জমি দখল ও অনৈকিত কর্মকান্ডের প্রতিবাদে স্বপ্নদ্বীপ রির্সোটের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
- প্রকাশিত সময় ০১:৪৬:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
- / 140
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে ঈশ্বরদীর জয়নগরে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের নামে মদ, নারী ব্যবসা, ডিজে পার্টিসহ যাবতীয় অনৈতিক কর্মকান্ড, অবৈধভাবে জমি ও গোরস্তান দখল এবং ফলের গাছ মেরে ফেলা হয়েছে। রিসোর্টে উচ্চ আওয়াজ, বাজি ও পটকা ফাটানোসহ অনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা করায় এলাকায় বসবাসের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। বিপদগামী হচ্ছে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে।
এসবের প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এতে মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথার আশ্বাসে ও থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় মানববন্ধনকারী সহা¯্রধি এলাকাবাসী মহাসড়ক থেকে সরে আসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া-নাটোর মহাসড়কস্থ পাবনা ঈশ্বরদীর জয়নগর বোর্ডঘর মহাসড়কে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে সলিল মোল্লা, ফেলু মোল্লা ও মতিয়ার মোল্লা বলেন, এলাকার মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম চাউলের কমিশনে ব্যবসা করার সুবাদে ২০১৫ সালের দিকে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন (জয়নগর বোর্ডঘর) আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। নিচ তলায় গোডাউন আর উপর তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু পরে সেই বাড়িটিকে স্বপ্নদ্বীপ নাম দিয়ে রিসোর্ট করেছেন। সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের আসা যাওয়াকে কেন্দ্র করে মদ ও নারীর ব্যবসা শুরু করেন।
তারা আরও বলেন, খায়রুল ইসলামের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের আসা যাওয়ার সুবাদে তিনি এসব অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হলে খায়রুলের নিজস্ব বাহিনী ছাড়াও প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখান।
তারা আরও বলেন, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের দুই পাশে দুটি মসজিদ ও একটি কওমিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া কয়েক হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু রিসোর্টে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ আওয়াজে ডিজে পার্টি চলে। মদ্যপ অবস্থায় বিদেশী নাগরিকসহ স্থানীয় যুবকরা মাতলামি করেন। রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। ধর্মপ্রাণ মানুষের নামায আদায় ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা দানে ব্যহৃত হচ্ছে। আবাসিক এলাকায় এসব অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।
হাবিবুর রহমান,রবি, সাথি, সেলিনা বেগম বেগম বলেন, খায়রুল ইসলাম অবৈধভাবে তাদের জমি বেড়া দিয়ে ঘিরে দখল করে নিয়েছে। তাদের লিছু, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরণের ফলজ ও বনজ গাছের গোড়াই নোংরা পানির নালা কেটে মেরে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে জমি ৪৪ লাখ টাকা দরে বিক্রয় করতে রাজি হয়েছি। বায়নামা করে মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়েই ৫তলা ভবণ নির্মাণ করেছেন। কয়েক বছর পার হলেও বাকি টাকা দেয়নি।
আকাল উদ্দিন, রবিউল প্রাং, অমল কুমার সরকার, স্বরসতি কুমারী বলেন, খায়রুল ইসলাম স্থানীয় এমপির বোনের জমিসহ তাদের ৬০ বাড়ির জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খায়রুল ইসলাম প্রথমে তাদের জমিতে নোংরা পানির নালা করে সমস্ত ফলজ ও বনজ গাছ মেরে ফেলেছে। গত বুধবার সকালে খায়রুল ইসলাম লোকজন দিয়ে আমাদের পারিবারিক গোরস্তানের জায়গা দখলে বাবা,মা, চাচা, দাদা, দাদীসহ আত্মীয়স্বজনদের হাড় কবর থেকে তুলে ফেলার চেষ্টা করেন। এই সময় আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বিশ্ববিদালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মা ছালমা খাতুনসহ পরিবারের মেয়েরা এগিয়ে আসে। তখন খায়রুলের সন্ত্রাসী বাহিনী মাহিলাদের গলায় ধারালো হাসুয়া ধরে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেয়। ভয়ে মেয়েরা দৌড়ে বাড়িতে চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে ও রুপপুর প্রকল্পের রাশিয়ানদের সুত্রে জানা যায়, খায়রুল ইসলাম স্বপ্ন রিসোর্টে রুপপুর প্রকল্পের রাশিয়ানদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার মদ নিয়ে আসেন। এখানে রাশিয়ানদের জন্য মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয়সহ কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনা, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা বাঙ্গালি মেয়েদের নিয়ে আসেন। বর্তমানে এলাকার ৫টি মেয়ে এই রিসোর্টে নিয়মিত মনোরঞ্জনের কাজে যুক্ত রয়েছেন। এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা রিসোর্টের নিয়মিত খরিদদার। আগামী ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে কয়েক কোটি টাকার মদের আয়োজন করেছেন। সঙ্গীত শিল্পী গান গায়তে আগামী ১ জানুয়ারি/২৩ স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে আসছেন। এই জন্য রিসোর্টের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালনা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের একাধিক সুত্র জানায়, খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সেই সখ্যতায় তারা মাঝে মধ্যেই খায়রুলের স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে রাত্রিযাপনসহ আসা যাওয়া করেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে রাশিয়ানদের পাসপোর্ট ব্যবহার মদ আমদানী করায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে রিসোর্টের নামে হাজ্বি খায়রুল ইসলাম যা করছেন তা খুবই নোংরা বলেও সুত্রগুলো দাবী করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টের মালিক খায়রুল ইসলাম ওরফে হাজ্বি খায়রুল বলেন, এলাকাবাসী আমার সম্মানহানি করার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। আমার জমিই প্রতিবেশিরা দখল করে রেখেছেন দাবী করে তিনি বলেন, আমি কারও জমি দখল করিনি। স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসের বোন পরিকল্পিতভাবে প্রতিবেশিদের দিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করাচ্ছেন।