ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

হঠাৎ করেই তলিয়ে গেছে পাবনার চাটমোহর চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের ধান; দিশেহারা কৃষক

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৮:২৬:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২
  • / 60

হঠাৎ করেই তলিয়ে গেছে পাবনার চাটমোহর চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের ধান; দিশেহারা কৃষক

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের গৃহবধু কাজলী খাতুন। চোখে মুখে শুধু স্বপ্ন ডুবে যাওয়ার হতাশা। তার স্বামী বাবু সরকার বিলে তলিয়ে যাওয়া জমির ধান কেটে নিয়ে আসার অপেক্ষায় বিলপাড়ে বসে আছেন তিনি।শ্রমিক ও নৌকার অভাবে নিজেই দেড় বিঘা জমির ধান কেটে পলিথিনের নৌকায় ধান নিয়ে বিলপাড়ে আসেন বাবু সরকার। সেখানে পানিতে নেমে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভেজা ধান নামিয়ে ঘরে নেবার যুদ্ধ। এ যেন অসহনীয় দুর্ভোগ।

কাজলী খাতুন বলেন, তিনদিনের ভিতর হঠাৎ কইরে বিলে পানি আইলো। চোখের সামনে স্বপ্নের ধান ডুইবে গেলো। এহন তাড়াতাড়ি ধান কাইটে ঘরে তুলাই কঠিন হয়া গ্যাছে। কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়া যাচ্ছে।

বাবু সরকার বলেন, দেড় বিঘা ভুইয়ে ধান লাগাইছিলাম। এমনিতে খরচ বেশি হইছে, তার ওপর পানি ভেতর থেনে ধান কাটা ও ঘরে তুলবের লাইগে আরো খরচ বাইড়ে গ্যাছে। ক্যাবা কইরে কি করবো বুঝবের পারতিছি না।

শুধু বাবু সরকার-কাজলী দম্পতি-ই নয়, তাদের মতো হাজারো কৃষকের একই দুর্দশা। গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল।

চোখের সামনে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার মুহুর্তে বিলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন কষ্টের ছাপ কৃষকের চোখে। কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবে দিশেহারা তারা।

চলনবিলের পাবনা অংশে চাটমোহরের খলিসাগাড়ি, আফরারদহ, খোলারদহ, কুকড়াগাড়ি, নলখুলা সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের নিচু এলাকায় তলিয়ে গেছে পাকা সোনালী ধান। যেন চোখের সামনে তলিয়ে গেছে সব স্বপ্ন।

শ্রমিক সংকটে ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। নিজেরা পানিতে নেমে ধান কাটছেন। সেখান থেকে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে, ধান নিয়ে বিলপাড়ে যাচ্ছেন তারা। তারপর গাড়িতে করে নিতে হচ্ছে বাড়িতে।

এতে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। একদিনে নষ্ট হচ্ছে ধান, অন্যদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। সবমিলিয়ে এবছর ধানে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।

আবুল কাশেম, জমির উদ্দিন, মন্তাজ আলী সহ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বিলে পানি আসার কথা আরও প্রায় এক মাস পর। কিন্তু এবার হঠাৎ করে আগেভাগে বিলে পানি ঢুকেছে।

কিনু সরকারের জোলায় স্লুইস গেটটা খোলা ছিল। বন্ধ থাকলে এই সর্বনাশটা হতো না। মুহুর্তের মধ্যে পানিতে জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। যে যেমন পেরেছে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

কৃষকরা জানান, শ্রমিক সংকটে বিলের পানিতে নষ্ট হচ্ছে ধান। অনেকে নিজেরাই পানিতে নেমে ধান কাটছেন।  বেশি টাকায় কিছু শ্রমিক মিললেও, ধান নিয়ে আসার নৌকা নেই।

তাই বিকল্প হিসেবে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে ধান নিতে হচ্ছে বিলপাড়ে। সেখান থেকে রাস্তায় তুলে গাড়িতে নিয়ে বাড়ি ফেরায় বেড়েছে খরচ। ভারী হবে লোকসানের পাল্লা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ জানান, চাটমোহরে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যে নিচু এলাকার ৬০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

তারপরও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ করছেন তারা। ক্ষতির পরিমাণ জানার পর মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। কোনো প্রনোদনা পেলে কৃষকদের দেয়া হবে। আর স্লুইসগেটের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলছে। উন্নয়ন সভাতেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন্যঃ সলঙ্গা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

