আটঘরিয়ায় মৌরি মশলা চাষ করে সফল কৃষক জহুরা বেগম
- প্রকাশিত সময় ১০:০৩:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / 120
মশলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী হিসেবে আটঘরিয়ার হাজিপাড়ায় কৃষক জহুরা বেগম টেবুনিয়া হর্টিকালচার এর মাধ্যমে তার ১০ শতক জমিতে বারি মৌরি মশলা চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। পাবনার আটঘরিয়ায় প্রথম বারের মতো বারি-২ মৌরি মশলা চাষ করেন তিনি।
সবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মৌরি চাষ বেশ লাভজনক। চাহিদা থাকায় ও অধিক মুনাফার আশায় বিকল্প এই ফসল চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন কৃষক। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত মুনাফায় কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। এ কারণে আটঘরিয়ায় আগামী দিনগুলোতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই মৌরি চাষ। এই ফসল পান মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে একে গুয়োমুরিও বলা হয়। এখানে এখন বাণিজ্যিকভাবেই চাষ হচ্ছে এই মৌরি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শীতের সবজি তোলার পর পতিত জমিতে কৃষক কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা থেকেই মৌরির চাষ হয়ে আসছে। আলাদা ভাবে সার সেচ কিছুই লাগে না। এটিকে বোনাস ফসল হিসেবে নিয়েছেন এখানকার চাষিরা। কারণ, শীত মৌসুমে বাঁধা ও ফুল কপি রোপণ করার পর ক্ষেতে সারিবদ্ধ ভাবে ফাঁকা করে চারা রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে কপি তোলার পর ক্ষেতেই গাছ বেড়ে ওঠে। এজন্য বাড়তি সার, সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের এই মৌরি দৈনন্দিন রান্নার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচ ফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। এতে ঔষধি গুণও বিদ্যমান। পাইকাররা ক্ষেতসহ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কৃষকদের ফসল বিক্রির জন্য দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়না।
কৃষকরা জানান, জমির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এলোমেলো করে নকশা ব্যবহার করে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও অন্যান্য ফসলের সাথী ফসল হিসেবে মৌরি চাষ লাভজনক। এই গাছের পাতা, বীজ, কন্দ, শিকড় কোনো কিছুই ফেলার নয়। বর্তমানে মৌরির কন্দ ইউরোপে সর্বাধিক জনপ্রিয়। মৌরির ফল বা বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসের তরকারি, আচার, পিঠা, রকমারি মিষ্টি খাবারে মৌরি ব্যবহৃত হয়।
টেবুনিয়া হটিকালচার সেন্টার এর উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকতা মিজানুর রহমান জানান, এর গাছ দুই থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ফুল দেখতে অনেকটা খোলা ছাতার মতো। সাধারণত ফুলের রঙ হলুদ আর সাদা হয়ে থাকে। পাতাগুলো চিরল, মসৃণ এবং পাখির পালকের মতো। চাষের জন্য বেলে, বেলে দো-আঁশ মাটি ভালো। জমি একটু উঁচু সুনিষ্কাশিত হলে ভালো হয়।
কৃষক ইব্রাহিম জানান, মৌরি তাদের জন্য লাভজনক ফসল। এ বছর ফলন ভালো হলেও বৃষ্টির জন্য সামান্য ক্ষতি হয়েছে। মৌরি মশলার বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শও পাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বারি-২ মৌরি গাছ উচ্চতায় ১০০-১৩০ সেন্টি মিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি গাছে গড় শাখা-প্রশাখা ৬-৭টি, আম্বেল ২৫-৩০টি, প্রতি আম্বেলে আম্বেললেটের সংখ্যা প্রায় ২০-২৫টি এবং প্রতি আম্বেললেটে বীজের সংখ্যা প্রায় ১০-১৫টি। প্রতি ১০০০ বীজের গড় ওজন ৫-৬গ্রাম। ফলের আকার আয়তাকার ও গাঢ় সবুজ। ফলন ১.৫৬-১.৭৫ টন/হেক্টর।
চাষাবাদ পদ্ধতি ও বপনের সময়ঃ
মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক (মধ্য অক্টোবর-মধ্য নভেম্বর) মাস বীজ ফসলের জন্য উত্তম। সাথী ফসল হিসাবে মরিচ, শাক-সব্জি, আখ, আলু, ডাল, মসলা জাতীয় অন্য ফসলের জমিতে মৌরির চাষ করা যায়। অতিরিক্ত সূর্যালোকে বীজ বপন করলে অঙ্কুরোদগমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। মৌরি বীজের জন্য বিলম্বে বীজ বপনে এর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয় এবং বিভিন্ন রোগবালাই এর আক্রমণ বেড়ে যায় ও বীজের মান খারাপ হয়ে যায়।
মাড়াইয়ের সময়ঃ
বপনের ১৪০-১৫০ দিন পর মৌরি পাকে। পাকলে বীজগুলো হালকা হলদে হয়ে পাতা শুকিয়ে যায়। সাধারনত খুব ভোরে অর্থাৎ সূর্যের আলোর প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্বে গাছ উঠাতে হবে। মৌরির বীজ হালকা সবুজ অবস্থায় থাকতেই গাছ থেকে বীজসহ তুলতে হবে। এভাবে ২-৩ ধাপে বীজ সংগ্রহ করতে হবে নতুবা বীজের মান ভাল হয় না বীজ কালো হয়ে নষ্ট হযে যায়। মৌরি বীজ সাধারনত রৌদ্রাজ্জল দিনে সংগ্রহ করতে হবে। বীজ সংগ্রহের পর এক জায়গায় গাদা করে রাখা যাবে না কারন গাদা করে রাখলে বীজ কালচে হয়ে যায়। বীজ রোদে শুকিয়ে ঝাড়াই-মাড়াই করে পৃথক করা হয়। বীজে আর্দ্রতার পরিমান ৮-১০% রেখে শুকিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষন করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
জমি তৈরীর সময় গোবর, এমওপি, টিএসপি, জিপসাম, জিংক ও বোরণ সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ২৫ দিন পর ১ম কিস্তি এবং ফুল ফোটার পর পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।