সম্পদই গলার কাঁটা বিলচন্দকের সাধারণ মানুষের
- প্রকাশিত সময় ১২:৪৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
- / 76
ফরিদপুর(পাবনা) সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:৫৮ অপরাহ্ন, ২২ জুলাই ২০২২
বিলের মধ্যে চাঁদের মত গ্রাম বিলচন্দক। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এই গ্রামের চারপাশে বর্ষাকাল জুড়ে চলনবিল তথা বড় বিলের বিশাল জলরাশি প্রবাহমান থাকে। কখনো একটু বেশি পানি হলেই সাবমার্সিবল রোড তথা ঢালাই রাস্তার ওপর পানি উঠে আসে তখন রাস্তায় অটো ভ্যান বা মোটরসাইকেল চালিয়ে গেলে প্রবাহমান ঢেউ এসে লাগবে আপনার পায়ে। মিঠাপানির পাথারের সৈকত যার পার্থিব সৌন্দর্য অত্যন্ত মনমুগ্ধকর। বিলের মাঝখানে গ্রাম হওয়ায় বিশুদ্ধ বাতাসে লালিত ফল ফসল ও প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার এই গ্রামে সম্ভাবনার যেন শেষ নেই। কিন্ত যেখানে অনেক সম্পদ সেখানকার সংকটের মাত্রাও বেশি।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়নের বিলচন্দক গ্রামে দুইটি গ্রুপের মাঝে চলমান ঝামেলার জেরে নিজেদের সম্পদ সম্ভ্রম হারানোর ভয় নিয়ে বসবাস করছে একদল মানুষ। আরেক দল অনাকাঙ্খিত লুটতরাজের ভয়ে নিজেদের পালিত গোরু বাছুর নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ।
স্থানীয়দের নিকট থেকে জানা যায় অনেক বছর আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম দিঘুলিয়ার সাথে গন্ডগোল লাগলে নিজেদের গ্রামে ভেতর একটি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের সাধারণ মানুষ। রহমত ম্যানেজারের নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেখানকার রহমত ম্যানেজারের কিছু যায়গা হাটের জন্য নির্ধারণ করে সেখানে বালু ভরাট করার পর অজ্ঞাত কারনে সেখানে আর হাট করা না হলে দুই গ্রুপের ঝামেলার সূত্রপাত ঘটে।
সম্ভাবনাময় শান্তিপূর্ণ গ্রামের নিরীহ মানুষ গুলো কতিপয় স্বার্থপর মানুষের হাতে জিম্মি হয়ে যায়। গ্রামের লোকজন সাহসী আর দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। হিংসা-মারামারি তাদের নেশা। শিক্ষিত, সচেতন লোক কম। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কতিপয় লোক ঢাল তলোয়ার আর বল্লম যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছেন দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় তারাই যেন শাষক-ঘোষক। তাদের ইশারায় চলছে সবকিছু। তবে তাদের অত্যাচারে গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষের চাওয়া তারা এই ‘জিম্মিদশা’ উদ্বাস্তু জীবন থেকে মুক্তি চায়।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধকে কে? শান্তিপ্রিয় গ্রামটিতে অশান্ত করার নেপথ্যে নায়ক ই বা কারা। প্রশ্ন অতিসূক্ষ্ম। উত্তর বিশাল! তবে সাধারণ জনগণ সেই প্রশ্ন কিংবা উত্তর অথবা সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নাকের ডোগায় সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। তাদের খুঁটির জোর কোথায়? তবে যাওয়া যাক মূল ভূমিকায়।
সরেজমিনে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে সামান্য বিষয় নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। সেই ঝামেলা স্থানীয়রা মিলিয়ে নেন। তবে এতে মন ভরেনা প্রতিশোধ পরায়ণ মানুষগুলোর। এরই প্রেক্ষিতে গ্রামটি তারা অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে থাকে, চালিয়ে যান কটু রাজনীতি (ভিলেজ পলিটিক্স)। সামগ্রিক বিষয়টি ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়ে আনা হয়, সালিশ বৈঠকের নামে শুরু হয় জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা। পান থেকে চুন খসলেই বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। আর সূচিন্তিতভাবে পুরো গ্রামকে বিভক্ত করা হয় দুভাগে। যার একভাগে নেতৃত্বদেন আনসার আকন্দ (লালু আকন্দ) ও রবিউল আলম টুকু ও আলম মোল্লা। অপর পক্ষে স্বপন মন্ডল, রহমত মন্ডল, ওয়াজেদ আলী মন্ডল গ্রুপ।
পুরো গ্রামের মাঝে সুবর্ণ রেখা টানার মূল কারিগর আব্দুর রশিদ (মেম্বার)। এ দিকে রোম যখন জ্বলছে নিরু তখন বাঁশি বাজানো নিয়ে ব্যস্ত। ঘটনা পর্যালোচনায় দুপক্ষে হানাহানি, মারামারি, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে পুরো গ্রাম ফাঁকা সুযোগ নিজ হাতে গুছিয়ে নেয়। রশিদ প্রামানিক রবিউল আলম টুকু ও আলম মোল্লা ও তার দলবল।
একই ভাবে গ্রামের জলমহল, বালু মহল, মসজিদের কমিটি, গোরস্থানের টাকা সবই যেতে থাকে রশিদ মেম্বারের পকেটে। অল্প দিনেই ফুলে-ফেঁপে উঠেন রশিদ মেম্বার ও তার লোকবল।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দিঘুলিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে দু’পক্ষের লোকজনকে নিয়ে মিমাংসায় বসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সার্কেল) ফজল-ই-খোদা, ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সরকার ও ফরিদপুর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান মাজেদ। রহমত মন্ডল ও আনসার আকন্দ একমত হয় তারা এখন থেকে মিলে মিশে চলবেন। উভয় পক্ষের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করে তা মিমাংসা করার জন্য ফরিদপুর থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুপক্ষের লোকজন বুকে বুক মিলিয়ে গ্রামে বসবাস করতে থাকে। এতে খুঁশি হতে পারেননি দ্বি-চরিত্রের লোকেরা।
