মানবকল্যাণ ট্রাষ্টকে সমৃদ্ধি করেন।

বর্তমানে মানব কল্যাণ ট্রাষ্টে দেড় শতাধিক অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, নারী ও পুরুষ ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিসহ অন্য সাধারণ পদ্ধতিতে পড়াশুনা করছেন। এদের মধ্যে ৬৫ জন জন্মান্ধ, ৭ জনের দুই হাত নেই। ১৫ জন শাররীক প্রতিবন্ধি এবং ১৩ জন অটিষ্টিক।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার পাবনা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি যেন পরিবার ও সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হয় সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করে চলেছেন। ৭৫ বছরেরর বৃদ্ধ প্রফেসর আবুল হোসেন জীবনের এক চর্তুথাংশ কাটিয়েছেন সমাজ ও পরিবারের কাছে অবহেলিত এ সব মানুষকে নিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনপাবনা: মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট ও এর কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রফেসর আবুল হোসেন।

মানবকল্যাণ ট্রাষ্ট সুত্রে জানা যায়, পাবনাসহ সারা দেশেই দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধির সংখ্যা। পাবনা শহরের ৯টি উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নে অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব বাক প্রতিবন্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় সহ¯্রাধিক প্রতিবন্ধি রয়েছে। এদের মধ্যে দেড় শতাধিক নারী প্রতিবন্ধি। পাবনার এই সব প্রতিবন্ধিরা একদিকে যেমন পরিবারের কাছে অবহেলিত এবং বোঝা। অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এরা বোঝা হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে। সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিলে এরাও যে সমাজের অন্যদের মত অধিকাংশ কাজই করতে পারে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধিদের যে সহায়তা করা হয় তা খুবই নগন্য।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট চেয়ারম্যান জানান, অন্ধদের লেখপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকেরও। দরিদ্র এ সব অন্ধদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দুরের কথা লেখা পড়ার করার নুন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তার পরেও প্রবল আগ্রহের কারনে থেমে থাকছে না এ সব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন। নানা ধরনের ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে শহরের আর এম একাডেমী স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। গত বছর এস এসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ৬ জন। তারা সবাই জিপিএ সাড়ে ৪ পেয়েছে।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন বলেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানুষের মধ্যে বাঁচিবার চাই’ ‘সকলে আমরা সকলের তরে প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ – এই প্রতিবাদ্য নিয়ে জীবনের শেষ সময় ৯ দফা প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করি। আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে পদধুলি দেন। খোঁজ নেন। দেখুন অটিষ্টিকদের জন্য আমি কি কাজ করছি। আমি বিদেশী দুতাবাস, ওআইসি, আইডিবি ও বিদেশী সাংবআদিকদের প্রতি আহবান জানাই আপনার আমার এই কাজকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিন।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহবান জানান।

লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, স্টাফ রির্পোটার, দৈনিক সমকাল ও সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব।

 

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ

অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের বন্ধু পাবনার প্রফেসর আবুল হোসেন মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদধূলি চান তার প্রতিষ্ঠানে

প্রকাশিত সময় ০১:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০২২
পাবনা: অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে প্রফেসর আবুল হোসেন সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন।

এবিএম ফজলুর রহমান
প্রকাশিত: ১১:৩২ রাত, ১৭ মে ২০২২

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ওমর ফারুক। বয়স ১৪। জন্মগতভাবে দুই হাত নেই অথচ প্রচন্ড মেধার অধিকারী সে। পড়াশুনার প্রতি প্রবল আগ্রহ। বাবা মা তাকে বিভিন্ন স্কুলে পাঠানোর আগ্রহ পোষণ করলেও শাররীক অক্ষমতার কারণে একা একা স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তার পড়াশুনা আর হয়ে উঠেনি।

লোক মারফত খবর পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন তাকে পাবনায় এনে পড়াশুনার সুযোগ করে দেন। ভর্তি করে দেন পাবনার আর এম একাডেমিতে। দশ বছরে সে এসসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপি ৪.৬ পায়।

ওমর ফারুকের পা দিয়ে লেখা অনেকের হাতের লেখার চেয়ে সুন্দর বলে জানান কয়েকজন শিক্ষক।

দুই হাত না থাকায় অথবা বিকলাঙ্গ থাকায় মানবকল্যান ট্রাষ্টে থেকে এ রকম পা দিয়ে লিখে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন জয়পুরহাটের বিউটি খাতুন (১৪), রাজশাহীর হাবিব (১৫), পাবনার আটঘরিয়ার মিরাজুল (১৭), লালমনিরহাটের আখিমনি (১৫) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঈশ্বর কুমার ধর (১৮) এবং কুড়িগ্রামের মোছাঃ নাজনীন (১৬)।

এই সাত জনের দুই হাত নেই। এক পা দিয়ে লিখে শহরের বিভিন্ন স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন তারা।

