ঢাকা ১১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

মঙ্গলবার দায়িত্ব বুঝে নিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৪:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২
  • / 86

আব্দুর রউফ তালুকদার


স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৩ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বাদশ গভর্নর হিসেবে মঙ্গলবার দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

নতুন গভর্নর কঠিন সময়ে গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে সাতটি কাজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মো. আব্দুর রউফ তালুকদার; তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়ানোকে এখন প্রধান কাজ হিসেবে ঠিক করেছেন।

মঙ্গলবারই বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বাদশ গভর্নর হিসেবে যোগ দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব রউফ তালুকদার।

সকালে যোগদান শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বিকালে ব্যাংকের চতুর্থ তলার জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

কোভিড মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ সারাবিশ্বে যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তার আঁচ বাংলাদেশে লাগার মধ্যে গভর্নরের চেয়ারে বসলেন রউফ।

গভর্নর হিসেবে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই না। প্রশাসনে আমি চাপের মধ্যে কাজ করে এসেছি৷ যে পদে কাজ করে এসেছি সেটাতেও চাপ ছিল। নতুন কোনো চাপ অনুভব করছি না।

“যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়ে রউফ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে। মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এটি করে থাকে। কিন্তু এবারের মূল্যস্ফীতি মুদ্রা নীতি অনুযায়ী টাকার সরবরাহ ঘটিত কারণে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত অর্থ বছরে জ্বালানিসহ আমদানি করা প্রধান প্রধান ৮টি পণ্যর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শুধু আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির কারণে একই পরিমাণ আমদানিতে এই ৮টি পণ্যে গত বারের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

আমদানিকৃত পণ্যর মধ্যে ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি ও উৎপাদন কাজের মধ্যবর্তী পণ্য এই ৫টির তথ্য সবসময়ই প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে আরও ৩টি পণ্য যোগ করে পর্যবেক্ষণটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় পয়েন্ট-টু পয়েন্টে ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি গত মে মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ৭.৪২ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের উপরে চলে গেছে।

এর বিপরীতে আমানতের সুদহার এখন সর্বোচ্চ ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। এতে প্রকৃতভাবে মানুষের আয় নেতিবাচক। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই সুদহার বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার উঠিয়ে দেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘অর্থনীতির টেক্সটবুক (পাঠ্যবই) সূত্র তাই বলে। কিন্তু এখানে বাস্তবতা ভিন্য, আমরা বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেদিকে আপাতত যাচ্ছি না।

“এই মুহূর্তে পাঠ্যবইয়ের সমাধান সম্ভব নয়, বাস্তব সমাধান বের করব। সুদহার বাড়ালে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তা কর্মসংস্থানে তৈরি করবে না। প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, আমরা তাদের জন্য কর্মসংস্থান করতে চাই।”

চাহিদা কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ে মনোযোগী নতুন গভর্নর বলেন, “আমরা চাহিদার জায়গায় হস্তক্ষেপ করেছি। চাহিদা কমিয়ে আনতে পারলে ডলার সাশ্রয় হবে.. সেদিকেই যাচ্ছি।

“করোনার সময়ে আমরা অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে চাহিদা ধরে রেখেছিলাম, এবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদায় কাট (কমিয়ে আনা) করা হচ্ছে, সরকারও অনেক ব্যয় কমিয়ে আনছে।”

সুদহার বাড়ালে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

গভর্নর বলেন, “আমানতের এখন প্রধান বিনিয়োগ হচ্ছে ব্যাংকের সুদে। আমরা বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করব। সেখানে বিনিয়োগ করলে আমানতকারীরা ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন।

বর্তমানে ডজন খানেক ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছ্। আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। প্রভাবশালী কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে অনেক ব্যাংক। ব্যাংক পরিদর্শনও সেভাবে হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নতুন গভর্নর হিসেবে কেমন অবস্থান হবে- প্রশ্নে রউফ বলেন, “আজকে আমি দায়িত্ব নিয়ে ডেপুটি গভর্নর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর প্রধান, নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যাংক পরিদর্শন হবে….খুব শিগগিরই আপনারা ব্যাংক পরিদর্শনের বেলায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।”

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন ও ব্যাংকিং সমস্যা সমধানে কোন কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের তিনি ৭টি বিষয়ের কথা বলেন।

সেই তালিকা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, এসবের মধ্যে রয়েছে প্রথমত, মুদ্রানীতির আলোকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দ্বিতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনা;

তৃতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে অন্তত ৬ মাসের আমদানি বিল পরিশোধের সক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া; চতুর্থত আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন; পঞ্চমত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) আস্থা ফিরিয়ে আনা; ষষ্ঠত বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে; সপ্তমত বাজেটে নেওয়া মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদিধ অর্জনে সহায়ক নীতি নির্ধারণ।

চার বছরের জন্য আব্দুর রউফকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এই চার বছর পরে বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন অবস্থানে দেখতে চান- সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টেলেকচুয়াল (মেধাগত) প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চাই, পেশাদার সংস্থা হিসেবে দেখতে চাই.. এখনো পেশাদার রয়েছেন… এটাকে আরও উৎকর্ষের মধ্যে দেখতে চাই, এপেক্স (শীর্ষ) নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে সেটিই লক্ষ্য।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ ) কাছ থেকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশি মুদ্রায় ৪ বিলিয়নের বেশি ডলারের ঋণ নিতে আলোচনা চালাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, আইএমএফ’র ঋণ সহায়তায় আর্থিক খাতের সংস্কার শর্ত হিসেবে ছিল। এবারও ৯ শতাংশ সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তুলে দিতে আলোচনা চলছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারের বিষয়টি কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন অনেক হয়েছে। আগের জায়গায় আমরা নেই।

“অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতের সংস্কারের পদক্ষেপের বিষয়ে বলা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা আইএমএফকে বলেছি, যা বলা হয়েছে সেভাবে রিফর্ম করা হবে।

“আমাদের অবস্থান হচ্ছে, সমস্যার সমাধান দেশের অভ্যন্তর থেকে আসা প্রস্তাবের মাধ্যমে হোক। কারও চাপিয়ে দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী নয়। আইএমএফ কী বললো সেটা নয়, আমাদের অবস্থান আমরা পরিষ্কার করেছি। সেভাবেই সংস্কার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় (অর্থ বিভাগের সচিব) সর্বশেষ এভাবেই আলোচনা হয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ কাজ করতে পারবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ বিভিন্ন আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া আছে। এসব আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ করতে কোথাও কোনো বাধা নেই। আইন অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক কারও কথা শুনবে না।”

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ


মঙ্গলবার দায়িত্ব বুঝে নিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর

প্রকাশিত সময় ০৪:১৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২

আব্দুর রউফ তালুকদার


স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৩ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বাদশ গভর্নর হিসেবে মঙ্গলবার দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

নতুন গভর্নর কঠিন সময়ে গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে সাতটি কাজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মো. আব্দুর রউফ তালুকদার; তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়ানোকে এখন প্রধান কাজ হিসেবে ঠিক করেছেন।

মঙ্গলবারই বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বাদশ গভর্নর হিসেবে যোগ দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব রউফ তালুকদার।

সকালে যোগদান শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বিকালে ব্যাংকের চতুর্থ তলার জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

কোভিড মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ সারাবিশ্বে যে সঙ্কট তৈরি করেছে, তার আঁচ বাংলাদেশে লাগার মধ্যে গভর্নরের চেয়ারে বসলেন রউফ।

গভর্নর হিসেবে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই না। প্রশাসনে আমি চাপের মধ্যে কাজ করে এসেছি৷ যে পদে কাজ করে এসেছি সেটাতেও চাপ ছিল। নতুন কোনো চাপ অনুভব করছি না।

“যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি।”

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়ে রউফ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে। মুদ্রানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এটি করে থাকে। কিন্তু এবারের মূল্যস্ফীতি মুদ্রা নীতি অনুযায়ী টাকার সরবরাহ ঘটিত কারণে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত অর্থ বছরে জ্বালানিসহ আমদানি করা প্রধান প্রধান ৮টি পণ্যর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শুধু আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির কারণে একই পরিমাণ আমদানিতে এই ৮টি পণ্যে গত বারের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

আমদানিকৃত পণ্যর মধ্যে ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি ও উৎপাদন কাজের মধ্যবর্তী পণ্য এই ৫টির তথ্য সবসময়ই প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে আরও ৩টি পণ্য যোগ করে পর্যবেক্ষণটি তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় পয়েন্ট-টু পয়েন্টে ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি গত মে মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ৭.৪২ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের উপরে চলে গেছে।

এর বিপরীতে আমানতের সুদহার এখন সর্বোচ্চ ৬ শতাংশের ঘরে রয়েছে। এতে প্রকৃতভাবে মানুষের আয় নেতিবাচক। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই সুদহার বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া ৯ শতাংশ ঋণ সুদহার উঠিয়ে দেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘অর্থনীতির টেক্সটবুক (পাঠ্যবই) সূত্র তাই বলে। কিন্তু এখানে বাস্তবতা ভিন্য, আমরা বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেদিকে আপাতত যাচ্ছি না।