আবারও তারা সক্রিয় হয়ে পুরো গ্রামকে দুই পক্ষে বিভক্ত করে আধিপত্য বিস্তারের নগ্ন হামলায় লেলিয়ে দেয়। যার জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর, দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ওই নির্বাচনে এলাকার বিএনপি সমর্থিত রবিউল আলম টুকু ও আলম মোল্লা গংদের পক্ষে ৪ জন প্রার্থী দেয়া হয়। সেখানে তাদের পক্ষে দুইজন ও অপরপক্ষে আওয়ামীলীগ সমর্থিত লালু আনছার-রহমত মন্ডল গংদের পক্ষে দুইজন জয়ী হয়। এ নিয়ে দেখা দিয়ে বিরোধ। রশিদ প্রামানিক, রবিউল-আলম গংদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
মন্ডল গোষ্ঠীর কয়েকজন যুবক-তরুণ স্থানীয় দুগ্ধ সমবায় সমিতির এলাকায় বেড়াতে গেলে প্রতিপক্ষ রবিউল-আলম সমর্থিত প্রামানিক গোষ্ঠীর লোকজন তাদের মারধর করে। খবর পেয়ে স্বজনরা এগিয়ে গেলে তাদেরও মারধর করে। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হলে তাদের ফরিদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরের দিন তারা শক্তি-সামথ্য ধারালো ও আগ্নিঅস্ত্র নিয়ে মন্ডল গোষ্ঠির বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়, নিয়ে যায় মূল্যবান সম্পাদ ও গরু, ধান-চালসহ আসবাবপত্রও।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মন্টু প্রামানিক বলেন, হামলায় মন্ডল গোষ্ঠীর অন্তত ১২ জনের বাড়িঘরে, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে রশিদ-আলম গংরা। এছাড়া পরদিন মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপস্থিতিতে আবারও হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুরুষরা আবারো হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ আঞ্জু খাতুন, শান্তি খাতুন, হাসিনা খাতুন ও হাফিজা খাতুন বলেন, গ্রামে অশান্তির মূলহোতা আব্দুর রশিদ মেম্বার টুকু ও আলম মোল্লা। তাদের নেতৃত্বে প্রায় ২০০ মানুষ দল বেঁধে এসে আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মোটর , টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যায়। ঘরে যা ছিল সব লুট করে নিয়ে গেছে। আবার কখন হামলা করে, সেই ভয়ে আমারা বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকি। এখন এই ক্ষতির দায় কে নেবে। আমরা গরীব মানুষ। কিভাবে আবার ঘরবাড়ি গোছাবো।
হামলার বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত আব্দুর রশিদ, করিম টুকু ও আলম মোল্লার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা হামলার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। লুটপাট, ভাঙচুরের বিষয়টিও এড়িয়ে যান। এও বলে হুমকি দেন গ্রামে শান্তি আর কখনো ফিরিয়ে আনা যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত একজন বলেন, ‘গ্রামে কোন পক্ষই ছিল না। সবাই শান্তিতে বসবাস করে আসছিলাম। রশিদ এর ইশারায় আবার গ্রামে ভাঙচুর- লটপাট চালু হয়েছে। রশিদ বালু মহল, জলমহল আর গ্রামের খাস জমি নিজের দখলে রাখতে পুরো গ্রামে অশান্তি লাগিয়ে রাখছে। রশিদ, আলম, টুকু হুমকি দিছে গ্রাম ছেড়ে না পালালে বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। এ খবর শুনেই গ্রাম ছেড়ে এক কাপড়ে পালিয়ে আসছি। বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় কোন জিনিসও আনতে দেয় নাই।’
বিলচান্দক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘ভাই কোন কথা বলতে পারব না। ঘরের বেড়ারও তো কান আছে। ওরা শুনলেই আমার বাড়ি ভাঙচুর লুটপাট হবে। তবে এটুকু আশস্ত করতে পারি গ্রামে অশান্তির মূলে এক জন।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ঈদের পরের দিন গ্রামে কিছু ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। ভাঙচুর-লুটপাটের বিষয়ে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুঙ্গলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম সুমন তালুকদার বলেন এই পরিস্থিতির জন্য যেই দায়ী হোক না কেন সেটি দুঃখ জনক। আমরা উভয় পক্ষের লোক নিয়ে শান্তিপূর্ণ বৈঠকের জন্য আলোচনা চালাচ্ছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি সমাধান আসবে বলে আশাকরি।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা: আন্তর্জাতিক আদালতে জান্তার আপত্তি খারিজ পদ্মা সেতু ভ্রমণ প্যাকেজ উদ্বোধন নওগাঁর রাণীনগরে কৃষকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ভেড়ামারায় এ্যাড. মোজাম্মেল হক স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট -২২’র ফাইনাল ভাঙ্গুড়ায় ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি পেল শিক্ষার্থী বেশি বয়সে হাঁটাহাঁটিতে যে ভুল করা যাবে না গোপালগঞ্জে ট্রেনের ধাক্কায় ভটভটির ৫ যাত্রী নিহত ২৫ জুলাই থেকে নোয়াবের সব সদস্য পত্রিকার দাম ন্যূনতম ২ টাকা করে বাড়বে ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা পূর্ণিমা আবারো বিয়ে করলেন