সবচেয়ে সাফ্যলের কথা শারিরীক প্রতিবন্ধি ও জন্মান্ধ গাজীপুর জেলার আব্দুল জলিল (২৫) গতবার ভাল ফলাফল করে এমএ পাশ করেছে। সে বিএসএস পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আব্দুল জলিল বলেন, ‘আবুল হোসেন স্যার যেন তাদের কাছে শান্তি ও আস্থার প্রতীক। পরিবার ও সমাজের সবাই যখন তাকে ফেলে দিয়েছিল তখন আবুল হোসেন স্যার তাকে তুলে এনে স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। এখন তার সাহস ও মনোনবল বেড়েছে কয়েকগুন’।

এ রকম পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে পাবনা শহরের নবাব আলী (২৪) এবার ভাল ফলাফল করে ডিগ্রি পাশ করে বিএড করছে। সেও বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পা দিয়ে লিখছে ছাত্ররাপাবনা: মানব কল্যাণ ট্রাষ্টে পা দিয়ে লিখেও ভাল ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা।

এ ভাবে অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, দু:স্থ ও অসহায় মানুষের আস্থা, ভরসা ও আশ্রয়ের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন। প্রফেসর আবুল হোসেনকে দেখলেই মন জুড়ে প্রশান্তি এসে যায় এ সব অসহায় অবহেলিত মানুষের। খুঁজে পান আস্থা সম্মান মর্যাদা এবং প্রতিবন্ধিদের সমাজে ক্ষমতাবান করার এক মহানযোদ্ধাকে। প্রফেসর আবুল হোসেন প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটান এ সব প্রতিবন্ধিদের সঙ্গে। পিতামাতার স্নেহ ভালবাসা দেন। খেলার জন্য মাঠ তৈরি দিয়েছেন। সব সময় খোঁজ খোঁজ নেন, কার পড়াশুনা কেমন হচ্ছে। কার কি সমস্যা। খাওয়া দাওয়ার অবস্থা কি!

জানা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা প্রফেসর আবুল হোসেন ২০০২ সালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর নেন। তার ১ মেয়ে ৩ ছেলে। সবাই ভাল চাকুরি করে।

বর্তমানের আবুল হোসেন স্যারের বয়স ৭২ বছর। অবসর গ্রহণের আগেই নিজের গোছানো টাকা দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি পাবনা শহরের সিঙ্গা এলাকায় ছোট পরিসরে গড়ে তোলেন এই মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট। অবসরের পর পেনশনের টাকা দিয়ে এই মানবকল্যাণ ট্রাষ্টকে সমৃদ্ধি করেন।

বর্তমানে মানব কল্যাণ ট্রাষ্টে দেড় শতাধিক অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব, নারী ও পুরুষ ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিসহ অন্য সাধারণ পদ্ধতিতে পড়াশুনা করছেন। এদের মধ্যে ৬৫ জন জন্মান্ধ, ৭ জনের দুই হাত নেই। ১৫ জন শাররীক প্রতিবন্ধি এবং ১৩ জন অটিষ্টিক।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন গতকাল মঙ্গলবার পাবনা প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি যেন পরিবার ও সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হয় সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করে চলেছেন। ৭৫ বছরেরর বৃদ্ধ প্রফেসর আবুল হোসেন জীবনের এক চর্তুথাংশ কাটিয়েছেন সমাজ ও পরিবারের কাছে অবহেলিত এ সব মানুষকে নিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনপাবনা: মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট ও এর কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রফেসর আবুল হোসেন।

মানবকল্যাণ ট্রাষ্ট সুত্রে জানা যায়, পাবনাসহ সারা দেশেই দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধির সংখ্যা। পাবনা শহরের ৯টি উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নে অন্ধ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধি, গরীব বাক প্রতিবন্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রায় সহ¯্রাধিক প্রতিবন্ধি রয়েছে। এদের মধ্যে দেড় শতাধিক নারী প্রতিবন্ধি। পাবনার এই সব প্রতিবন্ধিরা একদিকে যেমন পরিবারের কাছে অবহেলিত এবং বোঝা। অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এরা বোঝা হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে। সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিলে এরাও যে সমাজের অন্যদের মত অধিকাংশ কাজই করতে পারে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধিদের যে সহায়তা করা হয় তা খুবই নগন্য।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্ট চেয়ারম্যান জানান, অন্ধদের লেখপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকেরও। দরিদ্র এ সব অন্ধদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দুরের কথা লেখা পড়ার করার নুন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তার পরেও প্রবল আগ্রহের কারনে থেমে থাকছে না এ সব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন। নানা ধরনের ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে শহরের আর এম একাডেমী স্কুল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। গত বছর এস এসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ৬ জন। তারা সবাই জিপিএ সাড়ে ৪ পেয়েছে।

মানব কল্যাণ ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল হোসেন বলেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানুষের মধ্যে বাঁচিবার চাই’ ‘সকলে আমরা সকলের তরে প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ – এই প্রতিবাদ্য নিয়ে জীবনের শেষ সময় ৯ দফা প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করি। আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে পদধুলি দেন। খোঁজ নেন। দেখুন অটিষ্টিকদের জন্য আমি কি কাজ করছি। আমি বিদেশী দুতাবাস, ওআইসি, আইডিবি ও বিদেশী সাংবআদিকদের প্রতি আহবান জানাই আপনার আমার এই কাজকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিন।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহবান জানান।

লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, স্টাফ রির্পোটার, দৈনিক সমকাল ও সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব।

 

 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