ঈশ্বরদী জাকের সুপার মার্কেট মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ
- প্রকাশিত সময় ০৩:৫১:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
- / 204
পাবনার ঈশ্বরদী বাজারস্থ জাকের সুপার মার্কেট মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে এই মর্মে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
সোমবার ১৫ এপ্রিল জাকের সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম পারভেজ কল্লোল ও সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মাসুম বাদী হয়ে সকল ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জাকের সুপার মার্কেটে ৩০-৪০ জন ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন যাবৎ চুক্তি মোতাবেক দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। মার্কেট মালিক সেই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে দোকান প্রতি ৪ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধি ও পুর্বের জামানতের সাথে আরও অধিকহারে জামানত দাবি করেন। এবিষয়ে মার্কেট মালিকের সঙ্গে বার বার আলোচনা করতে চাইলে সে টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করে। ব্যবসায়ীরা মার্কেটের সামনে এর প্রতিকার চেয়ে প্রতিবাদ স্বরূপ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে গেলে মার্কেট মালিকের পক্ষের লোকজন বাধা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, মার্কেট মালিক চুক্তি ভঙ্গ করে ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ করে অবস্থান কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ব্যবসায়ীরা।
সমাবেশে জাকের সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুম পারভেজ কল্লোল, সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মাসুম সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বক্তারা মার্কেট মালিকের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গ করে ভাড়া বৃদ্ধি, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সার্ভিস ও মেইন্টেনেন্স চার্জ আদায়, ওয়াদার বরখেলাপ এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করে হুমকি-ধামকির অভিযোগ করেন। পরে ব্যবসায়ীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মাসুম পারভেজ কল্লোল বলেন, মার্কেট মালিক মার্কেটে এসি লাগানোর কথা বলে ৬ বছর আগে ডাবল ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করে। তখন আলোচনা সাপেক্ষে ৫০% ভাড়া বৃদ্ধি ও চুক্তির মেয়াদান্তে নিচতলায় ১ হাজার টাকা এবং দোতলায় ৮ শত টাকা বৃদ্ধির চুক্তিতে রাজি হই। কিন্তু এখন সে একবারে ৪ হাজার টাকা বৃদ্ধির দাবি করছে। যা চুক্তির বরখেলাপ এবং ব্যবসায়ীদের উপর জুলুমের শামিল। উপরন্তু এর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে গেলে লোকজন দিয়ে বাধা প্রদান ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমিনুল ইসলাম মাসুম বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি। আমরা এই মার্কেট এবং মার্কেট মালিককে ভালোবাসি এবং মার্কেটের উন্নতি কামনা করি। কিন্তু মার্কেট মালিক সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চুক্তির বরখেলাপ করে অধিক ভাড়া ও জামানত দাবি করছেন। এবিষয়ে তার আলোচনা করতে চাইলে নানা টালবাহানা করছেন। শুধু তাই না, মার্কেট মালিক অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সার্ভিস ও মেইন্টেনেন্স চার্জ আদায় করেন।
মাসুম আরও বলেন, আমাদের কয়েকজন ব্যবসায়ী ভাইয়ের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করেই সে দোকান ছাড়ার উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন উচ্ছেদের জন্য। এটা অন্যান্য ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য করেছেন। হয় অযৌক্তিক বেশি ভাড়া দাও না হলে দোকান ছেড়ে দাও ব্যাপারটা এমন।
উচ্ছেদের নোটিশ পাওয়া ব্যবসায়ী মোঃ সাইদুল ইসলাম ও মোঃ আমির হোসেন জানান, আমি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ এই মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত ভাড়া ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করে আসছি। এখন মার্কেট মালিক অতিরিক্ত ভাড়া ও জামানত দাবি করলে আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এবিষয়ে তার সাথে আলোচনা করতে চাই। এরই মধ্যে আমাকে কিছু না জানিয়েই মেঝে ও দেওয়াল ভাঙার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উচ্ছেদের উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অপর এক ব্যবসায়ী মোঃ আমির হোসেন জানান, আমি দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ এই মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চুক্তি অনুযায়ী নিয়মিত ভাড়া ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করে আসছি। এখন আমাকে কিছু না জানিয়েই মেঝে ও দেওয়াল ভাঙার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উচ্ছেদের উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
ঈশ্বরদী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ তানভীর মালিথা জানান, এবিষয়ে মার্কেট মালিক এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী কেউই ঈশ্বরদী বাজার বণিক সমিতিকে কিছু জানায়নি। তারা আমাদের কাছে আসলে আমরা বিষয়টি দেখবো।
সোমবার ১৫ এপ্রিল সরজমিনে জাকের সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবাদ সমাবেশের পরে মার্কেটের এসি বন্ধ করে রেখেছেন মার্কেট মালিক। অপরদিকে উচ্ছেদের নোটিশ পাওয়া দোকানে গিয়ে মেঝে ও দেওয়াল ভাঙার কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
জাকের সুপার মার্কেটের মালিক মোঃ মাহাবুবুল হক বিশ্বাসকে ঘটনার দিন ফোন দিলে সে সরাসরি কথা বলতে চায় জানিয়ে পরের দিন তার মার্কেটে আসতে বলেন। পরের দিন তার মার্কেটে যেয়ে না পেয়ে তাকে একাধিকবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এবিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কিনা আমি এখনো জানি না। অভিযোগ দিয়ে থাকলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।