নিপাহ ভাইরাসে মারা যাওয়া শিশুর বাড়িতে ‘আইইডিসিআর’র ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল
- প্রকাশিত সময় ০১:৩০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩
- / 215
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত সোয়াদ হোসেনের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীতে আসেন ও দিনব্যাপী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। দলের নেতৃত্ব দেন আইইডিসিআরের সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. কাইয়ূম হোসেন। -স্বতঃকণ্ঠ
পাবনার ঈশ্বরদীতে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোয়াদ হোসেন (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়িতে এসেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দিনব্যাপী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এর আগে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. কাইয়ূম হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল শিশুটির বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের দিঘা গ্রামে পৌঁছায়।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাতে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু সোয়াদের মৃত্যু হয়। এরপর সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি দেখে সোমবার রাতে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল ঈশ্বরদীতে শিশুটির বাড়িতে আসে। এ সময় তারা সোয়াদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এলাকায় জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেন। মঙ্গলবার দিনব্যাপী বাড়ির ১৫-১৭ জন সদস্যের স্যাম্পল সংগ্রহ করে জেলা শহরে ফিরে আসেন। বুধবার আবারও তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা বক্তব্য নিতে চাইলে প্রতিনিধি দল তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাননি। ঢাকায় ফিরে অফিসিয়ালি পর্যবেক্ষেনের বিষয়ে জানাবেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।
প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. রাশেদ, ডা. মিলি, ডা. সাবরিনা, ডা. রাজাসহ ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসমা খান।
ডা.আসমা খাতুন বলেন, আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল ঈশ্বরদীতে এসে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছে। কাঁচা রস, কাঁচা ফল জাতীয় কোনো জিনিস ধোয়া ছাড়া না খাওয়ার পরামর্শ দেন। নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুরের লালা থেকে হয়ে থাকে। এজন্য এসব জিনিস ধোয়া ছাড়া খাওয়া যাবে না।
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহত শিশুর বাড়িতে গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল আসেন। তারা মূলত ইনভেস্টেগেশনের জন্য আসছিলেন। বাড়ির সকল সদস্যদের স্যাম্পল সংগ্রহ করেছেন। এর বেশি আমাদের কিছুই জানাননি। ঢাকায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানানোর কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সোয়াদ হোসেন (৭) নামে ওই শিশুর মৃত্যু হয়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাবনা জেলায় এটিই প্রথম মৃত্যু। রোববার ( ২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শিশু সোয়াদ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের মো. সানোয়ার হোসেনের ছেলে। সে দিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সোয়াদের বাবা সানোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ২০ দিন আগে সোয়াদসহ পরিবারের সবাই মিলে খেজুরের রস খায়। গত ১৫ জানুয়ারি বিকেলে স্থানীয় স্কুলমাঠে খেলা অবস্থায় সোয়াদ অসুস্থবোধ করে। ওই দিন রাতে সোয়াদের জ্বর আসে এবং নাপা ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর জ্বর কমে যায়। এর তিন দিন পর সেলিমপুর বাজারের শাহজাহান চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে অবস্থা খারাপ হলে ২০ জানুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ভর্তি করার পর চিকিৎসক দেখে কিছু টেস্ট দিলে সেগুলো হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রিপোর্টে নিপাহ ভাইরাস ধরা পড়ে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সোয়াদ মারা যায়।