পাবিপ্রবিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমাদ
- প্রকাশিত সময় ০৪:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০২২
- / 107
প্রেস রিলিজঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরবতর্ীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম, তাঁর নিজের কাজ সবোর্পরি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকার স্মৃতিচারণ করেন আজ শনিবার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক এক অনুষ্ঠানে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কিভাবে পরিচালিত হতো, অনুষ্ঠান নির্মাণ, প্রচারসহ সার্বিক কর্মকান্ড তুলে ধরেন তিনি। এতে শিক্ষক-শিক্ষাথর্ী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে ১৯৭১ এর পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গৌরবগাঁথা বলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারী-২ তে উপস্থিতিদের মধ্যে ফিরে এসেছিল ১৯৭১’র গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।
শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিক পদক প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পাঠক ফোরামের সভাপতি। ১৯৭০ সালে ডাকসু নির্বাচনে কমনরুম বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেরিনা আহমেদ ছদ্মনামে স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রে খবর পড়তেন। ১৯৬২ সাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নাসরিন আহমাদের পরিবার ধানমন্ডিতে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। পরতর্ীতে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ও যার সুবাধে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা। নাসরিন আহমাদের সেই বাড়ি পরবতর্ীতে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরকে প্রদান করে তাঁর পরিবার।
স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে নাসরিন আহমাদ বলেন, প্রথম দিকে স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রের সাথে আমিনুল হক বাদশা, কামাল লোহানী, আলমগীর কুমকুম, পারভীন হোসেনসহ অনেকে জড়িত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এটি সুসংগঠিত হয় এবং আরও অনেকেই জড়িত হন। নিরাপত্তার কারণে তঁাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হত। ০৬ ডিসেম্বর প্রথম তিনি নিজের নাম নাসরিন আহমাদ শিলু নামে খবর পড়তেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রের প্রোগাম শুরু হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, নাটক, খবর, চরমপত্রসহ সকল অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। ফলে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। অনেক বিখ্যাত গায়ক, সুরকার, অভিনেতা এর সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কলাকৌশলী আর বাঙালি তখন একাকার হয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনত।। মুক্তিযোদ্ধারা সব সময় রেডিও কাছে রাখত। প্রবাসী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপন প্রচার করা হত। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব, ত্যাগ, দেশপ্রেম তুলে ধরা হতো বালিগঞ্জের ছোট্ট দোতলা সেই ভবনে। সেখানেই অনেকে লিখতেন, খবর পড়তেন, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েতন। চরমপত্র লিখে প্রচারের পর সেখানেই ঘুমাতেন এম আর আখতার মুকুল। মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার জন্য সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে দেশ পেয়েছি সেই দেশের কোন মানুষ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লালন করতে পারে না, ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা লালন করে না, ২১ আগস্ট ধারণ করতে পারে না। আমরা রবীন্দ্র নাথের সোনার বাংলা, নজরুল, লালন, জীবনান্দের বাংলাদেশ চাই। যেখানে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাম্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাই এক সাথে থাকব।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. এ কে এম সালাহ উদ্দিন বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাদের ভূমিকা নতুন প্রজম্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।
সভাপতির ভাষণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, ১৯৭১ সালের শব্দ সৈনিকদের যে অনুভূতি হতো সেই একই অনুভূতি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, যারা আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এর সাথে জড়িতদের বীরত্বগাথা পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরে আগামী প্রজম্মকে ইতিহাস জানাতে হবে। তবেই তাদের ত্যাগ স্বার্থক হবে।