স্বামীর স্বীকৃতি পেতে স্ত্রীর অনশন
- প্রকাশিত সময় ০৩:৪৮:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
- / 189
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদার দাবীতে শিমুল রানী পাল নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা গত তিনদিন ধরে অনশনের পর ব্যাংকার স্বামী কার্তিক পালের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ২০ এপ্রিল সকালে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ মেন্দা পালপাড়ায় ব্যাংকার কার্তিক পালের বাড়িতে এ স্বীকৃতির ঘটনা ঘটে।
কার্তিক পাল ওই মহল্লার অসিত পালের ছেলে ও অগ্রণী ব্যাংক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সিনিয়র প্রন্সিপাল অফিসার পদে কর্মরত বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় তার স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে স্বামী কার্তিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেছিলেন ওই শিক্ষিকা।
এদিকে স্ত্রী বাড়িতে আসার খবরে স্বামী কার্তিক পাল তাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে পালিয়ে থেকে নানা টালবাহানা করতে থাকে।
একদিকে স্ত্রীর অনশন, অন্যদিকে স্বামীর মর্যাদা না দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় যুবকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৩ বছর আগে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুনীল চন্দ্র পালের মেয়ে ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মেন্দাপালপাড়া মহল্লার অসিত চন্দ্র পালের ছেলে কার্তিক চন্দ্র পালের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কার্তিক অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অগ্রণী ব্যাংক শাখায় সিনিয়র প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত।
তারা ২০১০ সালের মার্চ মাসে জয়পুরহাট জেলা নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে জয়পুরহাট জেলার একটি স্থানীয় কালি মন্দিরে পুরহিত দ্বারা মালা বদলের মাধমে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
এরপর তারা উভয়ে পরিবারকে না জানিয়ে গোপনে স্বামী ও স্ত্রী হিসাবে বসবাস করেও আসছিল। পরে ওই শিক্ষিকাকে সামাজিকভাবে বিয়ের স্বীকৃতি না দিয়ে নানা ধরণের টাল বাহানা শুরু করেন ব্যাংকার কার্তিক পাল।
সেকারণে গত মঙ্গলবার ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্ত্রী হিসাবে সামাজিক স্বীকৃতির দাবিতে কার্তিকের বাড়িতে অনশন শুরু করেন শিক্ষিকা। খবর পেয়ে ওই দিন রাতেই শিক্ষিকার বাবা-মা ও দুই মামা কার্তিকের বাড়িতে আসেন। টানা তিন দিন অনশনের পর বৃহস্পতিবার সকালের দিকে স্থানীয় যুব সম্প্রদায় ও বাসিন্দারা কার্তিকের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরে সনাতন ধর্ম মতে, পুরাহিত অজিত চন্দ্র ও ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ,২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বরাত আলী ও সনাতন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সিঁদুর ও মালা পড়িয়ে সামাজিকভাবে স্ত্রীকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন ব্যাংকার কার্তিক পাল।
ব্যাংকার কার্তিকের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া স্কুল শিক্ষিকা বলেন, কার্তিকের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্কের কথা সবাই জানে। আমরা কাউকে না জানিয়ে প্রথমে কোর্টের মাধ্যমে ও পরে ধর্মের বিধান মতে বিবাহ করেছি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে কার্তিক পাল তার সাথে ঠিক মত যোগাযোগ না করায় বাধ্য হয়ে সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার আশায় স্বামী কার্তিকের বাড়িতে অবস্থান করছি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে সনাতন ধর্মমতে কার্তিক পাল তাকে স্ত্রীর মর্যাদা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংকার কার্তিক চন্দ্র পালকে বিয়ের বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে চাইলে, তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
কার্তিকের চন্দ্র পালের বাবা অশীত চন্দ্র পাল বলেন, আলোচনার পর ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিকভাবে পুত্রবধূর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, কার্তিক পাল একজন ব্যাংকার হয়েও তার স্ত্রীকে দীর্ঘদিন সামাজিক স্বীকৃতি দেননি এটা দুঃখজনক। যা হোক গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকালের দিকে তাদের ধর্মীয় বিধানে ওই শিক্ষিকাকে সামাজিকভাবে স্ত্রীর স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরা খোঁজ খবর রাখছি। পারিবারিক বা সামাজিকভাবে বসে কার্তিক চন্দ্র পাল স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছেন বলে জেনেছি। তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।