ভেসে আসিনি, রাজপথ থেকেই বঙ্গভবনে গিয়েছি: মহামান্য রাষ্ট্রপতি
- প্রকাশিত সময় ০৮:৫৩:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
- / 205
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘আমি ভেসে আসিনি, একেবারে রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। পাবনার রাজপথ থেকে বঙ্গভবনে গিয়েছি। আমি বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া পেয়েছি। কারাগারে যেতে হয়েছে। চরম অত্যাচারিত হয়েছি ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে।’
মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে মাঠে অনুষ্ঠিত নাগরিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংস করেছিল। কিন্তু পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আবার ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। অনেক মন্ত্রী আমার কাছে এসে বিশ্ব ব্যাংকের দাবি মেনে নিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। এটা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছি।’
এ সময় তিনি পাবনা থেকে ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই আনন্দ মেতে ওঠেন। ধাপে ধাপে পাবনাবাসীর দাবি পূরণে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রপতি।
স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমি এই পাবনা শহরে প্রতিরোধ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট আমাকে গ্রেফতার করে সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে আমিসহ আরও অনেককে নিয়ে টানা তিন মাস চালিয়েছিল অসহ্য-অমানবিক নির্যাতন। তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাই। তারপর বিচারক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেই। সাধ্যমতো দেশের জন্য কাজ করেছি। জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। সেই দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে যে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তার তদন্তের ভার আমাকে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। আমার দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কানাডার আদালতে বিশ্ব ব্যাংকের সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই চাপ মোকাবিলায় আমার প্রতি পাবনাবাসীসহ দেশবাসীর দোয়া ছিল বলেই সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রপতি হবো কখনও ভাবিনি। কিন্তু ভাগ্য আজ আমাকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছে। আপনাদের দোয়া আর ভালোবাসা ছিল বলেই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আপনাদের ভালোবাসাকে সঙ্গী করেই দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। এ জন্য আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা প্রভাব থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। মানুষের গড় আয়ু ও জীবযাত্রার মান বেড়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে বিকাল ৩টা ২৪ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাকে বরণ করেন পাবনাবাসী। বিকাল ৩টা ২৭ মিনিটে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী রেবেকা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানা, পাবনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অধ্যাপক শীবজীত নাগ ও আব্দুল মতিন খান। ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন পাবনা নাগরিক সমাজের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। এবং পাবনার প্রতীকী নগরচাবী তুলে দেন পাবনা পৌরসভার মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলামের সভাপতিত্বে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নাগরিক সংবর্ধনায় বক্তব্য দেন নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, আলহাজ্ব মোকবুল হোসেন এমপি, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, আহমেদ ফিরোজ কবির এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপি, পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন, আব্দুল মতীন খান, ড. আব্দুল আলিম সহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।