হঠাৎ করেই তলিয়ে গেছে পাবনার চাটমোহর চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের ধান; দিশেহারা কৃষক

প্রকাশিত সময় ০৮:২৬:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ মে ২০২২

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের গৃহবধু কাজলী খাতুন। চোখে মুখে শুধু স্বপ্ন ডুবে যাওয়ার হতাশা। তার স্বামী বাবু সরকার বিলে তলিয়ে যাওয়া জমির ধান কেটে নিয়ে আসার অপেক্ষায় বিলপাড়ে বসে আছেন তিনি।শ্রমিক ও নৌকার অভাবে নিজেই দেড় বিঘা জমির ধান কেটে পলিথিনের নৌকায় ধান নিয়ে বিলপাড়ে আসেন বাবু সরকার। সেখানে পানিতে নেমে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভেজা ধান নামিয়ে ঘরে নেবার যুদ্ধ। এ যেন অসহনীয় দুর্ভোগ।

কাজলী খাতুন বলেন, তিনদিনের ভিতর হঠাৎ কইরে বিলে পানি আইলো। চোখের সামনে স্বপ্নের ধান ডুইবে গেলো। এহন তাড়াতাড়ি ধান কাইটে ঘরে তুলাই কঠিন হয়া গ্যাছে। কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়া যাচ্ছে।

বাবু সরকার বলেন, দেড় বিঘা ভুইয়ে ধান লাগাইছিলাম। এমনিতে খরচ বেশি হইছে, তার ওপর পানি ভেতর থেনে ধান কাটা ও ঘরে তুলবের লাইগে আরো খরচ বাইড়ে গ্যাছে। ক্যাবা কইরে কি করবো বুঝবের পারতিছি না।

শুধু বাবু সরকার-কাজলী দম্পতি-ই নয়, তাদের মতো হাজারো কৃষকের একই দুর্দশা। গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল।

চোখের সামনে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার মুহুর্তে বিলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন কষ্টের ছাপ কৃষকের চোখে। কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবে দিশেহারা তারা।

চলনবিলের পাবনা অংশে চাটমোহরের খলিসাগাড়ি, আফরারদহ, খোলারদহ, কুকড়াগাড়ি, নলখুলা সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের নিচু এলাকায় তলিয়ে গেছে পাকা সোনালী ধান। যেন চোখের সামনে তলিয়ে গেছে সব স্বপ্ন।

শ্রমিক সংকটে ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক। নিজেরা পানিতে নেমে ধান কাটছেন। সেখান থেকে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে, ধান নিয়ে বিলপাড়ে যাচ্ছেন তারা। তারপর গাড়িতে করে নিতে হচ্ছে বাড়িতে।

এতে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। একদিনে নষ্ট হচ্ছে ধান, অন্যদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। সবমিলিয়ে এবছর ধানে লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।

আবুল কাশেম, জমির উদ্দিন, মন্তাজ আলী সহ কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বিলে পানি আসার কথা আরও প্রায় এক মাস পর। কিন্তু এবার হঠাৎ করে আগেভাগে বিলে পানি ঢুকেছে।

কিনু সরকারের জোলায় স্লুইস গেটটা খোলা ছিল। বন্ধ থাকলে এই সর্বনাশটা হতো না। মুহুর্তের মধ্যে পানিতে জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। যে যেমন পেরেছে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

কৃষকরা জানান, শ্রমিক সংকটে বিলের পানিতে নষ্ট হচ্ছে ধান। অনেকে নিজেরাই পানিতে নেমে ধান কাটছেন।  বেশি টাকায় কিছু শ্রমিক মিললেও, ধান নিয়ে আসার নৌকা নেই।

তাই বিকল্প হিসেবে পলিথিনের নৌকা বানিয়ে ধান নিতে হচ্ছে বিলপাড়ে। সেখান থেকে রাস্তায় তুলে গাড়িতে নিয়ে বাড়ি ফেরায় বেড়েছে খরচ। ভারী হবে লোকসানের পাল্লা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ জানান, চাটমোহরে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যে নিচু এলাকার ৬০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

তারপরও ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ করছেন তারা। ক্ষতির পরিমাণ জানার পর মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। কোনো প্রনোদনা পেলে কৃষকদের দেয়া হবে। আর স্লুইসগেটের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলছে। উন্নয়ন সভাতেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন্যঃ সলঙ্গা থানা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত