রায়গঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিক পরিবারের আনন্দ ভ্রমণ অনুষ্ঠিত
- প্রকাশিত সময় ১০:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / 143
প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও সাজেক, খাগড়াছড়ি,কক্সবাজার ৬ দিনের আনন্দ ভ্রমণ করেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিক পরিবার।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে রায়গঞ্জ প্রেসক্লাব চত্বরে সকলে জমায়েত হন। বেলা ৩ টায় মোনাজাতের মাধ্যমে বিলাস বহুল বাস নিয়ে শুরু হয় আনন্দ ভ্রমণ। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ভ্রমণের প্রথম স্পট সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা বাসটি সারারাত চলতে থাকে। পুর্ব গগণে আবির রাঙিয়ে ভোরের আলো ফুটে ওঠে। নতুন দিগন্তের আনন্দে পাখির কুজনে চারদিক মুখর হয়ে ওঠে। রাতের আঁধার কাটিয়ে দিবাকর হামাগুড়ি দিয়ে আত্ম প্রকাশ করতেই খাগড়াছড়ি শহরে পৌছলো গাড়ি। তারপর গাড়ি থেকে নেমে সকালের নাস্তা সেরে সবাই সাজেকের উদ্দেশ্যে চাঁদের গাড়িতে রওনা হয়।মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রথম গেট থেকে বিশেষ পাহারায় সারিবদ্ধ ভমণের গাড়িগুলো চলতে থাকে। যেতে যেতে দেখা যায় রাস্তার দু’পাশের অপরুপ দৃশ্য।
এ এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান খুবই কঠিন। তবুও এরা বেঁচে আছে শত আনন্দে প্রকৃতির প্রেমে। দুপুরে গাড়ি পৌছলো সাজেকে। গাড়ি থেকে নেমে রাত্রি যাপনের জন্য পুর্ব নির্ধারিত বুকিং “সাজেক ক্লাসিক প্রিমিয়াম” হোটেলে সবাই উঠেন। মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে সবাই সাজেকের সর্বোচ্চ কংলাক পাহাড় দেখতে একসাথে চাঁদের গাড়িতে রওনা হয়। বাঁশের লাঠির সহায়তা নিয়ে ১৮০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর ওঠেন অনেকেই। কংলাক পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে চারদিক তাকালে চোখে পড়ে শুধু গাছপালা,পাহাড় আর পাহাড়।পাহাড়ের কোলে সুর্যোদয় আর সুর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য যে কারো মন আকৃষ্ট করবে।
রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক পরিবারের মত দেশের অনেক পর্যটকরাই প্রতিবছর এ সাজেকে এসে প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করে থাকেন। বুধবার বিকেলে আবার যাত্রা শুরু হয় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। রাত সাড়ে ১০ টায় এসে কক্সবাজার কলাতলীর উল্লেখযোগ্য “কক্সভিউ হোটেল” এ ৩ রাতের জন্য বুকিং হয়। মাল-ছামানা রেখে খাবার খেয়ে চলতে থাকে ইচ্ছামত ঘোরাঘুরি।
অনেকেই বেরিয়ে পড়েন প্রমত্বা সাগর পাড়ের দিকে। যখন সন্ধ্যা শুরু হয় তখন দেখা যায়,সাগরের মাঝে সুর্যের আত্মগোপন করার দৃশ্য। কি মনোহর, কি অপরুপ দৃশ্য ! আস্তে আস্তে লাল টকটকে সুর্যটা সাগরের সুবিশাল বক্ষ মাঝে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আবছা আঁধার চারদিক গ্রাস করে ফেলে। কক্সবাজার ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য সাগর পাড়ের সুগন্ধ্যা স্পট, লাবনী স্পট, ডলফিন মোড় স্পট, বিমান বন্দর, নবনির্মিত রেলওয়ে স্টেশন,রেডিয়েন্ট ফিস ওয়াল্ড, মহেশখালী, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ার টেক, চিংড়ি ঘের, মিনি বান্দরবান,রামু রাবার বাগান সহ বিভিন্ন স্পট ইচ্ছামত ভ্রমণ হয়।
অনেকেই সাগড় পাড়ে বসানো মেলায় সাগর সম্পদ ঝিনুকের তৈরি নানা জিনিস পত্র কিনে ধন্য হয়। আবার কেউ কেউ সোহাগ বশত: বার্মিস মার্কেটে গিয়ে পরিবারের অন্যান্যদের জন্য সাধ্যমত কেনাকাটা করেন। এভাবে চলতে থাকে ৩ টি দিন। ফেরার পালা। শনিবার দুপুরে বুকিং “হোটেল কক্সভিউ” ছেড়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সবাই উঠেন গাড়িতে। আসা যাওয়ার পথে আনন্দ ভ্রমণের গাড়ির মধ্যে বক্সে বাজানো মিষ্টি মধুর হিন্দি আর বাংলা গানে খুবই মজা হচ্ছিল। বিশেষ করে সঙ্গীতানুরাগী বন্ধুবর সাংবাদিক লতিফের মেয়েদের নাচ গান, সভাপতির নাতনী, সাংগঠনিক সম্পাদকের মেয়ের নাচ,গান সত্যিই যেন সবার মন কেড়ে নেয়।
একটানা ভ্রমণে সবার শরীর মন ক্লান্ত। তবুও হাসি আনন্দ আর আলাপচারিতায় রাত কাটছিল। আধো নিদ্রা আর আধা জাগরণের মধ্য দিয়ে রাত কাটার পর ভোর নাগাদ সবাই যার যার বাড়ি পৌছেন। সকলের আস্থাভাজন রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কে,এম রফিকুল ইসলাম রফিক, পরিশ্রমী, আপোষহীন সাধারন সম্পাদক এইচ,এম মোনায়েম খান, একনিষ্ঠ, হাস্যোজ্বল সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হায়দার আব্বাসী সহ সংগঠনের অন্যান্য নিবেদিত প্রাণ সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সুদৃড় সাধনা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসলই এবারের সাজেক-কক্সবাজার আনন্দের বনভোজন।
সময়ের ব্যবধানে সবকিছু হারিয়ে যাবে কিন্তু প্রকৃতির লীলাভুমি সেই চমকপ্রদ সাজেক আর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঢেউয়ের কথা যেন মনের মধ্যে জমা থাকবে। সবকিছু মিলে ভালই লাগছিল।
রায়গঞ্জ প্রেসক্লাব সাংবাদিক পরিবারের এবারের আনন্দে ভরা বনভোজন সত্যিই যেন মিলন মেলা।