নাটোরের বড়াইগ্রামে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
- প্রকাশিত সময় ০৭:৩৮:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪
- / 141
নাটোরের বড়াইগ্রামে ফিরোজা নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার ৭ এপ্রিল বিকালে আমিনা নামক হাসপাতালে এই গৃহবধূ্র মৃত্যু হয়।
গৃহবধূ ফিরোজা উপজেলার ১নং জোয়াড়ী ইউনিয়নের জোয়াড়ী গ্রামের নাহিদের স্ত্রী। এবং বাগাতীপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া গ্রামের মৃত নাসির উদ্দিন ও সালেহা বেগমের কন্যা।
ফিরোজার স্বামী নাহিদ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তে চাকরি করেন।
ফিরোজার মা সালেহা বেগম জানান, প্রায় ৪ বছর পূর্বে ১০ লক্ষ টাকা কাবিননামায় নাহিদের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেই। বিয়ে দেওয়ার সময় ছেলেকে ৬লক্ষ ৫০হাজার টাকা দেই। সেই টাকা দিলে নাহিদ বিডিআর-এ চাকরি নেয়। বিয়ের পর হতে আরও টাকার জন্য নাহিদ, তার মা ও বোনসহ বাড়ির সবাই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে আমার মেয়ের উপর। সংসারে টিকতে না পেরে মেয়ে আমার বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় থাকত।
এই নিয়ে অনেক বার সালিশ দরবার হয়। গত কয়েকদিন আগে দয়ারামপুর ইউনিয়নে পরিষদে সালিশ হয় এবং আমার মেয়েকে রাখবেনা ও তালাক দিবে এমন সিদ্ধান্ত হয়। কাবিন ও নগদ ৬লক্ষ ৫০হাজার সহ ৯লক্ষ টাকা দিয়ে তালাকের মাধ্যমে ফয়সালা হবে। কিন্তু আমার মেয়ে ফিরোজা ছেলের সাথে সংসার কারার জন্য এক সপ্তাহে আগে নাহিদের বাড়িতে যায়।
রবিবার দুপুরের দিকে নাহিদ ফোন দিয়ে বলে আপনার মেয়ে অসুস্থ আপনি আসেন। আমি যাওয়ার পর আশেপাশের অনেকেই বলে আপনার মেয়ের নাক মুখ দিয়ে ফুপরি উঠছে, তাকে আমিনা হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
আমি তখন আমিনা হাসপাতালে এসে দেখি আমার মেয়ে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। আমি চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলে নার্স ও হাসপাতালের লোকসহ নাহিদ আমাকে বাহিরে নিয়ে আসে। আর ওখানে দেখতে দেয়নি। পরে শুনলাম আমার মেয়ে মারা গেছে।
নাহিদ তার বোনসহ আমার মেয়েকে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতাল হতে জোয়াড়ী নাহিদের বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে তারা নিতে দেয়নি। আমি বাড়িতে সংবাদ দিলে আমার ছেলে সাইফুল এসে পরিস্থিতি দেখে থানায় যায়।
ফিরোজার ভাই সাইফুল বলেন, আমি জোয়াড়ীতে আসার পর মা ও এলাকার লোকদের কাছে শুনে মনে হল নাহিদসহ এরা আমার বোনকে যেভাবে হোক মেরে ফেলেছে। তাই বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। পরবর্তীকালে পুলিশ এসে আমার বোনকে থানায় নিয়ে যায়। পোষ্টমর্টেম করে আমার বোনের লাশ দিলে গ্রামের বাড়িতে মিশ্রিপাড়া কবরস্হানে দাফন করি। আমার বোনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর হতে দাফন শেষ পযর্ন্ত এখনও ভগ্নিপতির পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেনি। আমার ভগ্নিপতিসহ সকলকে ফোনে জানালেও কেউ আসেনি।
সাইফুল আরও বলেন, জোয়াড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মোহাম্মদ মিমাংসার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন এবং আমাদের দয়ারামপুরের চেয়ারম্যান মিঠুর কাছে অনেক বার ফোন করেন। জোয়াড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মোহাম্মদ বিষয়টি কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
জোয়াড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদ মাহমুদ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম, বর্তমানে প্রশাসনের আওতায় যাওয়ায় এ বিষয়ে আমার আর কিছু করার নেই।
মৃত ফিরোজার স্বামী (নাহিদ) গনমাধ্যমে কথা বলবেনা মর্মে জানান, এখন কোন বক্তব্য নেই পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা আসবে সেটাই আমার বক্তব্য।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিউল আজম খান বলেন, মৃত ফিরোজার ভাই সাইফুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে লাশ থানায় এনে নাটোর হাসপাতালে পোষ্টমর্টেম করে সাইফুলের কাছে ফিরোজার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে দোষী হলে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।