“এই মুহূর্তে পাঠ্যবইয়ের সমাধান সম্ভব নয়, বাস্তব সমাধান বের করব। সুদহার বাড়ালে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তা কর্মসংস্থানে তৈরি করবে না। প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে, আমরা তাদের জন্য কর্মসংস্থান করতে চাই।”

চাহিদা কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ে মনোযোগী নতুন গভর্নর বলেন, “আমরা চাহিদার জায়গায় হস্তক্ষেপ করেছি। চাহিদা কমিয়ে আনতে পারলে ডলার সাশ্রয় হবে.. সেদিকেই যাচ্ছি।

“করোনার সময়ে আমরা অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে চাহিদা ধরে রেখেছিলাম, এবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদায় কাট (কমিয়ে আনা) করা হচ্ছে, সরকারও অনেক ব্যয় কমিয়ে আনছে।”

সুদহার বাড়ালে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

গভর্নর বলেন, “আমানতের এখন প্রধান বিনিয়োগ হচ্ছে ব্যাংকের সুদে। আমরা বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্র বের করব। সেখানে বিনিয়োগ করলে আমানতকারীরা ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন।

বর্তমানে ডজন খানেক ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছ্। আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। প্রভাবশালী কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে অনেক ব্যাংক। ব্যাংক পরিদর্শনও সেভাবে হচ্ছে না।

এ বিষয়ে নতুন গভর্নর হিসেবে কেমন অবস্থান হবে- প্রশ্নে রউফ বলেন, “আজকে আমি দায়িত্ব নিয়ে ডেপুটি গভর্নর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউর প্রধান, নির্বাহী পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যাংক পরিদর্শন হবে….খুব শিগগিরই আপনারা ব্যাংক পরিদর্শনের বেলায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।”

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন ও ব্যাংকিং সমস্যা সমধানে কোন কোন বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া হবে- এমন প্রশ্নের তিনি ৭টি বিষয়ের কথা বলেন।

সেই তালিকা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, এসবের মধ্যে রয়েছে প্রথমত, মুদ্রানীতির আলোকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দ্বিতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল পর্যায়ে আনা;

তৃতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করে অন্তত ৬ মাসের আমদানি বিল পরিশোধের সক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া; চতুর্থত আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন; পঞ্চমত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) আস্থা ফিরিয়ে আনা; ষষ্ঠত বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে; সপ্তমত বাজেটে নেওয়া মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদিধ অর্জনে সহায়ক নীতি নির্ধারণ।

চার বছরের জন্য আব্দুর রউফকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এই চার বছর পরে বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন অবস্থানে দেখতে চান- সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টেলেকচুয়াল (মেধাগত) প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চাই, পেশাদার সংস্থা হিসেবে দেখতে চাই.. এখনো পেশাদার রয়েছেন… এটাকে আরও উৎকর্ষের মধ্যে দেখতে চাই, এপেক্স (শীর্ষ) নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করবে সেটিই লক্ষ্য।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ ) কাছ থেকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশি মুদ্রায় ৪ বিলিয়নের বেশি ডলারের ঋণ নিতে আলোচনা চালাচ্ছে। অতীতে দেখা গেছে, আইএমএফ’র ঋণ সহায়তায় আর্থিক খাতের সংস্কার শর্ত হিসেবে ছিল। এবারও ৯ শতাংশ সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তুলে দিতে আলোচনা চলছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারের বিষয়টি কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন অনেক হয়েছে। আগের জায়গায় আমরা নেই।

“অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় আর্থিক খাতের সংস্কারের পদক্ষেপের বিষয়ে বলা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা আইএমএফকে বলেছি, যা বলা হয়েছে সেভাবে রিফর্ম করা হবে।

“আমাদের অবস্থান হচ্ছে, সমস্যার সমাধান দেশের অভ্যন্তর থেকে আসা প্রস্তাবের মাধ্যমে হোক। কারও চাপিয়ে দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী নয়। আইএমএফ কী বললো সেটা নয়, আমাদের অবস্থান আমরা পরিষ্কার করেছি। সেভাবেই সংস্কার করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় (অর্থ বিভাগের সচিব) সর্বশেষ এভাবেই আলোচনা হয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ কাজ করতে পারবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ বিভিন্ন আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া আছে। এসব আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ করতে কোথাও কোনো বাধা নেই। আইন অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক কারও কথা শুনবে না।”

 


 আরও পড়ুনঃ

 আরও পড়ুনঃ