ঢাকায় বন্ধুকে হত্যার পর জানাজায় অংশ নেন খুনিরা!
- প্রকাশিত সময় ০২:০৫:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অগাস্ট ২০২৩
- / 63
ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাদকের পার্টিতে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় নয়ন নামে এক অটোরিকশা চালককে। হত্যার পর খুনিরা অংশ নেন জানাজায়! শুধু কি তাই, দাফনের জন্য সবাই যান গ্রামের বাড়িতেও। এরাই আবার খুনের দায় চাপানোর চেষ্টা করেন অন্যের ঘাড়ে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ৬ জনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
থানার মালঞ্চ এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল গত ৮ জুলাই রাতে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেই রাতে নয়ন, রাকিব ও আলীরা ইয়াবা পার্টির আসর বসিয়েছিলেন; আয়োজক ছিলেন নয়ন। সেখানেই বন্ধুরা ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলেন নয়নকে। কিন্তু কেন?
পুলিশ জানায়, জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে মালঞ্চ এলাকায় ছুটে যান তারা। উদ্ধার করা হয় নয়নের মরদেহ। শুরু হয় তদন্ত। যেহেতু একজন অটোচালককে খুন করা হয়েছে এবং তার অটোটি পাওয়া যাচ্ছিল না, প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, অটো ছিনতাই করতে এসেই দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করে।
নয়নের বড় ভাই কালুকে থানায় ডেকে আনলে সে জানায়, তাদের বাড়ি শরীয়তপুরে। তার দেয়া তথ্য যাচাই করে পুলিশ দেখতে পায় নয়নের নামে কয়েকটি মাদকের মামলা আছে। আরও বিস্তারিত তথ্য নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, নয়ন মূলত অটো চালানোর পাশাপাশি মাদকের একজন বড় ডিলার।
এরপর পুলিশ মাদকের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করে নতুনভাবে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, ৮ জুলাই রাত ১২টা ৩২ মিনিটে একটি অটো মূল সড়ক থেকে মালঞ্চ এলাকায় ঢোকে; পরে এক জায়গায় এসে থামে। দুজনকে এগিয়ে যেতে দেখা যায় অটোর দিকে এবং অটোতে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে দেখা যায়। পুলিশ বলছে, ওই অটোটি চালাচ্ছিলেন নয়ন, সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন।
সেই রাতে নয়নের অটোতে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজতে থাকে পুলিশ। একে একে রাকিব, আলী, সজীব, রিয়াজ ও রবীনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদে খুলতে থাকে রহস্যের জট। তাো শিকার করেন নয়নকে হত্যার কথা।
পুলিশ জানতে পেরেছে, নয়নের সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল রাকিব, আলী ও সজীবদের। কারণ নয়ন বছর দুয়েক আগে র্যাব দিয়ে তাদেরকে মাদকসহ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। নয়নকে শায়েস্তা করতে তারাও একটি উপায় খুঁজছিলেন। ৮ জুলাই রাতে মাদকের সেই পার্টি ছিল তাদের জন্য মোক্ষম সময়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীর সময় সংবাদকে বলেন, ‘পূর্বশত্রুতা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে ওই যুবককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন তার বন্ধুরা।’
পুলিশ বলছে, নয়নকে খুন করার পর সবাই মিলে শপথ করেন, পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও কোনোভাবেই কেউ হত্যার কথা স্বীকার করবে না। এমনকি খুন করার পর সবাই অংশ নিয়েছিলেন জানাজায় এবং দাফনের জন্য যান নয়নের গ্রামের বাড়িতেও।