ঢাকা ০৬:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

পাবনায় অবৈধভাবে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, হুমকিতে নদী রক্ষা বাঁধ

পাবনা প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত সময় ০৪:১৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / 123

পাবনায় পদ্মানদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। ছবি: স্বতঃকণ্ঠ


প্রভাব বিস্তার করে পাবনার সুজানগর উপজেলায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালীরা। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙন সৃষ্টি হলে ভেস্তে যেতে পারে সরকারের নেয়া জিও ব্যাগ প্রকল্প, হুমকিতে পড়তে পারে নদী রক্ষা বাঁধও।

বিনা বাধায় উপজেলার ভায়না,সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর ও ভাটপাড়া,নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের রাইপুর,উদায়পুর,হাসামপুর,বড়খাপুর সহ কয়েকটি পয়েন্টে দিন ও রাতে ২৪ ঘণ্টা এই বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। আর এই বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলার প্রভাবশালী দুটি চক্র। একাধিক ভেকু দিয়ে শতাধিক বালুবাহী ট্রাকের সাহায্যে এই বালু উত্তোলন হলেও রহস্যজনকভাবে নিরব রয়েছে প্রশাসন।

পদ্মা নদীতে হলেও এইসব জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া এইসব জমির মালিকদের কোনও ধরনের টাকা-পয়সা না দিয়ে জোর করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলেই জমির মালিকদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এইভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সেসময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধ।

নাম প্রকাশে একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম দিকে প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় বেশিরভাগ বালু উত্তোলন হতো। ফলে তার প্রতিপক্ষ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতো। সম্প্রতি দুইটি পক্ষই এখন সমন্বয় করে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে। এজন্য তারা দুইপক্ষ কয়েকটি পয়েন্ট ভাগ করে নিয়েছে। প্রভাবশালী এই দুইপক্ষের সমন্বয়ের ফলে একদিকে প্রশাসন যেমন কিছু বলছে না অপরদিকে সাধারণ মানুষও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

বালু উত্তোলনের এই কর্মযজ্ঞে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল ওহাব এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের নাম উঠে আসলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা আ,লীগের সভপতি আলহাজ্ব আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আমি বালু কাটার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এর ঘোরতর বিরোধী। আপনারা এই বিষয়ে লেখালেখি করেন, আপনারা যদি কিছু করতে পারেন তাহলে আমি আপনাদের স্যালুট করবো।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। হয়তো এই উপজেলার যারা আওয়ামী লীগ করে তারা হয় আমার সাথে নয়তো ওহাব সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এখন কে কোথায় কি করছে সব খবরই আমার রাখা সম্ভব হয় না। এগুলো তারা কেন করে, কি কারণে করে আল্লাহ ভালো জানেন।

এবিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পয়েন্টে পুলিশ গেলেই তারা পালিয়ে যায়। রাস্তা-ঘাটে তাদের সোর্স থাকে, আমরা পৌঁছানোর আগেই তারা সরঞ্জাম নিয়ে পালিয়ে যায়। এখন আমরা আরও জোরালোভাবে অভিযান চালাবো।’

ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা অভিযান চালিয়েছি। ৫ জনকে আমরা জেল-জরিমানাও করেছি।’

পাবনায় অবৈধভাবে পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, হুমকিতে নদী রক্ষা বাঁধ

প্রকাশিত সময় ০৪:১৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৩

প্রভাব বিস্তার করে পাবনার সুজানগর উপজেলায় পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছেন প্রভাবশালীরা। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙন সৃষ্টি হলে ভেস্তে যেতে পারে সরকারের নেয়া জিও ব্যাগ প্রকল্প, হুমকিতে পড়তে পারে নদী রক্ষা বাঁধও।

বিনা বাধায় উপজেলার ভায়না,সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর ও ভাটপাড়া,নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের রাইপুর,উদায়পুর,হাসামপুর,বড়খাপুর সহ কয়েকটি পয়েন্টে দিন ও রাতে ২৪ ঘণ্টা এই বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। আর এই বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলার প্রভাবশালী দুটি চক্র। একাধিক ভেকু দিয়ে শতাধিক বালুবাহী ট্রাকের সাহায্যে এই বালু উত্তোলন হলেও রহস্যজনকভাবে নিরব রয়েছে প্রশাসন।

পদ্মা নদীতে হলেও এইসব জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া এইসব জমির মালিকদের কোনও ধরনের টাকা-পয়সা না দিয়ে জোর করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলেই জমির মালিকদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এইভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সেসময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধ।

নাম প্রকাশে একাধিক সূত্র জানায়, প্রথম দিকে প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় বেশিরভাগ বালু উত্তোলন হতো। ফলে তার প্রতিপক্ষ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করতো। সম্প্রতি দুইটি পক্ষই এখন সমন্বয় করে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে। এজন্য তারা দুইপক্ষ কয়েকটি পয়েন্ট ভাগ করে নিয়েছে। প্রভাবশালী এই দুইপক্ষের সমন্বয়ের ফলে একদিকে প্রশাসন যেমন কিছু বলছে না অপরদিকে সাধারণ মানুষও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

বালু উত্তোলনের এই কর্মযজ্ঞে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল ওহাব এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের নাম উঠে আসলেও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা আ,লীগের সভপতি আলহাজ্ব আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আমি বালু কাটার বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এর ঘোরতর বিরোধী। আপনারা এই বিষয়ে লেখালেখি করেন, আপনারা যদি কিছু করতে পারেন তাহলে আমি আপনাদের স্যালুট করবো।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। হয়তো এই উপজেলার যারা আওয়ামী লীগ করে তারা হয় আমার সাথে নয়তো ওহাব সাহেবের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এখন কে কোথায় কি করছে সব খবরই আমার রাখা সম্ভব হয় না। এগুলো তারা কেন করে, কি কারণে করে আল্লাহ ভালো জানেন।

এবিষয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পয়েন্টে পুলিশ গেলেই তারা পালিয়ে যায়। রাস্তা-ঘাটে তাদের সোর্স থাকে, আমরা পৌঁছানোর আগেই তারা সরঞ্জাম নিয়ে পালিয়ে যায়। এখন আমরা আরও জোরালোভাবে অভিযান চালাবো।’

ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা অভিযান চালিয়েছি। ৫ জনকে আমরা জেল-জরিমানাও করেছি।’