ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষা বনাম নৈতিক শিক্ষা
- প্রকাশিত সময় ০২:২৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
- / 264
শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতীই গঠন করতে পারেন একটি সুন্দর পরিবার, সুন্দর সমাজ , সুন্দর রাষ্ট্র। এমন কথা সুশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন। সুস্থ্য মনুষ্যত্ব বিকাশে শিক্ষার্থীরা তাদের নির্ধারিত শিক্ষা জীবনে ছন্দবদ্ধ্যে পাঠ্য বইয়ের বাহিরে নানান জ্ঞান অর্জন করবেন এমন অজস্র বানী তাদের রপ্ত করে কেউ কেউ সারা জীবন সে গুলোকেই আদর্শ হিসাবে মেনেও নেন। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষায় বিশেষত এসএসসি ও এইচএসসি সাধারণ শিক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের নির্ধারিত নম্বর পেতে এখনো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় অর্থ । কোনো শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা জীবনে ১০ /১২ বছর যদি নীতি বাক্য রপ্ত করে অবশেষে অর্থের বিনিময়ে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিকে টাকার বিনিময়ে নম্বর নিতে হয় তখন তাদের মনে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে ? বিষয়টা এমন হয়ে দাড়ায়, যাক গো আমার নীতি-নৈতিকতা টাকা দিলে তো আর ব্যবহারিকে অন্তত এক বছর ফেলের ঘানি টানতে হবে না। এখানেই শিক্ষা হয়ে ওঠে বাণিজ্যিকতায়। এ অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করলে তার জীবনে কি প্রভাব ফেলতে পারবে ?
শুরুতে আমার শিক্ষা জীবনের কিছু স্মৃতি চারণ দিয়ে দিয়ে দু একটি কথা বলি। আমার যদ্দুর মনে পড়ে আমি তখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আমার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তাঁর নাম মো. নবাব আলী স্যার। তিনি আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন হাতের লেখা বাড়ির কাজ হিসেবে দিতেন। মাঝে মাঝে ব্লাক বোর্ড কিংবা আমাদের খাতায় এক লাইল করে লিখে দিতেন । তিনি যখন লিখতেন তখন মনযোগ সহকারে দেখতাম তাঁর হাতের লেখার বিভিন্ন আঁচর গুলি এবং সেইভাবে আমিও ঠিক স্যারের লেখা অনুকরণ করে অবিকল ঐভাবেই লিখতে চেষ্টা করতাম। এক সময় সফলতারও কাছাকাছিও গিয়েছিলাম । বর্তমানে বয়স পয়তাল্লিশের কাছাকাছি গিয়েও সেটাকেই অনুকরণ অনুসরণ করে যাচ্ছি। আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষার্থীই তার শিক্ষা জীবনের কোনো না কোনো প্রিয় শিক্ষকের ভালো দিকটি অনুকরণ করেন নি এমন কথা আমার মতো কেহই অস্বীকার করতে পারবেন না। যাক সে কথা ।
এবার আসি শিক্ষা , সুশিক্ষা অথবা নৈতিক শিক্ষার কথাই যতই বলি না কেন ? একজন শিক্ষার্থীকে তার পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে অনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য মায়ের হাত ধরে কিংবা বাবার হাত ধরে শিক্ষা জীবনের প্রথম দিকে স্কুলে পর্দাপণ করেন। এরপর স্কুল, স্কুলের তার মত নতুন নতুন অন্য শিক্ষার্থী ,নতুন নতুন শিক্ষক,বিদ্যালয়ের পরিবেশ ,সবকিছুই সে একজন দার্শনিকের মতো পর্যবেক্ষণ করেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের হাটা চলা , কথা বার্তা ,পোশাক পরিচ্ছেদ, শিক্ষকের হাতের লেখা, বাচনভঙ্গি, সব কিছুই সে আত্মস্থ বা রপ্ত করতে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কোনো না কোনো প্রিয় শিক্ষক রয়েছেন যে তাঁদের অনুসরণ করে থাকেন।
বিজ্ঞান বিভাগ ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যরহারিক পরীক্ষার নম্বর বেশ রয়েছে কারিকুলামে। তাত্ত্বিক পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ড কতর্ৃক প্রণীত প্রশ্নের আলোকে শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা স্ব-স্ব কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। এসএসসি কিংবা এইচএসসি অথবা উচ্চ শিক্ষায় ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে নম্বর পেতে যদি কোনো শিক্ষার্থীকে অর্থ বা টাকা গুনতে হয়। শিক্ষার্থী কাংঙ্খিত টাকা না দিলে তাকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া, ফেল করিয়ে দেওয়া,শিক্ষার্থীকে তিরষ্কার মূলক ভৎর্সনা করাসহ নানান হুমকির সম্মুখিন হতে হয়। এগুলো কোনো না কোনো শিক্ষকেরই দ্বারাই ঘটে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম কিংবা ১২ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে সততা, নৈতিকতা, ঘুষ-দুর্নীতি, অন্যায় অপরকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে যারাই(শিক্ষকরা) শিখিয়েছেন তাদের নিকট থেকে যদি এমন নাজুক অবস্থার সম্মুখিন হতে হয় তাহলে বুঝতে হবে শিক্ষা অর্জন হয়েছে বটে তবে সুশিক্ষা কি অর্জিত হয়েছে ? অর্থই যদি ব্যবহারিকের মাপকাঠি হয় তাহলে তারা কি শিখেছে ? আবার এরাই পরবর্তীতে নিজ নিজ কর্ম জীবনে বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হলে তাদের ব্যক্তি জীবনে কি এর প্রভাব ফেলতে পারে না ? না কি এই ধরণের কাজ সর্বজন স্বীকৃত গ্রাম্য হাসি তামাশা জড়িত কথার মত প্রচলিত কথা ,যে দুধে একটু আধটু পানি মোশালে দোষ কি ? তাতে তো আর খারাপ কিছু মেশানো হচ্ছে না ! আসুন শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যবহারিক বিড়ম্বনাকর অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পাক । সততা, নৈতিকতা,ঘুষ-দুর্নীতি বিরুদ্ধে বিগত দিনে যে শিক্ষা তারা অর্জন করে ,ব্যবহারিকে যেনো তা ধ্বংস করে না দেয় সে বিষয়ে সকলের সচেতন হওয়া দরকার।