ঈশ্বরদীতে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অজ্ঞাত আসামী করে মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
- প্রকাশিত সময় ০৫:৫৫:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
- / 293
গত শনিবার ২৭ মে ট্রাফিক পুলিশ সদ্যসের সাথে বিবাদের জেরে পুলিশের করা মামলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের অজ্ঞাত করে আসামী করায় এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সোমবার ২৯ মে সকাল ১০ টায় ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলে গ্রুপিং একটি বৃহৎ সমস্যাতে পরিণত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরাও বিএনপির মধ্যেই একটি গ্রুপে পরিণত হয়ে গিয়েছি।
অনেক শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংকট চলাকালীন একটি সময়ে আমরা আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। গত শনিবার ইং ২৭ মে ২০২৩ ইং তারিখে রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ ঘটিকার সময় ঈশ্বরদী শহরের রেলগেটের পশ্চিম পার্শ্বে ঈশ্বরদী বিমান বন্দর সড়কের উপর গাড়ি দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোঃ জাহিদুর রহমানের সঙ্গে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদ হাসান সোনামনিসহ তার কয়েকজন সহযোগীদের (যারা উপজেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মী) সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোনামনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। (এই ঘটনাটি ঘটে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে যা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরদীবাসী সবাই অবগত আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি একটি ব্যক্তিগত সমস্যা যা আমাদের কারো সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই ঘটনার কিছু অংশ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন মনে করেছি)।
এর কিছু সময় পর পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু সদস্য দলবেঁধে এসে, ঈশ্বরদী রেল গেইটস্থ পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব জাকারিয়া পিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে, এবং অফিসে অবস্থান করা পৌর যুবদলের আহবায়ক জাকির হোসেন জুয়েলসহ যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বেদম প্রহার করে আহত করে এবং পরে আটক করে প্রথমে ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তারপরে থানায় নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে যুবদলসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৩০/৩৫ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এই বিষয়ে স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিভিন্ন ধরণের তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমরা সত্যের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে, অন্যায়কারী যেই হোক না কেনো, সে শাস্তি পাবেই। তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। ঘটনাটি মূলত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সোনামনির গাড়িতে থাকা সহযোগিসহ সোনামনির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের বাকবিদন্ডার কথা লোকমুখে শুনে ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, দলের নেতা ও বড় ভাই হিসেবে উপস্থিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জাহিদুর রহমান ও টিএসআই জাহিদ শেখের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশদের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার আশংকায় সোনামনি নিজের মোবাইল থেকে ফেসবুক লাইভে যান। উক্ত বিষয়টি দেখতে পেয়ে ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই জাহিদ শেখ ওয়ারলেস বার্তায় থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে কথা কাটা-কাটিসহ ধাক্কাধাকি হয়েছে বলে জানান। এরপর ট্রাফিক পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা এসে সোনামনিকে টেনে হেঁচড়ে থানায় নিয়ে যান। তখন জাকির হোসেন জুয়েল নিরুপায় হয়ে প্রতিদিনের মত বিএনপি নেতা সাবেক পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জনাব জাকারিয়া পিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজে গিয়ে বসেন। তখন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪ নেতাকর্মী সোনামনির আটকের বিষয়টি জানার জন্য জনাব জাকারিয়া পিন্টুর অফিসে অবস্থান করা জাকির হোসেন জুয়েলের নিকট যান।
প্রিয় কলম সৈনিক ভাইয়েরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই পুলিশের একটি দল জনাব জাকারিয়া পিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করেন। তখন নেতাকর্মীরা ভয় পেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টার ভেতর থেকে নামিয়ে ভিতরে বসে থাকেন। এরপর পুলিশ প্রতিষ্ঠানের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে জাকির হোসেন জুয়েল, তরিকুল ইসলাম তারেক, হাবিবুর রহমান হাবিব, মামুন হোসেন, চয়ন হোসেন সরদারকে আটক করে।
সমাজের দর্পণ প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন সারারাত বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানির আতংকের মধ্যে রাত্রি অতিবাহিত করে। পরের দিন রোববার সকালে থানায় ট্রাফিক পুলিশের দায়ের করা মামলায় মাহমুদ হাসান সোনামনি, জাকির হোসেন জুয়েল, তারেক, হাবিব, মামুন ও চয়েনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের সঙ্গে ঈশ্বরদী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মিলন দাস ও ঈশ্বরদী পৌর ২ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন এবং কামরুজ্জামান রিপন নামীয় পলাতক আসামী উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত দেখিয়ে অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। যা আমাদের নিকট চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। কারণ মিলন দাস, আরিফ হোসেন ও কামরুজ্জামান রিপন এর সঙ্গে ওই গ্রুপের কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না।
হে জাতির বিবেক প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের নিকট আবেদন জানাচ্ছি। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে না নিয়ে গিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত করে যদি কেউ অপরাধ করে বা অপরাধী চিহ্নিত হয় তাহলে শুধুমাত্র তাদের বিষয়েই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আপনাদের সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আহবান জানাচ্ছি।
তবে আমরা সকলেই বিএনপি পরিবার। আজ দেশের এই কঠিন মুহূর্তে আমাদের ঐক্য থাকাটা একান্ত জরুরী। তাই আমরা বিএনপির এই গ্রুপটাকে পছন্দ না করলেও যেহেতু তারা আমাদের বিএনপির ভাই তাই ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব জাকারিয়া পিন্টু এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এই অনাকাঙ্ক্ষিত অভিযান এবং জনাব জাকারিয়া পিন্টু সমর্থিত বিএনপি নেতাকর্মীদের উপরে এই অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের জন্য আমরা উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রাত যাপন করে আমাদের নিশ্চিতে ঘরে ঘুমিয়ে থাকার সদায় কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ। আমাদের সঙ্গে পুলিশের ভাইদের কোন বিরোধ নেই। পুলিশ আমাদের ও দেশের জনগণের সেবক। তাই এমন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন কারোর সঙ্গে কখনোই আর না ঘটে এটাই আমাদের কাম্য। পরিশেষে আমাদের ডাকে আপনাদের মহামুল্যবান সময় দেওয়ায় এবং আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য আপনাদের প্রত্যেকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞা ও সালাম জানিয়ে আমাদের লিখিত বক্তব্য শেষ করছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, উপজেলা স্বেচ্ছবেক দলের সদস্য সচিব মোঃ মেহেদী হাসান, উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ও কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম উজ্জল, ২নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি রাজু, পৌর বিএনপির তাঁতি বিষয়ক সম্পাদক খালেক, উপজেলা সাইবার ফোর্স উপদেষ্টা সোহেল খান, পৌর বিএনপি’র নেতা আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য ইসরাফিল হোসেন পিল।