ঢাকা ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

মামুন হত্যার ঘটনায় পৌর কাউন্সিলর কামাল আটক॥ থানায় বিক্ষোভ ॥ অভিযান চলমান

অনলাইন ডেস্ক:
  • প্রকাশিত সময় ১০:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / 154

তুচ্ছ ঘটনায় কথাকাটাকাটির ঘটনায় গুলি করে মামুন হোসেন (২৫) নামের এক রিক্সাচালককে হত্যা ও অপর দুজনকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করার ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যাকারী আনোয়ার হোসেনের ভাই কামাল হোসেন ওরফে তেল কামালকে আটক করা হয়েছে। কামাল হোসেন ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে কাউন্সিলরের ভাই জামাল হোসেন জানান, কাউন্সিলর কামালকে বুধবার রাতে র‌্যাবের একটি দল তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়।

এদিকে আজ বিকেলে নিহত মামুনের লাশ পোস্টমর্টেম শেষে ঈশ্বরদী থানায় পৌঁছালে নিহতের স্বজনরা লাশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা হত্যাকারী আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ফাঁসি দাবি করে শ্লোগান দেন। এই সময় নিহত মামুনের মা লিপি বেগম ও স্ত্রী সুমাইয়ার আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনায় কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেনের ছোঁড়া গুলিতে গুরুতর আহত রকি (পিতা-শরিফ উদ্দিন) এবং ছুরিকাঘাতে আহত সুমন (পিতা-বাবু ওরফে বরকি বাবু)-কে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হতাহতরা সবাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কাউন্সিলর কামাল বা তার ভাই আনোয়ার উভয়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

আর ঘটনার রাতেই কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে র্যাব পরিচয়ে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে র‌্যাব, পাবনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে আটক করার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

রেলওয়ের পাকশী বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ, নিরাপত্তা পুলিশ, জিআরপি পুলিশ ও লোকো ক্যারেজ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে চুরিকৃত তেল বিক্রয় চক্রের ঈশ্বরদী অঞ্চলের মুল হোতা কাউন্সিলর কামাল হোসেন। দীর্ঘকাল ধরে রেলওয়ের চুরিকৃত তেল বিক্রয় করে অর্থশালী হয়েছেন তিনি। এই তেল চুরি চক্রের মুল হোতা হওয়ায় নিজের ভাই, ভাতিজাসহ কিছু আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার কিছু যুবকদের নিয়ে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী তৈরী করেন। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় তেল চুরির ব্যবসা আরো শক্তিশালী করেন। সেই নেতার আর্শিবাদেই রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন কামাল হোসেন। এরপর ঈশ্বরদী পৌরসভায় কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। অস্ত্রধারী বাহিনীর নেতৃত্বদানকারীই হলেন কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ভাই ও রিক্সাচালক মামুন হত্যার মূল আসামী আনোয়ার হোসেন।

এলাকাবাসীরা আরও বলেন, তুচ্ছ কারণে কাউন্সিলরের ভাই আনোয়ার হোসেন ও তার অন্যান্য ভাই এবং ভাতিজারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন। 

নিহত রিক্সাচালক মামুনের স্ত্রী আর্তনাদ করে বলেন, কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন দুই ভাইয়ের ফাঁসি চাই। আমাকে অকারণে অল্প বয়সে স্বামী হারা করেছে। এই জনমে বিচার না পাইলেও আখিরাতে হাশরের মাঠে আটক করে বিচার পাব। 

নিহত রিক্সাচালক মামুনের মা লিপি বেগম শোকাহত কন্ঠে করে বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে বিনাকারণে কাউন্সিলর কামাল হোসেন ও তার ভাই আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা নির্মমভাবে গুলিকরে হত্যা করেছে। আমাদের সংসারে উপার্জন করার মতো আর কেউ রইলো না। 

নিহতের মামা রাজ আলী ও মনি বলেন, তুচ্ছ কারণে ক্ষমতার দাপট ও টাকার জোরে আমার রিক্সাচালক গরিব ভাগ্নে মামুনকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। কাউন্সিলর কামাল ও তার ভাই আনোয়ারসহ দোষীদের ফাঁসি দাবি করছি। 

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিক্সাচালক মামুন হোসেন মারা গেছে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল, ছুরি উদ্ধারসহ হত্যাকারী আনোয়ার হোসেনসহ অন্যদের আটকের জন্য ঘটনার পর থেকেই অভিযান অব্যাহৃত রয়েছে। তবে কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে কারা আটক করে নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত করতে পারেন নি ওসি।

ওসি আরও বলেন, নিহতের লাশ দাফন করে রাতে নিহতের স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। অভিযোগ দেওয়ার পরই আসামীদের নাম জানানো সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলে নিষেধ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন ওরফে তেল কামালের ভাই আনোয়ার হোসেন ১০/১২ জনের দলবল নিয়ে শহরের কড়ইতলা মোড়ে পারভেজের মোটরসাইকেল গ্যারেজে বসে থাকা মামুন, রকি ও সুমনসহ অন্যান্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে। এক পর্যায় নিজের কাছে থাকা পিস্তল বের করে আনোয়ার হোসেন রিক্সাচালক মামুন হোসেন (২৫) ও রকিকে (২৬) গুলি করে। এই সময় আনোয়ারের সঙ্গে থাকা অন্যান্যরা সুমনসহ তাদের ছুরিকাঘাতে আহত করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নিহত মামুনের নামে ১টি, রকির নামে ১টি এবং সুমনের নামে থানায় ৩টি  মাদকের মামলা রয়েছে বলে থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

এই রকম আরও টপিক

মামুন হত্যার ঘটনায় পৌর কাউন্সিলর কামাল আটক॥ থানায় বিক্ষোভ ॥ অভিযান চলমান

প্রকাশিত সময় ১০:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

তুচ্ছ ঘটনায় কথাকাটাকাটির ঘটনায় গুলি করে মামুন হোসেন (২৫) নামের এক রিক্সাচালককে হত্যা ও অপর দুজনকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করার ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হত্যাকারী আনোয়ার হোসেনের ভাই কামাল হোসেন ওরফে তেল কামালকে আটক করা হয়েছে। কামাল হোসেন ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে কাউন্সিলরের ভাই জামাল হোসেন জানান, কাউন্সিলর কামালকে বুধবার রাতে র‌্যাবের একটি দল তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়।

এদিকে আজ বিকেলে নিহত মামুনের লাশ পোস্টমর্টেম শেষে ঈশ্বরদী থানায় পৌঁছালে নিহতের স্বজনরা লাশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা হত্যাকারী আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ফাঁসি দাবি করে শ্লোগান দেন। এই সময় নিহত মামুনের মা লিপি বেগম ও স্ত্রী সুমাইয়ার আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনায় কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেনের ছোঁড়া গুলিতে গুরুতর আহত রকি (পিতা-শরিফ উদ্দিন) এবং ছুরিকাঘাতে আহত সুমন (পিতা-বাবু ওরফে বরকি বাবু)-কে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হতাহতরা সবাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কাউন্সিলর কামাল বা তার ভাই আনোয়ার উভয়ই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

আর ঘটনার রাতেই কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে র্যাব পরিচয়ে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে র‌্যাব, পাবনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে আটক করার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

রেলওয়ের পাকশী বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ, নিরাপত্তা পুলিশ, জিআরপি পুলিশ ও লোকো ক্যারেজ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং প্রতিবেশিদের কাছ থেকে জানা যায়, ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে চুরিকৃত তেল বিক্রয় চক্রের ঈশ্বরদী অঞ্চলের মুল হোতা কাউন্সিলর কামাল হোসেন। দীর্ঘকাল ধরে রেলওয়ের চুরিকৃত তেল বিক্রয় করে অর্থশালী হয়েছেন তিনি। এই তেল চুরি চক্রের মুল হোতা হওয়ায় নিজের ভাই, ভাতিজাসহ কিছু আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার কিছু যুবকদের নিয়ে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী তৈরী করেন। এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় তেল চুরির ব্যবসা আরো শক্তিশালী করেন। সেই নেতার আর্শিবাদেই রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন কামাল হোসেন। এরপর ঈশ্বরদী পৌরসভায় কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। অস্ত্রধারী বাহিনীর নেতৃত্বদানকারীই হলেন কাউন্সিলর কামাল হোসেনের ভাই ও রিক্সাচালক মামুন হত্যার মূল আসামী আনোয়ার হোসেন।

এলাকাবাসীরা আরও বলেন, তুচ্ছ কারণে কাউন্সিলরের ভাই আনোয়ার হোসেন ও তার অন্যান্য ভাই এবং ভাতিজারা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন। 

নিহত রিক্সাচালক মামুনের স্ত্রী আর্তনাদ করে বলেন, কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন দুই ভাইয়ের ফাঁসি চাই। আমাকে অকারণে অল্প বয়সে স্বামী হারা করেছে। এই জনমে বিচার না পাইলেও আখিরাতে হাশরের মাঠে আটক করে বিচার পাব। 

নিহত রিক্সাচালক মামুনের মা লিপি বেগম শোকাহত কন্ঠে করে বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে বিনাকারণে কাউন্সিলর কামাল হোসেন ও তার ভাই আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা নির্মমভাবে গুলিকরে হত্যা করেছে। আমাদের সংসারে উপার্জন করার মতো আর কেউ রইলো না। 

নিহতের মামা রাজ আলী ও মনি বলেন, তুচ্ছ কারণে ক্ষমতার দাপট ও টাকার জোরে আমার রিক্সাচালক গরিব ভাগ্নে মামুনকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। কাউন্সিলর কামাল ও তার ভাই আনোয়ারসহ দোষীদের ফাঁসি দাবি করছি। 

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, গুলিবিদ্ধ ও ছুরিকাঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিক্সাচালক মামুন হোসেন মারা গেছে। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল, ছুরি উদ্ধারসহ হত্যাকারী আনোয়ার হোসেনসহ অন্যদের আটকের জন্য ঘটনার পর থেকেই অভিযান অব্যাহৃত রয়েছে। তবে কাউন্সিলর কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে কারা আটক করে নিয়ে গেছে তা নিশ্চিত করতে পারেন নি ওসি।

ওসি আরও বলেন, নিহতের লাশ দাফন করে রাতে নিহতের স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। অভিযোগ দেওয়ার পরই আসামীদের নাম জানানো সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলে নিষেধ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষে ঈশ্বরদী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন ওরফে তেল কামালের ভাই আনোয়ার হোসেন ১০/১২ জনের দলবল নিয়ে শহরের কড়ইতলা মোড়ে পারভেজের মোটরসাইকেল গ্যারেজে বসে থাকা মামুন, রকি ও সুমনসহ অন্যান্যদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে। এক পর্যায় নিজের কাছে থাকা পিস্তল বের করে আনোয়ার হোসেন রিক্সাচালক মামুন হোসেন (২৫) ও রকিকে (২৬) গুলি করে। এই সময় আনোয়ারের সঙ্গে থাকা অন্যান্যরা সুমনসহ তাদের ছুরিকাঘাতে আহত করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

নিহত মামুনের নামে ১টি, রকির নামে ১টি এবং সুমনের নামে থানায় ৩টি  মাদকের মামলা রয়েছে বলে থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।